সাত দফা দাবিতে সাতক্ষীরা জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের গণঅনশন
রঘুনাথ খাঁ:
সাত দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের
সাতক্ষীরা জেলা শাখা গণঅনশন ও গণঅবস্থান কর্মসুচি পালন করেছে।
পুরাতন সাতক্ষীরা মায়ের বাড়ি নাটমন্দিরে শুক্রবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ কর্মসুচি পালন করেন।
খুলনা বিভাগ ও রাজশাহী বিভাগের শুক্রবারের কর্মসুচির অংশ হিসেবে সংগঠণটির সাতক্ষীরা জেলা শাখার সভাপতি বিশ্বজিৎ কুমার সাধুর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সংগঠণের সাধারণ
সম্পাদক স্বপন কুমার শীল, জেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ ঘোষ, জেলা মন্দির সমিতির সভাপতি অ্যাড. সোমনাথ ব্যাণার্জী, সাধারণ সম্পাদক নিত্যানন্দ আমিন, সহসভাপতি অ্যাড. তারক চন্দ্র মিত্র, অধ্যক্ষ শিবপদ গাইন, প্রভাষক বাসুদের সিংহ, অধ্যাপক পবিত্র মোহন দাস, জেলা বাসদের সমন্বায়ক কমঃ নিত্যানন্দ সরকার, প্রভাষক বিশ্বনাথ কয়াল, বিশ্বরুপ
সানা, অমিত ঘোষ, সুজন বিশ্বাস প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ একসাথে কাঁধে কাঁধ রেখে যুদ্ধে অংশগহেণ করেছিল।
পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচিত
হয়েছিল তার প্রধান ধারা ছিল ধর্মনিরপেক্ষতা। অথচ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের সেই
সংবিধান কয়েকবার কাটা ছেঁড়া করা হয়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসাইন মোঃ এরশাদ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্মকে ইসলাম হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করান। এরপর আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও
জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামকে বহাল রেখেছেন। ২০০৮ সালের সংসদীয় নির্বাাচনে নির্বাচনী ইস্তেহারে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা ঘোষনা করলেও দীর্ঘ ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম রয়ে
গেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে পূণরায় ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশ,আওয়ামী লীগ সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, বৈষম্য বিলোপ আইন আইন প্রণয়ন, দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন,
জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠণ, অর্পিত সম্পত্তি আইন প্রণয়ন, পার্বত্য শান্তি চুক্তি ও পার্বত্য ভ‚মি কমিশন আইন বাস্তবায়ন এবং সমতলের আধিবাসীদের জন্য পৃথক কমিশন গঠণ সম্পর্কিত
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের দাবি দাওয়াসমূহ পূরণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। অথচ সেইসব দাবি আজও
পূরণ করা হয়নি। এর ফলে দীর্ঘদিন ধরে ঘটে যাওয়া সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন, নির্যাতনের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় দোষীরা শাস্তি পাচ্ছে না। ফলে হামলাকারিরা আরো বেশি বেপরোয়া হয়ে
উঠেছে। এ ছাড়া অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইনের সুফল
পাচ্ছেন না সংখ্যালঘুরা। এ আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে বক্তার
বলেন, শত্রæ সম্পত্তি আইনের আদলে তৈরি অর্পিত সম্পত্তির
তালিকা প্রস্তুত করে তা ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দুদের মাঝে ফিরিয়ে দেওয়া
হোক। যে সমস্ত দেবোত্ম সম্পত্তি জোরপূর্বক দখল করা হয়েছে বা
মালিকানা দেওয়া হয়েছে তা ওইসব মন্দির কমিটির মাধ্যমে
ফিরিয়ে দেওয়া হোক। এ ছাড়া হিন্দু নাবালিকাদের যেভাবে
ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে তা বন্ধ করার জন্য বিশেষ আইন করা হোক।
সন্ধ্যা ৬টায় মন্দির সমিতির সভাপতি অ্যাড. সোমনাথ
ব্যানার্জী ও সাধারণ সম্পাদক নিত্যানন্দ আমিন সরবৎ খাইয়ে
উপস্থিত অনশনকারিদের অনশন ভঙ্গ করান।
সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিকাশ চন্দ্র দাস।