বাসি ভাত খেলে হতে পারে যেসব রোগ
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক:
ভাত বাঙালির প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকবেই! আর অনেক সময় ভাত খাওয়ার পর বেঁচে যাওয়া ভাত রেখে দেওয়া হয় পরে আবার খাওয়ার জন্য।
আবার অনেকে ইচ্ছা করে বেশি ভাত রান্না করেন, যাতে পরবর্তীতে আবার রান্না করতে না হয়। এছাড়া কর্মজীবীদের রান্নাবান্নার পেছনে খুব বেশি সময় ব্যয় করার সুযোগ হয় না অনেক সময়। তাই একদিন রান্না করে সেটা বেশ কয়েকদিন ফ্রিজে রেখে খায় অনেকে।
আবার সকালে ভাত রান্না করে সেটা রাতে গরম করে খায়। তবে এটি স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই ক্ষতিকর।
আমাদের মনে রাখা উচিত যে, কেবল গরম ভাত খেলেই হবে না, খেতে হবে টাটকা ভাত। এমন তথ্য জানিয়েছে ব্রিটেনের ‘ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি’র একটি গবেষণা।
আগের দিনের বেঁচে যাওয়া ভাত পরের দিন গরম করে খাওয়া হয় অনেক বাড়িতেই। ভাত রান্না করার পর তা সঠিক তাপমাত্রায়, সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করলে তার মধ্যে ‘ব্যাসিলাস সেরেয়াস’ নামক ব্যাক্টেরিয়া জন্মায়। এই ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণে যে রোগ হয়, তা-ই ‘ফ্রাইড রাইস সিনড্রোম’ নামে পরিচিত। খাবার থেকে বিষক্রিয়া ও তা থেকে মৃত্যু। এমন ঘটনা নতুন নয়।
চিকিৎসকেরা বলছেন, কাঁচা বা আধসেদ্ধ মাছ, ডিম বা গোশত থেকে স্যালমোনেল্লা ব্যাক্টেরিয়া, না ফোটানো দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার থেকে লিস্টেরিয়ার মতো ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রামণ হতে পারে। কিন্তু সাধারণ মানুষকে প্রায় প্রতিদিনই খেতে হয় এমন একটি খাবার, যা থেকেও যে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, তা হয়তো জানে না অনেকেই।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য-সুরক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক কেথ আর স্কেনেইডার বলেছেন, ব্যাসিলাস সেরেয়াস হলো এমন একগুচ্ছ ব্যাক্টেরিয়া, যা ধ্বংস করা কঠিন। রান্না করার সময়ে সঠিক তাপমাত্রা পেলেই এ ধরনের ব্যাক্টেরিয়া আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। শুধু তা-ই নয়, সংখ্যায় দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকে। খাবারের মধ্যে দিয়ে তা পেটে গেলে ব্যাক্টেরিয়া থেকে নির্গত টক্সিনের ফলে সমস্যা শুরু হয়। তবে কেথ বলছেন, খাবার সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করে, সঠিক তাপমাত্রায় রাখলে এ ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার প্রকোপ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। খাবার ভালো করে গরম করলে বা ফুটিয়ে নিলেও এ ব্যাক্টেরিয়াকে পুরোপুরি মেরে ফেলা যায় না।
ব্যাক্টেরিয়ায় আক্রমণের উপসর্গ
বমি: কোনো খাবার থেকে ফ্রাইড রাইস সিনড্রোমে আক্রান্ত হলে ১ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে একাধিক বার বমি হতে দেখা যায়। বাসি ভাত বা ভাত দিয়ে তৈরি খাবার থেকে কোনোভাবে সংক্রামিত হলে বমি হবেই।
ডায়েরিয়া: ব্যাসিলাস সেরেয়াস নামক ব্যাক্টেরিয়াটি শরীরে প্রবেশ করার পর ওই ব্যক্তির গ্যাস্ট্রো-ইনটেস্টাইন ট্র্যাকের ভেতর বাসা বাধে। সেখানে বিষক্রিয়া শুরু করে। ফলে অন্ত্রেও সংক্রমণ শুরু হয়। একাধিকবার পানির মতো মলত্যাগ করেন রোগী।
পেটব্যথা: অতিরিক্ত বমি ও মলত্যাগের কারণে শরীর থেকে পানি বেরিয়ে যেতে থাকে। পানির অভাবে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়ে পড়ে। পেটের পেশির দ্রুত সঙ্কোচন-প্রসারণের ফলে যন্ত্রণা হতে শুরু করে। সাথে কারো কারো সারা শরীরেও ব্যথা লক্ষ করা যায়।
ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ থেকে বাঁচার উপায়
বেঁচে যাওয়া খাবার বেশিক্ষণ বাইরে ফেলে রাখা যাবে না। বিশেষ করে ভ্যাপসা আবহাওয়া ও স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এ ধরনের ব্যাক্টেরিয়া উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। একই সাথে তাদের বিষক্রিয়ার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।
অনেকে দুপুরে ভাত খেয়ে বেঁচে গেলে তা রাইসবোলের মধ্যে তুলে রাখে। পাত্রটি মাইক্রোওয়েভ প্রুফ হলে তা গরমও করে নেয় অনেকে। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, খাবার সুরক্ষিত রাখতে হলে কাচের, বায়ুরোধী পাত্র ব্যবহার করাই ভালো। রান্না করা ভাত ফ্রিজে তোলার আগে দেখে নেওয়া জরুরি যে তা পুরোপুরি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় এসেছে কি না।