তালায় বাড়ি থেকে উচ্ছেদ না করতে পেরে বাড়িঘর ভাংচুরের পর মা ও মেয়েকে পিটিয়ে জখম
রঘুনাথ খাঁ:
মা ও মেয়েকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়েছে। ভাঙচুরে বাধা দেওয়ায় মা ও মেয়েকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। শনিবার দুপুর পৌনে দুটোর দিকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের রঘুনাথপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জখম তানজিলা খাতুনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তানজিলা খাতুন (৩২) তালা উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের আফতাব শেখের মেয়ে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তানজিলা খাতুন জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর তার মা আবেদা খাতুন একই বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। ফারাজি সম্পত্তি হিসেবে তারও ওই জমিতে অংশ আছে। স্বামীর সঙ্গে তালাক হয়ে যাওয়ার পর সম্প্রতি তিনি মায়ের সঙ্গে পৈতৃক বাড়িতে বসবাস করেন। দুই বছর আগে ওই বাড়ি নিজেদের বলে দাবি করে আসছিলো তাদের চাচাত ভাই মাগুরা ইউনিয়নের বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সুজাত শেখ ও মিজানুর শেখ। এ নিয়ে তাদেরকে বাড়ি ছেড়ে দিতে হুমকি দেয় মিজানুর রহমান শেখ ও তার ভাই সুজাত শেখ। তাদেরকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সকল পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। উঠানে গরু বাধাসহ আবর্জনা ফেলে বসবাসের অনুপযোগী করা হয়। প্রতিকার চেয়ে তিনি গত বছরের ৩১ জুন তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তালা উপজেলা স্যানিটারী পরিদর্শক শরীফ মোঃ আব্দুল মতিন গত বছরের ২০ আগষ্ট সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে মিজানুর রহমান, সুজাত শেখ ও তাদের পরিবারের সদস্যরা উঠানে আবর্জনা ফেলায় ও রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় তানজিলা ও তার মায়ের ওই বাড়িতে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে মর্মে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। একইভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে গণশুনানী শেষে খলিষখালি ইউনিয়ন ভ‚মি কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল ইসলাম গত বছরের ৯ নভেম্বর সরেজমিনে ঘটনাস্থল ঘুরে এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লেখা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, তানজিলার বাবা শেখ আফতাবউদ্দিন ও চাচা বাবুর আলী শেখের মধ্যে আপোষ বিনিময়সূত্রে জমি ভোগদখল করা হতো। বর্তমানে তা মানেন না সুজাত ও মিজান শেখ। ফলে তানজিলা ও তার মায়ের বাড়িতে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেওয়াসহ পরিবেশ দূষণের অভিযোগ সত্য বলে প্রমাণিত হয়। এ ছাড়াও থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে উপপরিদর্শক আলী হাসান ঘটনার সত্যতা পেলেও ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা সুজাত আলীর প্রভাবে কিছুই করেননি। উপরন্তু তানজিলাকে কোর্টে যাওয়ার পরামর্শ দেন। ফলে মিজানুর শেখ ও সুজাত শেখ আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
তানজিলা খাতুন আরো বলেন, খলিষখালি ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের তহশীলদার শহীদুল ইসলাম ও উপজেলা স্যানিটারী কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবদন পাাওয়ার পর ও কোন ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়া তাদেরকে উচ্ছেদের পরিকল্পনা করা হয়। শনিবার দুপুর পৌনে দুটোর দিকে মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী মাহাবুবা খাতুন, সুজাত শেখ ও তার স্ত্রী রাজিয়া খাতুনসহ তাদের সন্তানরা হাতে দা ও লাঠি নিয়ে তাদের বাড়িতে ঢুকে জিনিসপত্র ভাঙচুর ও লুটপাট করে। বাধা দেওয়ায় তাকে ও তার মাকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করা হয়। এরপরও বাড়ি ছেড়ে না দিলে তাদেরকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় তার মা তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।বাড়ি থেকে উচ্ছেদ না করা হতে পারে এমন আশঙ্কায় তার জখমী মা হাসপাতালে ভর্তি হননি। তবে থানায় অভিযোগ দিতে গেলে শনিবার রাতে পুলিশ একটি সাধারণ ডায়েরী হিসেবে এন্ট্রি করে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ তানভির হোসেন জানান, তানজিলার বাম চোখের নীচে ধারালো জিনিস দিয়ে রক্তাক্ত জখম ও বাম হাতের কনুইসহ একটি অংশ জুড়ে ভারী জিনিস দিয়ে আঘাত ও ধারালো জিনিস দিয়ে জখমের চিহ্ন রয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির মাগুরা ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুজাত শেখ জানান, তাদের দলের নেতা হিরন্ময় মন্ডলের উপস্থিতিতে কয়েক মাস আগে বিরোধপূর্ণ জমি মাপ জরিপ করা হলেও তানজিলা ও তার মা আংশিক জমি ছেড়ে দিয়ে বাকীটা দখলে রাখেন। এ নিয়ে তার ভাই মিজানুর তানজিলার মায়ের বারান্দার বেড়া ছাড়িয়ে ফেলেছে মর্মে তিনি শুনেছেন। কোন মারপিটের অভিযোগ অস্বীকার না করেই বলেন, হালকা ধ্ব্স্তাধ্বস্তি হয়েছে। তবে ওই সময়ের আগেই তিনি পার্টির মিটিংএ যোগদানের জন্য সাতক্ষীরার উদ্দেশ্যে রওনা হন।
তালা থানার সহকারি উপপরিদর্শক আবুল হোসেন জানান, তিনি তানজিলার সাধারণ ডায়েরী তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে রবিবার আবেদদন করেছেন।