মামলা থাকলেও কালিগঞ্জে মাদ্রাসায় ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে পরিছন্ন কর্মী নিয়োগ
আরাফাত আলী:
নিয়োগ যোগ্য পদের বিপরীতে মামলা কিংবা বিদ্যমান পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে মামলা থাকলে তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সরকারি বিধি মোতাবেক নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ থাকেনা। তবে ম্যানেজিংকমিটির বিরুদ্ধে মামলা চলমান থাকলেও সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কৃষ্ণনগর ইউনিয়নের বালিয়া ডাংগা মাহমুদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে পরিছন্ন কর্মী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে স্থানীয় একটি পত্রিকায় গোপনে পরিছন্ন কর্মী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। একটি পদের বিপরীতে মোট ৭ জন আবেদন করেন। পরবর্তীতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোস্তফা কামরুজ্জামান মন্টু ও সুপার আরিজুল ইসলাম নিয়োগ প্রদানের জন্য নাজমুল হুদার কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত রাখার জন্য গত বৃহস্পতিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর আবেদন করেন ওই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আইয়ুব হোসেন। সব কিছু উপেক্ষা করে গত শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে ৫ সদস্য বিশিষ্ট নিয়োগ বোর্ডের কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।পরীক্ষায় ৭ জন অংশগ্রহণ করেন । পাতানো নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে সভাপতি ও সুপারের চুক্তি অনুযায়ী ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে নির্বাচিত হন নাজমুল হুদা
নিয়োগ পরীক্ষার আগে ডিজি’র প্রতিনিধি ও মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) জাকির হুসাইনের সাথে কথা হয় সাংবাদিকদের এসময় তিনি বলেন, নাজমুল হুদা নামের কোন নিয়োগ প্রার্থীর কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা কমিটির কেউ গ্রহণ করেছেন বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত নন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন অনেকে ধারণা করে বলতে পারেন পরিক্ষায় প্রথম স্থান কে অধিকার করবেন। নাজমুল হুদা হয়তো ভালো ছাত্র এজন্য সে প্রথম স্থান অধিকার করবে স্থানীয়রা এমনটা ধারণা করছেন। এছাড়া ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা থাকলেও নিয়োগ পরীক্ষা পরিচালনা করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি ফজর আলী জানান, ১৫ লাখ টাকা বিনিময়ে নাজমুল হুদাকে নিয়োগ দিয়েছেন মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোস্তফা কামরুজ্জামান মন্টু ও সুপার আরিজুল ইসলাম। বিষয়টি তিনি অবগত ছিলেন এজন্য তাকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছেন মন্টু।এছাড়া ইউনিয়ন যুবলীগকে দিয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া ওই টাকার ভাগ পেয়েছেন উপজেলা প্রশাসন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও ডিজি’র প্রতিনিধি।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে সদ্য পরিচ্ছন্নকর্মী পদে নিয়োগ প্রাপ্ত নাজমুল হুদা মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তাকে ওই পদে যোগদান করতে হয়েছে বলে স্বীকার করেন। পরবর্তীতে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ওই বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।
নিয়োগ বাণিজ্যর বিষয় জানতে চাইলে মাদ্রাসার সুপার আরিজুল ইসলাম ১৫ লাখ টাকার লেনদেনের বিষয় অস্বীকার করেন। টাকা লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে তিনি গুঞ্জন শুনছেন। তবে কে টাকা নিয়েছেন সে বিষয়ে তিনি অবগত নন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে মাদ্রাসার সভাপতি মোস্তফা কামরুজ্জামান মন্টু নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয় অস্বীকার করে বলেন ,অনেকে অনেক কিছু বলবে।কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েছি অথবা দিয়েছি এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রহিমা সুলতানা বুশরা জানান, নিয়োগ বাণিজ্য ও ম্যানেজিং কমিটির নামে আদালতে চলমান মামলা বিষয় জানিয়ে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার জন্য আইয়ুব হোসেন নামে এক ব্যক্তি তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের জন্য তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে সুপারিশ করে ছিলেন। তারপর ও গত শুক্রবার নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য,বালিয়া ডাংগা মাহমুদিয়া দাখিল মাদ্রাসায় বর্তমান কমিটিসহ ১৩ জনকে বিবাদী করে (গত ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১) সালে আইয়ুব হোসেন অবৈধ কমিটি দাবি করে সাতক্ষীরা জেলা জজ আদালতে একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন। বর্তমান মামলাটি চলমান রয়েছে (যার নং ৪০৯)।
Please follow and like us: