ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে ৬৯ রানে জিতল আফগানিস্তান
স্পোর্টস ডেস্ক:
চলমান বিশ্বকাপের ১৩তম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল আফগানিস্তান। সেখানে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৪৯.৫ ওভারের খেলা শেষে সবকয়টি উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান। ফলে ইংল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮৫ রান। এ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৪০.৩ ওভারে সবকয়টি হারিয়ে ২১৫ রানে অলআউট হয়েছে ইংল্যান্ড। ফলে ৬৯ রানের বিশাল জয় পায় আফগানিস্তান।
বিশ্বকাপে টানা হারের পর অবশেষে জয়ে ফিরল হাশমতউল্লাহ শাহিদির দল। এই জয়ে তলানী থেকে পয়েন্ট টেবিলের ছয়ে উঠল আফগানিস্তান।
আজ দুপুরে দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে আজ টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক জস বাটলার।।আফগানিস্তানের হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে নামেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ ও ইবরাহিম জাদরান।
ওপেনিংয়ে নেমে শুরুটা দারুণ করে আফগানিস্তান। গুরবাজ ও ইবরাহিম দেখে-শুনে খেলতে থাকেন। তাদের দুই জনের জুটিতে দলীয় শতরান পার করে আফগানিস্তান। এরই মধ্যে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ক্যারিয়ারের নিজের পঞ্চম ফিফটি পূর্ণ করেন গুরবাজ। দলীয় সপ্তম ওভারে আদিল রশিদকে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩৩ বলে অর্ধশতক পূরণ করেন আফগানিস্তানের এই ব্যাটার।
ইংল্যান্ডের নিয়মিত বোলার দিয়ে আফগানিস্তানের উইকেট না পড়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলারের। যার কারণে ব্যাটিং অলরাউন্ডার জো রুটকে নিয়ে আসেন তিনি। তাতে কিছু হয়নি আফগানিস্তানের। দলীয় ১৬.৪ ওভারে আদিল রশিদের বলে জো রুটের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরেন ইবরাহিম জাদরান। এ সময় তিনি করেন ৪৮ বলে ২৮ রান। তাতে ভেঙে যায় ১০১ বলে ১১৪ রানের জুটি।
এরপর মাঠে নামেন রহমত শাহ। তিনিও বেশিক্ষণ পিচে টিকে থাকতে পারেননি। দলীয় ১৮.৪ ওভারে আদিল রশিদের বলে আউট হয়েছেন তিনি। ওই ওভারের শেষ বলে রান আউট হয়েছেন পিচে থিতু হওয়া রহমানুল্লাহ গুরবাজ। যাওয়ার আগে তিনি করেন ৫৭ বলে ৮০ রান। এরপর মাঠে নামা আজমতউল্লাহ ওমরজাই বেশিক্ষণ পিচে টিকে থাকতে পারেননি।
দলীয় ২৫.৬ ওভারে লিয়াম লিভিংস্টোনে বলে ক্রিস ওকসের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হেঁটে যান ওমরজাই। যাওয়ার আগে তিনি খেলেন ২৪ বলে ১৯ রান। চাপে পড়ে আফগানিস্তানকে সন্মানজনক সংগ্রহের দিকে এগিয়ে নিতে থাকেন অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদি।
দলীয় ৩২.১ ওভারে ঘটে বিপত্তি। জো রুটের প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে ৩৬ বলে ১৪ রান করে সাজঘরে ফিরে যান হাশমতউল্লাহ। এরপর মাঠে নামেন মোহাম্মদ নবী। তিনি দুই অংকের ঘরেই পার করতে পারেননি। তিনি করেন ১৫ বলে ৯ রান।
দলীয় ৩৬.১ ওভারে মার্ক উডের প্রথম বলেই জো রুটের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হেঁটে যান নবী। এ সময় তিনি করেন ১৫ বলে ৯ রান। নবী আউট হওয়ার পর মাঠে নামে রশিদ খান। জুটি গড়েন ইকরাম আলীখিলের সঙ্গে। অষ্টম উইকেটে ২৫ বলে ৪৪ রানের জুটিতে আফগানিস্তান কিছুটা ভিত পায়।
দলীয় ৪৪.১ ওভারে নবীর মতো আদিল রশিদের প্রথম বলেই জো রুটের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হেঁটে যান রশিদ খান। এ সময় তিনি করেন ২২ বলে ২৩ রান। শেষ দিকে দলীয় ৪৬.৬ ওভারে মার্ক উডের শেষ বলে ডাবল রান নিয়ে ফিফটি করেন ইকরাম আলীখিল। ফিফটির দলীয় ইনিংস বাড়ানোর চেষ্টা করেন ইকরাম। কিন্তু সেটা হয়নি।
দলীয় ৪৭.৬ ওভারে ক্যাচ হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে ফিরে যানই করাম। এ সময় তিনি খেলেন ৬৬ বলে ৫৮ রানের ইনিংস। ইকরাম আউট হওয়ার পর পিচে থিতু হতে পারেননি মুজিব উর রহমানও নাভিন উল হক। দুই জনে আউট হয়েছেন। ফলে নির্ধারিত ৪৯.৫ ওভারের খেলা শেষে সব উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রান সংগ্রহ করে আফগানিস্তান। ইংল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৮৫ রান।
ইংল্যান্ডের হয়ে তিন উইকেট নেন আদিল রশিদ। জোড়া উইকেট নেন মার্ক উড। একটি করে উইকেট নেন রিস টপলি,লিয়াম লিভিংস্টোন ও জো রুট।
আফগানিস্তানের দেয়া ২৮৫ রানে টার্গেট ইংল্যান্ডের হয়ে উদ্বোধনে মাঠে নামেন জনি বেয়ারস্টো ও ডেভিড মালান। দেখে-শুনে খেলতে গিয়ে দলীয় ১.১ ওভারের ফজল হক ফারুকির বলে এলবিডব্লিউ হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে ফিরে যান জনি বেয়ারস্টো। এরপর মাঠে নামেন জো রুট।
শুরুতে উইকেট হারিয়ে খেলতে গিয়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। দেখে-শুনে খেলতে গিয়ে দলীয় ৬.৫ ওভারে মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে ফিরে যান জো রুট। যাওয়ার আগে ১৭ বলে ১১ রানের ইনিংস খেলেন তিনি।
রুট চলে যাওয়ার আফগানিস্তানের বোলাদের দেখে-শুনে খেলতে থাকেন ওপেনিংয়ে নামা ডেভিড মালান। দলীয় ১২.৪ ওভারের মোহাম্মদ নবীর বলে ভুল করে বসেন মালান। এলবিডব্লিউ ফাঁদে পড়ে সাঝঘরে পথে ফিরে তিনি। এ সময় তিনি করেন ৩৯ বলে ৩২ রান।
মালান চলে যাওয়া ইংল্যান্ড শিবিরে আরো চাপ বাড়তে থাকে। দলীয় ১৭.২ ওভারের নাভিন উল হকের বলে ভুল করে বসেন ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার। ওই ওভারের দ্বিতীয় বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান তিনি। ইংলিশ এই অধিনায়ক দুই অংকের ঘরই পার করতে পারেনি। এরপর মাঠে লিয়াম লিভিংস্টোন বেশিক্ষণ পিচে থিতু হতে পারেননি। রশিদ খানে বলে এলবিডব্লিউ ফাঁদে পড়ে প্যালভিলিয়নের পথে হাঁটা দেন তিনি। লিভিংস্টোন করেন ১০ রান।
দলীয় ২৭.১ ওভারে আবারো ইংল্যান্ড শিবিরে আবারো আঘাত হানেন নবী। তার বলে আজমতউল্লাহর হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাঝঘরে ফিরেন কুরান। ২৩ বলে ১০ রান করে ইংলিশ এই অলরাউন্ডার। কুরান চলে যাওয়ার পর পিচে থিতু হতে পারেননি ক্রিস ওকস।
দলীয় ৩২.৬ ওভারের মুজিব উর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরেন ক্রিস। ২৬ বল খরচা করে মাত্র ৯ রান করেন। শেষ দিকে মার্ক উড ও আদিল রশিদ চেষ্টা করে হারের ব্যবধান কমাতে পারেননি। ফলে মাত্র ৪০.৩ ওভারে সবকয়টি হারিয়ে ২১৫ রানে অলআউট হয়েছে ইংল্যান্ড। আর ৬৯ রানের বিশাল জয় পেল আফগানিস্তান।
আফগানিস্তানের হয়ে তিন উইকেট নেন রশিদ খান ও মুজিব উর রহমান। জোড়া উইকেট নেন মোহাম্মদ নবী। একটি করে উইকেট নেন নাভিন উল হক ও ফজল হক ফারুকি। বিশ্বকাপে টানা হারের পর অবশেষে জয়ে ফিরল হাশমতউল্লাহ শাহিদির দল। এই জয়ে তলানী থেকে পয়েন্ট টেবিলের ছয়ে উঠল আফগানিস্তান।