শুধু নামেই শহর

অনলাইন ডেস্ক :

রাজধানীর নাসিরাবাদে নদী ও খাল বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলো ছয় মাসই থাকে পানিবন্দি। এ সময় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের। দুর্গন্ধযুক্ত পচা পানিতে বিষিয়ে ওঠে জীবন। চলাচল করতে হয় নৌকায়। নাসিরাবাদ বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭৫নং ওয়ার্ড। নামে শহর হলেও এখানে ৬০ শতাংশ নাগরিক সুবিধা এখনো নিশ্চিত হয়নি বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এছাড়া এখানে নেই ভালো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গড়ে ওঠেনি কোনো হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রও। ফলে শিক্ষা ও চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার মানুষ।

সরেজমিন দেখা গেছে, ৭৫নং ওয়ার্ডে নড়াই নদী ও বিভিন্ন খালবেষ্টিত এলাকাগুলোতে দুর্গন্ধযুক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। হাজার হাজার একর কৃষি জমিতেও পানি। ফলে ধান ও রবিশস্য চাষ করতে পারছেন না অধিবাসীরা। সন্ধ্যা নামতেই বিদঘুটে অন্ধারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এসব এলাকা। বালুরপাড় থেকে ইদারকান্দি হয়ে ফকিরখালি পর্যন্ত চার কিলোমিটার সড়কের সাড়ে তিন কিলোমিটারই কাঁচা ও অপ্রশস্ত। সড়কটি এলাকাভেদে দুই থেকে চার ফুট চওড়া। এ ছাড়া এলাকার অভ্যন্তরীণ ৭-৮ কিলোমিটার সড়ক এখনো কাঁচা এবং পানির নিচে। নৌকায় চলচল করছেন বাসিন্দারা।

স্থানীয়রা জানান, পচা পানির কারণে নানা রোগবালাই ছড়িয়ে পড়েছে। ঘরে ঘরে ডায়রিয়া রোগী। বিদ্যুৎ না থাকায় রাতে চলাচলে সাপের ভয় তাড়া করে বেড়ায়। এছাড়া আছে মশা-মাছির উৎপাত। এখানে কোনো হাসপাতাল নেই। এখনো ঝুলন্ত টয়লেট ব্যবহার করে হাজারো পরিবার।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নাসিরাবাদে পুলিশ ফাঁড়ি না থাকায় হরহামেশা চুরি ডাকাতি হচ্ছে। গত ২ বছরে ওয়ার্ডের কয়েকটি বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে। চুরি হয়েছে অনেক বাড়িতে। স্বর্ণালংকার ও টাকা পয়সা লুট হয়েছে। এখনে কোনো কলেজ নেই। ওয়ার্ডের অধিকাংশ সড়কে সড়কবাতি নেই। পুরো ওয়ার্ডে সড়কবাতি রয়েছে ৫০০টি, যেখানে প্রয়োজন কমপক্ষে দুই হাজার। তাও আবার বিকল ২ শতাধিক বাতি। কাঁচা সড়ক, নিরাপত্তাহীনতা, সুষ্ঠু বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার অভাব, শিক্ষা ও সরকারি চিকিৎসাসেবার সংকটসহ ৬০ শতাংশ নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত বাসিন্দারা। ওয়ার্ডের গ্রামগুলোতে আজও বাঁশের পাঁচটি বড় সাঁকো আর নৌকা-ট্রলার দিয়ে চলাচল করতে হয়।

বালুরপাড়ের ৯০ বছর বয়সি আব্দুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ঢাকার মধ্যে থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে সাঁকো পার হতে হয়। এ দুঃখ কাকে বলব। ইদারকান্দি ও ফকিরখালিতে আÍীয়ের বাড়ি গেলে নৌকা দিয়ে যেতে হয়।

ফকিরখালির ৮৩ বছর বয়সি খবির উদ্দিন বলেন, এখানে কোনো ভালো স্কুল নেই। ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে ফকিরখালি থেকে ছয় কিলোমিটার হেঁটে বেরাইত স্কুলে গিয়েছি। এখন আমার নাতি-পুতিরাও যাচ্ছে। দুই কিলোমিটার হাঁটার পর অটোরিকশা পাওয়া যায়।

ডিএসসিসির ৭৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আকবর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমার ওয়ার্ডের নিচু এলাকাগুলো বিচ্ছিন্ন বলে ওয়ার্ডটির প্রকৃত উন্নয়ন হতে একটু সময় লাগবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে নগরের অনুন্নত ও বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোর সমন্বয়ভিত্তিক টেকসই উন্নয়ন করা হবে। এ বিষয়ে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে ওয়ার্ডভিত্তিক প্রয়োজনীয় উন্নয়ন বাস্তবায়ন করা হবে। নাসিরাবাদের বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোও এ মহাপরিকল্পনার আওতায় আনা হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)