নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের প্রহারে ছাত্রের মৃত্যু, চার শিক্ষককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারাফটকে দুই দিনের অনুমতি
রঘুনাথ খাঁ:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের প্রহারে নবম শ্রেণীর ছাত্র রাজপ্রতাপ দাসের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত চার শিক্ষককে দুই দিন কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত ১৯ জুলাই মামলার তদন্তককারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন রহমানের পাঁচ দিনের আবেদন শুনানী শেষে মঙ্গলবার এ আদেশ দেন।
গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষকরা হলেন,প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম, সহকারি প্রধান শিক্ষক আব্দুল মুহিত, সহকারি শিক্ষক অবকাশ কুমার খাঁ ও সিদ্ধার্থ রায় চৌধুরী।
রিমান্ড আবেদন শুননীকালে কাঠগোড়ায় উপস্থিত মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মামুন রহমান বিচারকের দৃষ্টি আবর্ষণ করে বলেন, ১নং আসামী সহকারি শিক্ষক অবকাশ কুমার খাঁ’র সঙ্গে মৃতের পরিবারের আগে থেকে বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের কারণে রাজপ্রতাপকে মারপিট করেন অবকাশ কুমার খাঁ। এ মারপিটের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এ সময় বিচারক রাকিবুল ইসলাম তদন্তকারি কর্মকর্তার কাছে অভিযোগের সুনিদ্দিষ্ট কোন প্রমাণ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি সদুত্তোর দিতে পারেননি। তবে আদালতের বারান্দায় উপস্থিত থাকা মৃত রাজপ্রতাপের জ্যাঠামহাশয়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবকাশ স্যারের সঙ্গে তাদের পরিবারের কোন বিরোধ নেই।
বাদিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. বাবলা নবম শ্রেণীর স্কুল ছাত্র রাজপ্রতাপ দাশ শিকক্ষের হাতে মার খেয়ে পানি পানি করতে থাকলে তাকে পানি দেয়নি শিক্ষকরা। ফলে তার মৃত্যু হয়েছে। এজাহার বহির্ভুত কথা বলায় বিষয়টি বিচারকের দৃষ্টি এড়ায়নি। এমনকি আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. এসএম হায়দার, অ্যাড. নিজামউদ্দিন, অ্যাড. আশরাফুল আলম, অ্যাড. অসীম কুমার মÐল ও অ্যাড. জিয়াউর রহমান জিয়া আপত্তিকর বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানান। আসামীপক্ষের আইনজীবীরা বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এ ঘটনায় ১৭ জুলাই জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠণ করা হয়েছে। তা ছাড়া রাজপ্রতাপের মৃত্যুর পর ১৬ জুলাই বিকেল তিনটা থেকে হামলাকারিদের কাছে অবরুদ্ধ ছিলেন গ্রেপ্তারকৃত শিক্ষকরা। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন বিকেল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত তারা সদর থানায় পুলিশ হেফাজতে ছিল। সেক্ষেত্রে পুলিশ অনেক জিজ্ঞাসাবদের সময় পেয়েছে। গত শনিবার অভিভাবক সদস্য আব্দুর জব্বার পাড় বাড়ি হয়ে ৩৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ১৫০/২০০ জনকে আসামী শ্রেণীভুক্ত করে এজাহার দিলেও পুলিশ গত চার দিনেও মামলা নিয়েছে কিনা তা জানা যায়নি। মৃত্যুর প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধানে তদন্তকারি কর্মকর্তা গত নয় দিনে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন বা ফরেহনসিক প্রতিবেদন চায়নি। অথচ তিনি রিমাÐ চেয়েছেন, নাবালক সাক্ষীদের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। ১৬ তারিখের ঘটনায় আহত দাবি করে এক সাক্ষীকে ১৮ জুলাই ও অপর এক সাক্ষীকে ১৯ জুলাই কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাতমিক চিকিৎসা করিয়েছেন।
মামলা ও ঘটনার বিবরনে জানা যায়, নলতা আহছানিয়া মিশনের পিছনে বেলাল হোসেনের মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ‘মেঘলা’র’ জন্মদিনে চার ছাত্রীর সঙ্গে রাজপ্রতাপ দাস, মুশফিকুর, জুবায়ের, আর রাফি কেক কেটে বিদ্যালয় ভবনের তিন তলার ছাদে টিকটক করছে বিষয়টি জানতে পেরে ১৬ জুলাই সকাল ১০টার দিকে সেখানে ছুঁটে যান সহকারি শিক্ষক অবকাশ খাঁ ও মনিরুল ইসলাম। টিকটক বন্ধ করতে বলায় রাজপ্রতাপসহ নবম শ্রেণীর চার ছাত্র রাজী হয়নি। এ নিয়ে শিক্ষক অবকাশ খাঁ ও মনিরুল ইসলাম তাদের ভৎসনা করেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজপ্রতাপ বাড়ি এসে ২০ মিনিট শৌচাগারে থাকার পর বমি শুরু করে। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে ওইদিন দুপুর একটা ৪০ মিনিটে মারা যায় বলে মামলায় অভিযোগ। বাড়ি থেকে লাশ নিয়ে মিছিল করতে করতে স্কুল ছাত্র ও এলাকাবাসী স্কুল ঘেরাও করে প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম, সহকারি শিক্ষক অবকাশ খাঁ ও মনিরুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের দাবিতে তারা শিক্ষকদের অবরুদ্ধ করে রাখে। মারপিট করা হয় শিক্ষক অবকাশ খাঁ, মনিরুল ইসলাম ও হাসানকে। পরে তারা প্রধান শিক্ষকের কক্ষ, সহকারি প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষকদের কক্ষে ভাঙচুর চালায়। নয়টি মটর সাইকেল ভেঙে ফেলে দুটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পরে প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষককে পুলিশ বেষ্টণীর মধ্য দিয়ে সদর থানায় আনা হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন বন্ধ রয়েছে।