সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় ৩৬ কোটি টাকার প্রকল্প
নিউজ ডেস্কঃ
সুন্দরবনে বাঘ রক্ষা ও বংশবিস্তার বৃদ্ধির জন্য ৩৬ কোটি টাকার বিশেষ প্রকল্প নিয়েছে বন বিভাগ।
‘সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প’ নামের প্রকল্পটি এরই মধ্যে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় বাঘ ও তার শিকার প্রাণী জরিপ, উঁচু টিলা ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। বাঘের ক্যানাইন ডিস্টেম্পার ভাইরাস নিয়ে হবে গবেষণা। সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হবে ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সুন্দরবনে বাঘ ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসন হবে। ফলে মানুষের হাতে বাঘ হত্যা কমবে এবং বাঘ বাড়বে বলে আশা বন বিভাগের।
জানা যায়, ২০২২ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া ৩৫ কোটি ৯০ লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রকল্পটি ২০২৫ সালের মার্চে শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের মূল কাজ বাঘ ও তার শিকার প্রাণী জরিপ। এরই মধ্যে সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জের ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ, তার শিকার প্রাণী ও খাল জরিপ সম্পন্ন হয়েছে। নভেম্বরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে জরিপ শুরু হবে। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে জরিপের ফল প্রকাশ করা হবে।
বন্যা, ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় যাতে বাঘগুলো আশ্রয় নিতে পারে এজন্য সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১২টি উঁচু টিলা তৈরি করা হবে। শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর এলাকায় বাঘের আশ্রয়স্থলে দুর্বৃত্তের আগুন নিয়ন্ত্রণে একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হবে। এ টাওয়ার থেকে ওই এলাকায় সুন্দরবনের অভ্যন্তরে লাগা আগুন দেখে দ্রুত নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে পারবেন বনরক্ষী ও স্বেচ্ছাসেবকরা।
সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে যাতে বাঘ প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য প্রথমে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার-পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় নাইলনের বেড়া (ফেন্সিং) দেয়া হবে। এটি সফল হলে পরবর্তী সময়ে ৬০ কিলোমিটার ফেন্সিং করা হবে। প্রকল্পের আওতায় বাঘের ক্যানাইন (মুখে থাকা সামনের বড় দুটি দাঁত) ডিস্টেম্পার ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করা হবে। এজন্য সুন্দরবন থেকে বাঘের মল সংগ্রহ করা হবে। এ মলের মাধ্যমেই বাঘের দাঁতে সংক্রমিত ভাইরাস নিয়ে গবেষণা করবেন দেশীয় গবেষকরা।
সুন্দরবনে বাঘ ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে ৩৪০ ভিটিআরটি (ভিলেজ টাইগার রেনসপন্স টিম) সদস্য ও ১৮৪ সিপিজি (কমিউনিটি পেট্রল গ্রুপ) সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এর সঙ্গে লোকালয়ে আসা দুটি বাঘের শরীরে স্যাটেলাইট ট্র্যাকার লাগানো হবে। বাঘের অবস্থান নির্ণয়ের জন্য বনকর্মী-কর্মকর্তা সিপিজি ও ভিটিআরটি সদস্যদের দেয়া হবে অ্যাপস। তারা এ অ্যাপসের মাধ্যমে মুঠোফোনে বাঘের গতিবিধি দেখতে পারবেন। ফলে লোকালয়ে বাঘ এলে তারা দ্রুত সুন্দরবনে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারবেন। সুন্দরবন পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণও দেয়া হবে।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ড্রোন ক্যামেরা, স্যাটেলাইট ট্র্যাকার, নাইলনের বেড়া, জিপিএস, বাঘ অজ্ঞানে ট্রাংকুলাইজিং গান, ক্যামেরা, ভিটিআরটি ও সিপিজি সদস্যদের জন্য পোশাক ও প্রশিক্ষণ উপকরণসহ বেশকিছু আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি কেনা হবে। প্রকল্প শেষে প্রকল্পের সব কার্যক্রম নিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টারি ফিল্ম করা হবে, যা পরে সুন্দরবন ও সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় দায়িত্বে আসা কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগবে।
প্রকল্প প্রস্তাবে বাঘ না থাকা এলাকায় বাঘ স্থানান্তরের মাধ্যমে আবাসস্থল সংরক্ষণের কথা রয়েছে। কিন্তু খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের সময় বাঘের উপস্থিতি পাওয়ায় বাঘ না থাকা এলাকায় স্থানান্তরের বিষয়টি প্রকল্প থেকে বাদ দেয়া হয়েছে।
এদিকে প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবন ও বাঘ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণের বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। এ প্রশিক্ষণের ফলে নিজেদের দক্ষতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাঘ রক্ষায় কাজের আন্তরিকতা বাড়বে বলেও জানিয়েছেন তারা।
ভিটিআরটির সদস্য মোরেলগঞ্জ উপজেলার গুলিশাখালী এলাকার লাকি বেগম বলেন, দীর্ঘদিন বাঘ ও বন্যপ্রাণী রক্ষায় কাজ করছি। আমাদের এ বিষয়ে একাডেমিক জ্ঞান খুবই কম। শুনেছি আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণ দিলে ভালোভাবে কাজ করতে পারব।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ও সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের পরিচালক ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, সুন্দরবন বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজ খুব ভালোভাবে চলছে। সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জের বাঘ জরিপের জন্য ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিপিজি, ভিটিআরটি প্রশিক্ষণ শুরু হবে। বাঘ সংরক্ষণ ও বাঘ বৃদ্ধিতে বেশকিছু কাজ করা হবে। এছাড়া পুরো প্রকল্পের কার্যক্রম ভিডিও করা হবে, যা দিয়ে ভিডিও ডকুমেন্টারি ফিল্ম তৈরি করা হবে। ফিল্মটি পরবর্তী সময়ে সুন্দরবন ও বাঘ রক্ষায় কাজ করা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগবে।