সাতক্ষীরার মাটির টালি যাচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকায়
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা সদরের মুরারিকাটি গ্রামে উৎপাদিত মাটির টালি রফতানি হচ্ছে ইউরোপ আমেরিকা মহাদেশের অনেক দেশে। দৃষ্টিনন্দন এসব টালি শোভা পাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকার মতো দেশের বিভিন্ন স্থাপনায়। ফেক্স এ্যাংগুলার টালি, হেড ড্রাগুলার, স্কাটিং, স্টেম্প, স্কয়ার, রুপ, ব্রিকস্ ও ফ্লোর টালি রফতানি হচ্ছে।
গ্রাম্য মৃতশিল্পীদের হাতে তৈরি এসব মাটির টালি এখন রফতানি হচ্ছে জার্মান, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ড, ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায়। বছরে ১৫ থেকে ২০ কোটি টালি রফতানি হয় ইউরোপ আমেরিকায়। যার রফতানি মূল্য অন্তত দেড় শ কোটি টাকা।
খুলনার রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান নিকিতা ইন্টারন্যাশনাল, মা-কটোস্ ইন্টারন্যাশনাল, কুমিল্লার আর নো এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ও কলারোয়া টালি ইন্টারন্যাশনালসহ ১০ থেকে ১২ টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান মুরারিকাটি উৎপাদিত টালি ইউরোপসহ যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি করছে।
তবে আধুনিক প্রযুক্তির পাশাপাশি সরকারের পৃষ্টপোষকতা পেলে দেশের রফতানিতে অনেক বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে মুরারিকাটির টালি।
মুরারিকাটি গ্রামের রফতানিজাত টালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স কলারোয়া টালি ঘরের স্বত্বাধিকারী ও স্থানীয় কয়লা ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আবুল হোসেন জানান, ২০০৯ সাল থেকে তার প্রতিষ্ঠানটি রফতানিজাত টালি উৎপাদন করে আসছে। প্রতি মৌসুমে ৮ থেকে ১০ লাখ টালি উৎপাদন হয় তার কারখানায়। উৎপাদিত এসব টালি বিভিন্ন রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেন।
আবুল হোসেন আরো জানান, যারা দিনরাত পরিশ্রম করে দৃষ্টিনন্দন মাটির টালি উৎপাদন করেন তারা সরকারের ভর্তুকি পায় না প্রণোদনা দেয়া হয় প্রভাবশালী বা অর্থশালী রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানকে।
তিনি জানান, মুরারিকাটি গ্রামে অন্তত ৪০ থেকে ৪৫ টি কারখানায় উৎপাদন হয় এই টালি। এসব কারখানা থেকে বছরে ১৫ থেকে ২০ কোটি টালি উৎপাদন করা হয়। যার রফতানি মূল্য দেড় শ কোটি টাকার বেশি। তবে করোনাকালীন সময়ে কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। তবে রফতানিজাত এই টালি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সল্প সুদে ঋণ সহায়তার পাশাপাশি সরকারি ভর্তুকিতে আধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের দাবি জানান তিনি।
মুরারিকাটি গ্রামের দীপা টালি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী বাদল চন্দ্র পাল জানান, ২০০৫ সালের দিকে প্রথম রফতানিজাত টালি উৎপাদন শুরু হয়। এরপর ২০০৬-২০০৭ পর্যন্ত খুব ভালো ব্যবসা হয় টালি উৎপাদনে। এরপর কারখানা যত বাড়তে থাকে ততই শুরু হয় অসম প্রতিযোগিতা।
তিনি আরো বলেন, ১৬/১৭ বছর আগেও প্রকার ভেদে একেকটি টালি উৎপাদন খরচ বাদে মুনাফা থাকতো যা বর্তমান প্রায় একই রয়ে গেছে। অথচ এখন শ্রমিকের বেতন ভাতা প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। মাটি ও জ্বালানীর দামও অস্বাভাবিক। ফলে কোনো রকম টিকে রয়েছে এখানকার কারখানাগুলো।
খুলনার টালি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান নিকিতা ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক সুলতান আহমেদ বলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার ৬ থেকে ৭ টি দেশে মুরারিকাটির টালি রফতানি করে তার প্রতিষ্ঠানটি।
বিশেষ করে জার্মান, ইতালি, স্পেন, নেদারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডসহ আমেরিকা এবং কানাডায় প্রতি বছরে ৪৫ থেকে ৫০ টি কন্টেন্টার টালি পাঠানো হয়। তবে এখন এর চাহিদা আরো বেশি।
তিনি বলেন, মোট রফতানির ২৫ শতাংশ টালি তারা নিজেরাই উৎপাদন করেন এবং বাকি ৭৫ শতাংশ বিভিন্ন কারখানা থেকে সংগ্রহ করে রফতানি করা হয়।
সাতক্ষীরা বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক গোলাম সাকলাইন বলেন, মুরারিকাটি মাটির টালি ইউরোপ-আমেরিকার বাজার দখল করছে এটি সাতক্ষীরা জেলার জন্য অনেক বড় সুনাম। গ্রামীণ মৃতশিল্পীর হাতে তৈরি দৃষ্টিনন্দন টালি শোভা পাচ্ছে ইউরোপ আমেরিকার মতো দেশের বিভিন্ন স্থাপনায়। এ শিল্পের আরো প্রসার ঘটাতে বিসিকের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা দেয়া হবে।
সাতক্ষীরা কলারোয়া-তালা ১ আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ জানান, দৃষ্টিনন্দন টালি উৎপাদন করে বিশ্বের কাছে সাতক্ষীরা তথা কলারোয়া উপজেলাকে পরিচিত করেছে মুরারিকাটি গ্রামের মৃতশিল্পীরা। এখান থেকে বছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে সরকার। এ শিল্পকে আরো সম্ভাবনাময় করতে সরকারের পক্ষ থেকে ঋণ সহায়তাসহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হবে বলে।