দেবহাটায় ইছামতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

দেবহাটা প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার দেবহাটায় বাংলাদেশ-ভারতের আর্ন্তজাতিক সীমানা নির্ধারণী ইছামতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কোনভাবেই থামছেনা। প্রশাসনের উদাসীনতা ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে প্রতিনিয়ত নদীগর্ভ থেকে লাখ লাখ টাকা মুল্যের বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন অসাধু বালু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। এতে করে প্রতিনিয়ত নদী ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করায় ¯্রােতস্বিনী ইছামতিতে বিলীন হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখন্ড।
সম্প্রতি ইছামতি নদীর ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বেড়িবাঁধ রক্ষায় সরকারি কাজের অজুহাত দেখিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যোগসাজোসে ইছামতি নদীর নির্দ্দিষ্ট এলাকা থেকে সামান্য পরিমানে বালু উত্তোলনের জন্য সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছেন কালীগঞ্জ উপজেলার শেখ ইয়াছিন আলীর ছেলে বালু ব্যবসায়ী শেখ সাব্বির আহমেদ এবং কুদ্দুস নামে তার এক সহযোগী।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টরেট কৃষ্ণা রায় স্বাক্ষরিত ওই অনুমতি পত্রে বলা হয়েছে, দেবহাটা মৌজার আরএস ১ নং খতিয়ানের ৫৫০১ নং দাগে ঘের শ্রেণির বাস্তবে নদী হিসেবে থাকা ০.৫৭০০ একর জমিতে সুশীলগাতি বালুচর থেকে পরবর্তী চার মাস কেবলমাত্র নদী ভাঙ্গন রোধে সরকারি কাজে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু বালু উত্তোলন করতে পারবে সাব্বির-কুদ্দুস সিন্ডিকেট। আর উত্তোলিত বালু কেবলমাত্র সরকারি কাজেই ব্যবহৃত হবে। কিন্তু বালু উত্তোলনের ক্ষেত্রে অনুমতি পত্রের এসব নিয়ম মানছেনা সিন্ডিকেটটি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দেবহাটা সদরের একাধিক বালু ব্যবসায়ী জানান, ইতোপূর্বে কয়েকবার ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদী ভাঙ্গনের ফলে দিনদিন ইছামতিতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে দেবহাটা তথা বাংলাদেশের ভূখন্ড। তাছাড়া উপজেলার একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র রূপসী দেবহাটা ম্যানগ্রোভ পর্যটন কেন্দ্রটিও শিবনগরে ইছামতি নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। নদী ভাঙনে পর্যটন কেন্দ্রটিও হুমকির মুখে পড়েছে। এসব কারনে গেল বছর থেকে দেবহাটার সবগুলো বালুমহালের ইজারা বন্ধ করে দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু কালীগঞ্জের সাব্বির-কুদ্দুস সিন্ডিকেট ও পানি উন্নয়ন বোর্ড যোগসাজোসে জেলা প্রশাসনকে সরকারি কাজে বালু ব্যবহারের মিথ্যা অজুহাত দিয়ে নদীর নির্দ্দিষ্ট একটি স্থান থেকে সামান্য পরিমানে বালু উত্তোলনের অনুমতি করিয়ে নিয়ে দেদারছে নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে।
ইছামতি পাড়ের বাসিন্দারা জানান, প্রশাসনের ভুল সিদ্ধান্তে বারবার নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এ অঞ্চলের হাজার হাজার পরিবার। যত্রতত্র বালু উত্তোলনে বাঁধা দিতে গেলে উল্টো এ সিন্ডিকেটের হুমকি ও হামলার শিকার হন সাধারণ মানুষ।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে এ সিন্ডিকেটের নের্তৃত্বে থাকা কালীগঞ্জের বালু ব্যবসায়ী কুদ্দুস বলেন, ‘বহু টাকা খরচ করে বালু উত্তোলনের অনুমতি মিলেছে। বালু তোলার অনুমতি করিয়ে নিতে উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন এমনকি বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে। ইছামতির যে পয়েন্টে ইচ্ছে, সেখান থেকেই বালু উত্তোলন করা হবে’।
দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইয়ানুর রহমান বলেন, ইছামতি নদীর নির্দ্দিষ্ট স্থানের বাইরে থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং সরকারি কাজে ব্যবহার না করে উত্তোলিত বালু বিক্রির বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন অবগত নয়। শিগগিরিই তদন্ত করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করার পাশাপাশি জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও আশ্বস্থ করেন তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)