সমাজসেবার ভাতা বিতরণে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে তোড়জোড়!
অনলাইন ডেস্ক:
সারা দেশে একেবারেই ন্যূনতম এজেন্ট নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা একটি মোবাইল আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানকে সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজে অন্তর্ভুক্ত করতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলে যথেষ্ট পরিমাণে এজেন্ট না থাকায় ভাতাভোগীরা টাকা উত্তোলনে বিড়ম্বনায় পড়বেন, খোদ সমাজসেবা অধিদপ্তর এমন আশঙ্কা করছে। তারা এই দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়েকেও চিঠি দিয়েছে।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের আপত্তির পরেও বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন না সমাজকল্যাণ মন্ত্রী এবং একই মন্ত্রণালয়ের সচিব। অধিদপ্তরের আপত্তিতেও গা করছে না মন্ত্রণালয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা হিসেবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমেই সরকার প্রতি বছর সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা সামাজিক নিরাপত্তা ভাতা বিতরণ করে থাকে। ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এই ভাতা দেশের শীর্ষ দুটি মোবাইল ফোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দুটি সংস্থাকে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। মূলত বিস্তৃত এজেন্ট নেটওয়ার্কের কারণেই এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে ভাতা বিতরণের জন্য বাছাই করা হয়।
আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে নগদ ও বিকাশ ভাতা বিতরণ করার পরে এখন ‘উপায়’কে যুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। অথচ ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু হলেও দিনকে দিন বরং নিজেদের কলেবর ছোট করে আনছে উপায়। বর্তমান পদ্ধতিতে একেকটি মোবাইল ফোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একেক জেলার ভাতা বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু উপায়ের যেহেতু এজেন্ট নেটওয়ার্ক সন্তোষজনক নয়, ফলে তাদেরকে যে কয়টি জেলার দায়িত্ব দেওয়া হোক না কোনো ঐ অঞ্চলের ভাতাভোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হবে বলে মনে করেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু ইত্তেফাককে বলেন, ‘বিকাশ ও নগদের বাইরে উপায়কেও কিছু কাজ দেওয়ার কথা হয়েছিল। কিন্তু তাদের পর্যাপ্ত এজেন্ট না থাকার বিষয়টি আমরা আলোচনা করেছি। অধিদপ্তর থেকেও আমাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ফলে উপায়কে এজেন্ট বাড়াতে বলা হবে, তারা যদি সক্ষম হয় তার পর তাদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। এবার হয়ত তাদের নাও দেওয়া হতে পারে।’
এর আগে শিওরক্যাশের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বিতরণের দায়িত্ব দেওয়া হলেও অধিকাংশ এলাকায় এজেন্ট না থাকার কারণে অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি ক্যাশআউট করতে পারতেন না। ফলে মাসের পর মাস উপবৃত্তির টাকা মোবাইল ফোনে নিয়ে ঘুরতে হয়েছে অভিভাবকদের। বা ক্যাশ টাকা ক্যাশআউট করতে বহুদূর পর্যন্ত যেতে হয়েছে তাদের।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও বলছেন, নগদ ও বিকাশ সাফল্যের সঙ্গেই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির ভাতা বিতরণের দায়িত্ব পালন করে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে এই দায়িত্বে উপায়কেও সংযুক্ত করার জন্য অধিদপ্তরকে বলা হয়। মন্ত্রণালয়ের এই অনুরোধের পর সমাজসেবা অধিদপ্তর উপায়ের নানা সুযোগ সুবিধা, এজেন্ট নেটওয়ার্ক ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে দেখেন। তাদের অনুসন্ধানে জানতে পারেন যে, বাজারে নতুন আসা উপায়ের দেশে পর্যাপ্ত এজেন্টই নেই। ফলে তাদের যে এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হবে, সেখানে ভাতাভোগীরা ভাতা উত্তোলনে বিড়ম্বনার মধ্যে পড়বেন।
জানা গেছে, বিকাশের সারা দেশের সাড়ে ৩ লাখের বেশি এজেন্ট আছে। নগদেরও এজেন্ট সংখ্যা প্রায় ৩ লাখের কাছাকাছি। সেখানে উপায়ের সারা দেশে এজেন্ট সংখ্যা কয়েক হাজার মাত্র।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, ‘উপায়’ এর সাধারণ ক্যাশ আউট চার্জ ‘বিকাশ’ ও ‘নগদ’ এর চেয়ে কিছুটা কম হলেও তা সামাজিক নিরাপত্তার আওতাধীন উপকারভোগীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এ ছাড়া দেশব্যাপী ‘উপায়’ এর এজেন্ট পয়েন্ট সংখ্যা অপর্যাপ্ত।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রতি বছর প্রায় ৮৯ লাখ মানুষ সরকারের কাছ থেকে নানা হারে ভাতা পেয়ে থাকে। প্রথম ২০২১ সাল থেকে বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী এবং প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে ভাতা পেয়ে আসছিল। পরে আরো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বাকি দুটি খাতও এতে যুক্ত করা হয়।