খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের উদ্বোধন অক্টোবরে
অনলাইন ডেস্ক:
দীর্ঘ এক যুগ অপেক্ষার পর আগামী মাসের তৃতীয় সপ্তাহে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের আরেকটি মেগা প্রকল্প খুলনা-মোংলা রেলপথ। এরই মধ্যে প্রকল্পের ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দীর্ঘ ৯১ কিলোমিটার এ রেলপথের মধ্যে বাকি পাঁচ কিলোমিটারের কাজ শেষ করাই এখন প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বড় চ্যালেঞ্জ।
রেলপথ মোংলা বন্দরের গতিশীলতা আনার পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলে অর্থনীতির এক নতুন দ্বার উম্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, লতার মোড় থেকে মোস্তফার মোড় পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার পথে রেলপথ বসানোর জন্য মাটি সমান করার কাজ চলছে। এ কাজ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। এরই মধ্যে রূপসা নদীর ওপর সাতটি স্প্যানসহ ৫.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলসেতুর পুরোটাই এখন দৃশ্যমান।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাও জানান, খুলনার ফুলতলা থেকে লতার মোড় পর্যন্ত এবং অন্য প্রান্তে মোংলা থেকে মোস্তফার মোড় পর্যন্ত ৮৬ কিলোমিটার রেলপথ বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। বাকি কেবল ৫ কিলোমিটার রেলপথ বসানো।
এছাড়া ১১টি প্লাটফর্ম, ১০৭টি কালভার্ট, ৩১ ছোট ব্রিজ ও ৯টি আন্ডারপাসের সবই নির্মাণ শেষ হয়েছে। গত জানুয়ারিতে প্রকল্পের ফুলতলা অংশে পরীক্ষামূলকভাবে রেলও চলেছে। সব মিলিয়ে প্রকল্পের কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। বিভিন্ন স্থানে রেলপথের ফিনিশিং এবং সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশনের কাজ চলছে।
রেলপথ বসানোর কাজে নিয়োজিত ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনালকে আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেয়া আছে।
এ বিষয়ে ইরকন ইন্টারন্যাশনালের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপক গিরেশ চন্দ্র ত্রিবেদী বলেন,
‘আমাদের কাজ এখন একেবারেই শেষ পর্যায়ে। প্রতিটি রেললাইনেই এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। ৫ কিলোমিটার রেলপথ বসানো বাকি আছে। আমাদের যে সময় দেয়া হয়েছে, আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করতে পারবো।’
খুলনা-মোংলা রেলপথের প্রকল্প পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার জন্য বৃষ্টি একটি বড় বাধা। টানা বৃষ্টি না হলে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারবো। এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হবে নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা। তবে আমরা সেটা পারবো। আর সব ঠিক থাকলে অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে পরীক্ষামূলক রেল চলাচল হবে এবং তার পরপরই উদ্বোধন করা হবে এ রেলপথ।
এদিকে, খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশাবাদী মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীরা।
মোংলা কাস্টমস এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুলতান হোসাইন খান বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এ রেলপথের অপেক্ষায় রয়েছি। আর মাত্র কয়েকটা দিন পরই এ রেলপথ চালু হবে। এ রেলপথ চালু হলে মোংলা বন্দর ব্যবহার করে আমরা খুবই অল্প খরচে পণ্য পরিবহন করতে পারবো।
‘সবচে বড় সুবিধা হচ্ছে, এ রেলপথটি আন্তর্জাতিক রুটে পরিণত হবে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য বাংলাদেশ থেকে সরাসরি ভারতে যেতে পারবে, এতে সময় ও খরচ বাঁচবে। এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের আরও প্রসার ঘটবে। আমদানি ও রফতানিকারকরা আরও আগ্রহী হয়ে উঠবে। এ অঞ্চল দিয়ে দেশের অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত সরকারের ঋণ সহায়তা চুক্তির আওতায় খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান লার্সেন অ্যান্ড টার্বো এবং আরেক প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। ২০১০ সালে খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। এরপর এর সম্ভাব্যতা যাচাই, ডিজাইন চূড়ান্ত, দরপত্র আহ্বান ও ঠিকাদার নিয়োগসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে। এরপর ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায়ও কাজ বাধাগ্রস্ত হয় বেশ কয়েকবার। পাঁচ দফা মেয়াদ বাড়িয়ে সর্বশেষ ২০২৩ সালের অক্টোবরে এ কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়।’
২০১৭ সালের ১৫ অক্টোবর রূপসা রেলসেতুর পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ২৫ জুন সপ্তম ও শেষ স্প্যানটি বসে রূপসা রেলসেতুতে। রেলসেতুর ভায়াডাক্টের ৮৫৬টি পাইল বসানো হয়। মূল সেতুর পাইল ৭২টি, পাইল ক্যাপ ৮টি, বিয়ারিং ৩২টি বসানো শেষ হয়েছে। সেতুটির ওপরিভাগ তৈরি করা হয়েছে স্টিলের গার্ডার এবং আরসিসি ডেকের সমন্বয়ে। এর মধ্যে রূপসা নদীর ওপর রেলসেতু নির্মাণ করে লার্সেন অ্যান্ড টার্বো এবং রেললাইন নির্মাণের কাজ করে ইরকন ইন্টারন্যাশনাল। এ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে চার হাজার ২৬১ কোটি টাকা।
Please follow and like us: