বাগেরহাটে বাগানে ঝুলছে সৌদির খেজুর
নিউজ ডেস্কঃ
থোকায় থোকায় ঝুলছে খেজুর, কোনটি লাল ও কোনটি হলুদ। গাছে গাছে ঝুলছে আজওয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বারসহ বাহারি জাতের সব খেজুর। আকার ভেদে কোনটি গোল, কোনটি লম্বা। সৌদি আরবের মরুভূমির রসালো মিষ্টি এ খেজুরের বাগান গড়ে তুলেছেন বাগেরহাট জজ কোর্টের আইনজীবী মো. জাকির হোসেন।
জেলার রামপাল উপজেলার সন্ন্যাসী হাজিপাড়া গ্রামের নিজের ১৫ বিঘা জমিতে গড়ে তোলা তার এ বাগানে রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক গাছ। তিন বছর আগে রোপণ করা এ গাছগুলোতে ফল ধরেছে ২৫ থেকে ৩০ কেজি পর্যন্ত। এ বছর ফল ধরেছে ৮০টি গাছে।
বাগান মালিক অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন বলেন, ২০১৪ সালে নিজের ১৫ বিঘা জমিতে ৯টি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করি। সে সময় পুকুরের চারপাশ জুড়ে বিভিন্ন ফলজ গাছও রোপণ করি। কিন্তু লবণ পানির জন্য এসব গাছে ঠিকমতো ফল হচ্ছিল না। এ সময় প্রচণ্ড লবণ পানির কারণে পুকুরে থাকা মাছও ভালো হচ্ছিল না। পরে ২০১৯ সালের প্রথম দিকে রামপাল সৌদি খেজুর বাগান নাম দিয়ে খেজুর চাষ শুরু করি। এ সময় ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে ২০০ সৌদি খেজুরের চারা এনে রোপণ করি। পরবর্তীতে নরসিংদী থেকে আরো ১০০ চারা আনি।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে আমার আজওয়া, মরিয়ম, সুকারি, আম্বার ও বারহি এই পাঁচ জাতের ৫ শতাধিক গাছ রয়েছে। এর আগে গত বছর ৫০টি গাছে ফল ধরেছিলো। এ বছর ৮০টি গাছে একযোগে ফলন এসেছে। আগামী বছর বাগানে অন্তত ২ শ থেকে ৩ শ গাছে ফল আসবে বলে আশা করছি।
এরইমধ্যে বেশ কিছু ফল ব্যবসায়ী আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন খেজুর কেনার করার জন্য। গত বছর যে ফল ধরেছিল সেগুলো স্থানীয় বাসিন্দাসহ বাগান দেখতে আশা মানুষের মাঝে বিতরণ করেছি। এ বছরই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে খেজুর বিক্রি শুরু করেছি।
এছাড়া বাগারে খেজুরের পাশাপাশি কয়েক প্রজাতির আম, আমড়া, মাল্টাসহ বেশ কিছু ফলের গাছ রয়েছে।
তিনি বলেন, আমার বাগানে কলম এর চারা রয়েছে। গাছগুলো উন্নতমানের পরীক্ষিত জাত। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাছগুলো সংগ্রহ করেছি।
বাগান পরিচর্যার কাজে নিয়োজিত আশরাফ শেখ বলেন, আমার এখানকার পানি প্রচণ্ড লবণ। এ কারণে গাছপালাও ঠিকমতো হতে চায় না। তবে ডিপটিউবয়েল বসিয়ে তা থেকে মিষ্টি পানি গাছের গোড়ায় দেই। এছাড়াও প্রতিটি গাছে বিশেষ যত্ন নিতে হয়।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, রামপাল উপজেলায় জাকির হোসেন নামে একজন আইনজীবী সৌদি খেজুর চাষে সফলতা পেয়েছেন। কৃষিবিভাগ তাকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। অন্য যেসব কৃষক খেজুর বাগান করতে আগ্রহী হয়েছেন তাদেরকেও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সৌদি খেজুরের একটা সমস্যা হচ্ছে পুরুষ ও স্ত্রী গাছ আলাদা হয়। এ কারণে বীজ থেকে যে গাছগুলো তৈরি করা হয় তার অধিকাংশই ফল নাও ধরতে পারে। মূলত সাকারের মাধ্যমে এখান থেকে চারা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সৌদি খেজুর দক্ষিণাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারলে নতুন অর্থকারী ফসল হিসেবে এ খেজুরের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। জাকির হোসেনের সৌদি খেজুর বাগানই আমাদের দেশে সর্ববৃহৎ খেজুর বাগান এটি।