মহা ধুম ধামে পালিত হলো যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে কালীপূজা 

অনাথ মণ্ডল:
সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার  ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত  যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে পালিত হলো শ্রী শ্রী কালীপূজা।
কালী পূজা হিন্দু ধর্মের একটি অন্যতম উৎসব যা শ্যামা পূজা নামেও পরিচিত। বাঙালীদের জন্য কালীপূজা এক বিশেষ স্থান নিয়ে থাকে আর দূর্গা পূজার পর কালীপূজা বৃহৎ ভাবে আয়োজন করা হয়। কালীপূজা কার্তিক মাসের অমাবস্যাতে করা হয়।
১২ নভেম্বর রবিবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তবৃন্দ এসে আশ্রয় গ্রহণ করেন। সন্ধ্যা হতেই মন্দির সহ মন্দিরের প্রাচীর ও আঙ্গিনায় ধুপ, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন দূরদূরান্ত থেকে আসা মায়ের ভক্তবৃন্দ ও মন্দির কর্তৃপক্ষ। সন্ধ্যা থেকে  ঢাক-ঢোল, ভক্তদের পদচারণায় মুখরিত ছিল মন্দির প্রাঙ্গন। ধূপ ধূনার গন্ধ আর বাতির আলোয় আলোকিত হবে এই কামানায় ফলফলাদি ও ডালা(বাতসা) নিয়ে হাজির ছিল দুর দরান্ত থেকে আগাত হাজারও ভক্তবৃন্দ।
এছাড়াও মায়ের কাছে করা মানত যাদের পূরণ হয়েছে, সেসব ভক্তবৃন্দ মানত পূরণ করতে মায়ের মন্দির প্রদক্ষিণ করে মায়ের সামনে দণ্ডী কাটেন এবং ছাগবলি দেন।
জানা যায়, এই স্থানে সতীর পাণিপদ্ম বা করকমল পড়ে। দেবীর নাম যশোরেশ্বরী, ভৈরব হলেন চণ্ড। এই সতীপীঠে কায়মনোবাক্যে পুজো করলে ভক্তের মনোবাসনা পূর্ণ হয় বলে সর্বসাধারণের বিশ্বাস।
ধারণা করা হয় যে, মন্দিরটি আনারি নামের এক ব্রাহ্মণ কর্তৃক নির্মিত হয়। তিনি এই যশোরেশ্বরী শক্তিপীঠের ১০০টি দরজা নির্মাণ করেন। কিন্তু মন্দিরটি কখন নির্মিত হয় তা জানা যায়নি। পরবর্তীকালে লক্ষ্মণ সেন ও প্রতাপাদিত্য কর্তৃক তাদের রাজত্বকালে এটির সংস্কার করা হয়েছিল। কথায় আছে যে মহারাজা প্রতাপাদিত্যের সেনাপতি এখানকার জঙ্গল থেকে একটি আলৌকিক আলোর রেখা বের হয়ে মানুষের হাতের তালুর আকারের একটি পাথরখণ্ডের উপর পড়তে দেখেন। পরবর্তীতে প্রতাপাদিত্য  কালীর পূজা করতে আরম্ভ করেন এবং এই কালী মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
২০২১ সালে ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যশোরেশ্বরী কালী মন্দির পরিদর্শন করেন। উপজেলার ঈশ্বরীপুরে অবস্থিত ঐতিহাসিক এই মন্দিরে মোদির আগমন ঘিরে সাজানো হয়েছিল। ইতোমধ্যে মন্দির ও প্রাচীর রঙ করে প্রাচীরের ভাঙা অংশ মেরামত করা হয়েছিল। মন্দিরের প্রবেশদ্বারে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো বটতলা অংশের গর্ত বন্ধ করে ইট-পাথরের মিশ্রণে দৃষ্টিনন্দন বিস্তৃত চাতাল গড়ে তোলা হয়েছে।
যশোরেশ্বরী মায়ের মন্দিরের পূজারী দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, গত বছর মহামারি করোনার কারণে মায়ের মন্দিরের ভক্তের সমকামী কম ছিল কিন্তু এবছর কালী পূজায় কয়েক হাজার ভক্তের সমাগাম হয়েছে।  ঈশ্বরীপুর কালী মন্দির সহ উপজেলার সকল পূজা মন্ডপে শ্যামনগর থানা পুলিশের পক্ষ থেকে ছিলো সারাদিন রাতব্যাপি কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কালী পূজা উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও মন্দিরের পাশে মেলা বসেছে,  মেলা চলবে তিনদিন । মেলায় নাগর দোলা, দুলান্ত নৌকা সহ বাহারী রংঙের দোকানপাট বসেছে। নাগরদোলা মেলায় আলাদা সৌন্দর্য কেড়েছে।#
Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)