দেবহাটা উপজেলায় ২১ মন্ডপে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি
দেবহাটা প্রতিনিধি:
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব আর কিছুদিন পরই। এ উপলক্ষে সারাদেশের মতো সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার মন্দিরগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। শিল্পীরা প্রতিমা তৈরিতে আর রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমার সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন, তাদের অভিজ্ঞ হাতের নিপুণতায় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেবী দুর্গাকে।
আয়োজকদের প্রত্যাশা জাঁকজমকপূর্ণ পূজা আয়োজনের। এবার উপজেলা জুড়ে প্রতিমা তৈরি হচ্ছে ২১টি পূজা মন্ডপে। উপজেলার জেলিয়াপাড়া সার্বজনীন দুর্গা পূজা মন্ডপ, সন্যাসখোলা সার্বজনীন দুর্গা পূজা মন্ডপ, সখিপুর পালপাড়া সার্বজনীন দুর্গা পূজা মন্ডপ ও গাজীরহাট সার্বজনীন দূর্গা পূজা মন্ডপ সহ বেশ কয়েকটি পূজা মন্ডপ ঘুরে দেখা যায়, বেশিরভাগ মন্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মাটির প্রতিমা তৈরীর পর দেবী দুর্গাকে সাজাতে সুনিপুন হাতে রং-তুলির আঁচড় দেয়ার কাজ চলছে কিছু কিছু মন্ডপে। শিল্পীর হাতের ছোঁয়ায় একটু একটু করে দেবী দুর্গা সেজে উঠছেন আপন ঐশ্বর্যে।
আগামী ১৪ অক্টোবর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গা পূজার আনুষ্ঠিকতা। আর ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে মূল আনুষ্ঠানিকতা। তাই হাতে একদমই সময় নেই প্রতিমা কারিগরদের। প্রতিমা নির্মানের কাজ শেষ করতে তারা সকাল থেকে রাত অবধি পরিশ্রম করে চলেছেন।
দক্ষিণ পারুলিয়া জেলিয়াপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সভাপতি দুলাল চন্দ্র মন্ডল ও স্থানীয় ইউপি সদস্য অসীম ঘোষ জানান, কেবলমাত্র দুর্গা প্রতিমা তেরি করতে এবার ৭০ হাজার টাকা মজুরি নিচ্ছেন কারিগর পিন্টু শীল। প্রতিবছর জেলিয়াপাড়া মন্ডপ নির্মানে আধুনিকতা ও বিশেষ স্থাপত্যের ছাঁপ ফুঁটিয়ে তোলা হয়। ইতোপূর্বে টাইটানিক জাহাজ ও সর্বশেষ পদ্মাসেতুর আদলে মন্ডপ নির্মান করে জেলাব্যাপী সাঁড়া ফেলেছিলেন। এবছর ভারতের মায়াপুর মন্দিরের আদলে জেলিয়াপাড়ায় মন্ডপ নির্মানের কাজ জোরেসোরেই চলছে। প্রতিমা ও মন্ডপ নির্মান, আলোকসজ্জা, সাউন্ড সিস্টেম, সিসি ক্যামেরা, মন্ডপের মাঠে ওয়াটার ফাউন্টেইন ও গাছ স্থাপনসহ সব মিলিয়ে প্রায় ছয় লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে দুর্গাপূজার সার্বিক প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তারা।
প্রতিমা শিল্পী পিন্টু শীল জানান, এবারও একাধিক প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন। এখন এগুলো শেষপর্যায়ে রয়েছে। সাধারণত প্রতিমার আকার ও সাজসজ্জার উপর নির্ভর করে শিল্পীদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা হয়।
সখিপুর পালপাড়া সার্বজনীন দুর্গা পূজা মন্ডপের প্রতিমা শিল্পী মিলন কুমার দাশ জানান, ২৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা চুক্তিতে আটটি প্রতিমা তৈরির কাজ পেয়েছেন। এখন প্রতিমা তৈরিতে তাদের দম ফেলার ফুরসত নেই তাদের।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ দেবহাটা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার মন্ডল বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত আমাদের বাংলাদেশ। সব সম্প্রদায়ের মানুষ এক সঙ্গে মিলে উপজেলায় শারদীয় উৎসবের আনন্দ উপভোগ করবো। অতীতের ন্যায় এবারও ২১টি মন্ডপে জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা পালনে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। স্ব-স্ব মন্ডপে কমিটি নির্ধাারিত পোশাক ও ব্যাজ পরিহিত স্বেচ্ছাসেবক এবং আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কড়া নজরদারি থাকবে।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইয়ানুর রহমান বলেন, ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যেদিয়ে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই যাতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা দুর্গোৎসব পালন করতে পারেন সেজন্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ১০ অক্টোবর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্গাপূজা সম্পর্কিত সভা আহŸান করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলাসহ সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত ওই সভায় নেয়া হবে।
দেবহাটা থানার ওসি মো. বাবুল আক্তার বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা যাতে নির্বিঘেœ হয় সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আগাম মাঠে কাজ শুরু করেছে। এছাড়া র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারিও রয়েছে। পূজা ঘিরে কোন প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।