ধর্ষণের শিকার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী এখন কন্যা সন্তানের মা

নিউজ ডেস্ক:

নাটোরের গুরুদাসপুরে ধর্ষণের শিকার চতুর্থ শ্রেণির সেই শিশুটি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে নবজাতকটির জন্ম দিয়েছে ১২ বছরের এ শিশুটি। মা এবং নবজাতক দুজনেই সুস্থ আছে।

জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নার্গিস তানিমা ফেরদৌস ও অ্যানেসথেসিয়া চিকিৎসক ফেরদৌস রহমানসহ ছয় সদস্যের চিকিৎসক টিম শিশুটির সিজারিয়ান অপারেশন করেন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. নার্গিস তানিমা ফেরদৌস বলেন, ওই ছাত্রীর বয়স অনেক কম। ফলে মা ও নবজাতককে নিয়ে আমরা অনেক চিন্তিত ছিলাম। আমরা কয়েকজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিলে আলোচনার মাধ্যমে অপারেশন করার সিদ্ধান্ত নেই। তবে শিশুটির শরীরে রক্তের মাত্রা কম থাকায় দুই ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে। আল্লাহপাকের রহমতে সফলভাবে সন্তান জন্ম নেয়। অপারেশনের মাধ্যমে ৩ কেজি ওজনের ফুটফুটে সন্তান জন্ম দিয়েছে ওই ছাত্রী। বর্তমানে মা ও নবজাতক সুস্থ রয়েছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায় বলেন, গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে ওই ছাত্রী কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ আগেও তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। সামনেও মা-শিশুকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

ওই ছাত্রীর চাচি বলেন, নবজাতক জন্ম নিয়েছে ঠিকই, তবে পরিচয় নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। পিতা-মাতা হারা শিশুটিকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেছিল প্রতিবেশি দাদা জাহিদুল খাঁ। জাহিদুলকে গ্রেফতার করা হলেও বিচার পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। কারণ জাহিদুল গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে হুমকি দিচ্ছে তার স্বজনরা।

পুলিশ জানায়, ধর্ষণের শিকার ওই ছাত্রীর দাদির মামলায় জাহিদুল খাঁকে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার হেলেঞ্চা গ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর থেকে জাহিদুল কারাগারে আছেন।

পুলিশ আরো জানায়, পারিবারিক কলহের কারণে ওই ছাত্রীর বাবা-মার সংসার ভেঙে যায়। পরবর্তীতে বাবা ও মা অন্যত্রে বিয়ে করে। এরপর থেকে শিশুটি তার চাচা-চাচির কাছে থাকত। এলাকার এক দুঃসম্পর্কের দাদা জাহিদুল খাঁ মাঝে মধ্য ওই ছাত্রীকে নিয়ে তার ভ্যানে বেড়াতে যেত। পরে সাতমাস পর শিশুটির শারীরিক পরিবর্তন দেখে পরিবারের মানুষ জিজ্ঞেস করলে কোনো উত্তর দেয়নি ওই ছাত্রী। তবে প্রসব পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে গর্ভে সন্তান থাকার কথা জানতে পারে পরিবার।

এরপর গত ১৮ জুন শিশুটির দাদি বাদী হয়ে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেন। পরে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রাতে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার হেলেঞ্চা এলাকা থেকে অভিযুক্ত জাহিদুল খাঁকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

ওই ছাত্রীর চাচা জানান, ওই ছাত্রীর বাবা-মা দুজনেই বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। ছোট থেকে শিশুটিকে তারাই লালন পালন করছেন। স্থানীয় একটি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছে সে।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, হাসপাতাল এবং উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিশুটির চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হচ্ছে।

গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. মোনোয়ারুজ্জামান বলেন, ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)