পাকিস্তানে সংসদ ভেঙে দেওয়া হলেও পিছিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পাকিস্তানের সংসদ আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তবে নিয়ম অনুযায়ী, সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশটিতে জনশুমারির ভিত্তিতে নির্বাচনী আসন পুনর্বিন্যাস করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে কারণেই যথা সময়ে নির্বাচন হচ্ছে না।
দেশটিতে গত সপ্তাহেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়। তার কারাদণ্ড হওয়ায় তিনি ৫ বছরের জন্য রাজনীতিতে অযোগ্য হয়ে গেছেন। ইমরান খান প্রকাশ্যে দেশটির প্রভাবশালী সামরিক বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং বলেছিলেন সামরিক বাহিনী আসন্ন নির্বাচন নিয়ে খুব ভয় পাচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভী বুধবার সংসদ ভেঙে দেওয়ার আদেশ দেওয়ার পর একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার এখন দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবে। বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ ও তার সরকারের হাতে নতুন অন্তর্বর্তী নেতার নাম চূড়ান্ত করার জন্য তিনদিন সময় আছে।
নির্বাচন কমিশনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, জনশুমারি শেষ হলেই নির্বাচন হবে। এজন্য চার মাস সময় দরকার হবে। ফলে নির্বাচন আগামী বছর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে।
শাহবাজ শরীফও সাংবাদিকদের সম্প্রতি বলেছিলেন যে, চলতি বছর নির্বাচন নাও হতে পারে। যদিও দেশটিতে এমন আলোচনা চলছে যে, নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার মূল কারণ হলো ইমরান খানের জনপ্রিয়তা। তার কারণেই ক্ষমতাসীন পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) জোট নির্বাচনে জয়ের বিষয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী নয়। পাশাপাশি আইএমএফ-এর সহযোগিতা সত্ত্বেও ব্যাপক মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে সেখানে।
এক সময় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও ইমরান খান এমনভাবে সেনাবাহিনীর বিরোধে জড়িয়েছেন যা তার আগে কোনো রাজনীতিক করেননি। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাসুল বখশ রাইস মনে করেন যে, গ্রেফতারের কারণে ইমরান খানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়বে।
এর আগে গত মে মাসে ইমরান খানের গ্রেফতার নিয়ে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। এতে কমপক্ষে আটজন নিহত হয়। এছাড়া সামরিক কিছু স্থাপনায় নজিরবিহীন হামলা চালানো হয়।
৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিক দাবি করেছিলেন যে, সামরিক বাহিনীর লক্ষ্য হলো তাকে বন্দী রেখে তার দলকে ধ্বংস করে দেওয়া। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীকে যেই চ্যালেঞ্জ করুক তাকেই ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার নজির বেশ পুরোনো। এমনকি ইমরান খানের মতো আন্তর্জাতিকভাবে সুপরিচিত একজন ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে।
পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে নিয়মিত বিরোধী রাজনীতিক, অধিকার কর্মী ও সাংবাদিকদের আটকের অভিযোগ ওঠে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টিতে প্রতি মাসেই বাড়ছে জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা।
এ ধরণের ঘটনা তদন্তের জন্য কাজ করা সরকারি সংস্থার হিসেবে শুধু জুলাই মাসেই ১৫৭টি এ ধরণের ঘটনা সম্পর্কে রিপোর্ট হয়েছে। সংসদে উত্থাপিত বিলগুলো প্রেসিডেন্ট আলভীর কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি পিটিআইয়ের একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা। সংসদে এ ধরনের বিল পাশের পর তা আইনে পরিণত করতে হলে প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করলেই তা আইনে পরিণত হবে।