শেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত হচ্ছে আরো ৯১ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
ডেস্ক নিউজ:
সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় ৯১টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হচ্ছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এরই মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সম্প্রতি বিশেষ বিবেচনায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নির্বাচনী এলাকার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি করা হয়েছে। গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রচারের পর সরকারের মন্ত্রী ও এমপিদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষভাবে এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের নির্বাচনী উপহার হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এ তালিকায় কারিগরি ও মাদরাসা নেই বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়ের সূত্র।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এমপিও যাচাই-বাছাই কমিটির আহ্বায়ক ও অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-২) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ৯১টি প্রতিষ্ঠানকে বিশেষভাবে এমপিওভুক্তির জন্য তালিকা করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে তালিকা করা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার আগেই তালিকা করা হয়েছে। তবে অবশ্যই এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী কমিটি যাচাই-বাছাই করে এ তালিকা চূড়ান্ত করেছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ৬ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের অধীনে দুই হাজার ৭১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। শর্তপূরণ না হওয়ায় এমপিওভুক্তি হতে পারেনি সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের নির্বাচনী এলাকার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি করা হবে বলে গত নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারা। তাই আগামী নির্বাচনের আগে এমপিওভুক্তি চান তারা।
এমপিওভুক্তির নীতিমালায় যা আছে
এমপিও নীতিমালা- ২০২১ অনুযায়ী, ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করা হয়। ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর), পরীক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর) এবং পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার (৪০ নম্বর)। তবে, এ নীতিমালার ২২ ধারায় বিশেষ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে এমপিওভুক্তির বিধান রাখা হয়েছে।
২২ ধারায় বলা হয়েছে, শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি এলাকা, হাওর-বাওর, চরাঞ্চল, ছিটমহল, বস্তি এলাকা, নারী শিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী (প্রতিবন্ধী, হরিজন, সেবক, চা-বাগান শ্রমিক, তৃতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি) এবং বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, চারুকলা, বিকেএসপিসহ সংস্থা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলযোগ্য।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমপিও নীতিমালা সংশোধন করে গত বছরের ২১ জুলাই পর্যন্ত এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন নেয়া হয়। তখন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনে আবেদন করে চার হাজার ৬২১টি প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ)। এর মধ্যে সব সূচকে এক হাজার ৯৪১টি প্রতিষ্ঠান যোগ্যতা অর্জন করে।
অন্যদিকে, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের অধীনে দুই হাজার ৫৪৪টি (মাদরাসা ও কারিগরি) প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করে। এর মধ্যে মাত্র ২৯৫টি কারিগরি প্রতিষ্ঠান ও ৩৫৩টি মাদরাসা এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।
দফায় দফায় যাচাই-বাছাই করে গত বছরের ৬ জুলাই দুই বিভাগের অধীনে দুই হাজার ৭১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তখন অনেক যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। একইসঙ্গে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা- ২০২১ এর ১৬ ধারার চার উপধারা অনুযায়ী আপিল করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তকরণের জন্য আবেদন চাওয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীনে আবেদন জমা পড়ে এক হাজার ৯১৬টি। কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের অধীনে এমপিওভুক্তির জন্য আপিল করে মাদরাসা ও কারিগরি পর্যায়ের প্রায় এক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আপিল নিষ্পত্তি কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে গত ১২ জানুয়ারি আরো ২৫৫টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে পাঁচটি ডিগ্রি কলেজ, ২৭টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, ২২টি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৮১টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। পাশাপাশি ৩৩টি মাদরাসা, ১৭টি এসএসসি ভোকেশনাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাতটি এইচএসসি বিএমটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে।