আজ দেবহাটা উপজেলা মুক্ত দিবস

স্টাফ রিপোর্টার:

আজ বুধবার মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিগাঁথা ৬ ডিসেম্বর, ঐতিহাসিক দেবহাটা উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। মুক্তিকামী বাংলার বীর সেনানীদের কাছে পরাজিত হয়ে এই দিনে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা ছেড়ে চলে যায় পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী; আর হানাদার মুক্ত হয় দেবহাটা উপজেলা। বিজয়ের পতাকা হাতে উল্লাসে ফেটে পড়েন মুক্তিকামি সাধারণ মানুষ। প্রত্যেকের মুখে ফুটে উঠেছিল বিজয়ে হাসি। দীর্ঘদিনের যুদ্ধ শেষে মুক্তিকামি মানুষ উপভোগ করেছিলেন বিজয়ের আনন্দ।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উপজেলা প্রশাসন ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে এই দিনটি উদযাপনে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বুধবার সকালে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন, র‌্যালি, আলোচনা সভা, ৯ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারের কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধা নিবেদন এবং মসজিদে মসজিদে দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আসাদুজ্জামান।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র দেবহাটা উপজেলা ছিল ৯ নং সেক্টরের অধীনে। জীবন বাজি রেখে সাতক্ষীরা কোর্ট চত্বরের ট্রেজারীর ৪’শ রাইফেলস্ লুট করে তৎকালীন সময়ে আবদুল গফুর, এম.এল.এ আইয়ুব হোসেন ও ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার ভারতের টাকীতে ৯ নম্বর সেক্টর গঠন করেন। এর আওতায় তিনটি সাব-সেক্টরও সেসময় গঠন করা হয়েছিল। প্রথমটি ছিল শমসের নগরে। এ সাব-সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা। দ্বিতীয়টি ছিল হেঙ্গলগঞ্জে, আর তৃতীয়টি ছিল টাকীতে। তৃতীয়টির নেতৃত্বে ছিলেন দেবহাটার অগ্নিপুরুষ মরহুম ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার।

সারাদেশের ১১টি সেক্টরের মধ্যে ৯ নম্বর সেক্টরটি ছিল সবচেয়ে বড়। ৯ নম্বর সেক্টর গঠনে অসামান্য অবদানের কারনে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারকে এ সেক্টরের প্রতিষ্টাতা ও সাব সেক্টর কমান্ডারের খেতাব দেয়া হয়েছিল। ৯ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর জলিল।

শাহজাহান মাস্টারের নেতৃত্বেই এ অঞ্চলের যুবকেরা দেশ মাতৃকার টানে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। সেসময় দেবহাটার খানজিয়া ক্যাম্প, দেবহাটা ক্যাম্প, টাউনশ্রীপুর ক্যাম্প, সখিপুর ক্যাম্প, পারুলিয়া ক্যাম্প, কুলিয়া পুরাতন বাজার ও পুষ্পকাটি ইটের ভাটা সহ বিভিন্ন এলাকায় পাক সেনারা ঘাঁটি গড়ে তুলেছিলেন।

উপজেলার টাউনশ্রীপুর ফুটবল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাক সেনাদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধের আগে এক রাজাকার পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের খবর পৌঁছে দিয়েছিলেন। ফলে পাক সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলেছিলেন। বিষয়টি ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার বুঝতে পেরে অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন। প্রায় ২ ঘন্টাব্যাপী যুদ্ধে পাক সেনারা পরাস্ত হয়। এই যুদ্ধে বহু পাক সেনা নিহত হয়। এছাড়া ভাতশালা সহ বিভিন্ন যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন মরহুম ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টার।

ভাতশালা যুদ্ধের শেষের দিকে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন বীর মুক্তিযোদ্ধ গোলজার। সেখানেই মারা যান তিনি। এক পর্যায়ে টাউনশ্রীপুরের সেনা ঘাটির পতন হয়। তখন প্রধান সেনাপতি এম.এ.জি ওসমানী, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহম্মেদ ও সেক্টর কমান্ডার এম.এ জলিল সকলে মিলে ক্যাপ্টেন শাহজাহান মাস্টারকে নিয়ে বিজয়োল্লাস করেন। তবে পাক সেনারা দেবহাটা ছেড়ে যাওয়ার সময় শাহজাহান মাস্টারের বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন।

অক্টোবর মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী খানজিয়া ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তারা যাওয়ার সময় ওই এলাকায় বেশ কিছু এ.পি মাইন পুতে রেখে যান। পরে সেই মাইন অপসারণ করতে গিয়ে বিষ্ফোরণে আব্দুল ওহাব শহীদ হন। পরে পারুলিয়া, সখিপুর ও কুলিয়া সহ বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধে পাক সেনারা পরাস্ত হয়। তারা চলে যাওয়ার সময় বহু মানুষের বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে এবং পারুলিয়া ব্রীজটি ধ্বংস করে দিয়ে গিয়েছিল। এভাবে দেবহাটা উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয় এবং মুক্তিকামীদের হাতে উড়তে শুরু করে বিজয়ের পতাকা।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)