৫ বছরে ভোটার বেড়েছে দেড় কোটি, ভোটকেন্দ্র বাড়বে ২ হাজার
নিউজ ডেস্ক:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রায় দেড় কোটি বেশি ভোটার ভোট দেবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১০ কোটি ৪০ লাখের কিছু বেশি ভোটার ছিল। তবে এবার এই ভোটারের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জনে। যারা এ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) জানায়, দেড় কোটি ভোটার বাড়লেও এবার কেন্দ্র বাড়তে পারে মাত্র দুই হাজার। তার মানে এবার ভোটকেন্দ্রের টার্গেট ৪২ হাজার। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরির কাজ দ্রুতই শুরু হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা মেনে থানা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা খসড়া তৈরি করবেন। আর ভোটকেন্দ্র যাচাই-বাছাইয়ে স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
ভোটকেন্দ্র নির্বাচনে থানা, জেলা ও মহানগর কমিটি যাচাই-বাছাই করে সরেজমিনে পরিদর্শন করবে। সবশেষে ইসিতে প্রতিবেদনসহ কমিটি প্রস্তাব পাঠাবে। পরে তা চূড়ান্ত করে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট আকারে প্রকাশ করবে ইসি।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের জন্য দেশব্যাপী ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন হবে।
হালনাগাদের তথ্যানুযায়ী, এবার ভোটার রয়েছে ১১ কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার ৪৪০ জন। যারা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। এর আগে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবশেষ ১০ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি ভোটারের জন্য ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্র ছিল। এই ৪০ হাজারের বেশি ভোটারের ভোটকক্ষ ছিল দুই লাখের বেশি।
এছাড়া, দশম সংসদ নির্বাচনে নয় কোটি ১৯ লাখ ভোটারের জন্য কেন্দ্র ছিল ৩৭ হাজার ৭০৭টি। যেখানে ভোটকক্ষ ছিল এক লাখ ৮৯ হাজার ৭৮টি। নবম সংসদ নির্বাচনে আট কোটি ১০ লাখ ভোটারের জন্য কেন্দ্র ছিল ৩৫ হাজার ২৬৩টি। যেখানে ভোটকক্ষ ছিল এক লাখ ৭৭ হাজার ২৭৭টি।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইসির অনুমোদনের পর জুনের প্রথম সপ্তাহে ‘ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা নীতিমালা’ জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নারী-পুরুষ ভোটার বিবেচনায় নীতিমালা মেনে মাঠ কর্মকর্তাদের কাছে নির্ধারিত ছকে ভোটকেন্দ্রের প্রস্তাবনা পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। সরেজমিনে পরিদর্শন করে কমিটি ভোটকেন্দ্রের অবস্থান, ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা, ভোটকক্ষের সংখ্যা ও ভোটার সংখ্যা এসবের সারসংক্ষেপ তৈরি করবে।
তিনি বলেন, জুলাইয়ে প্রাথমিক তালিকা তৈরির কাজ শুরুর পর সারাদেশের একীভূত তথ্য আগস্ট-সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা পাব বলে আশা করি। খসড়া প্রকাশের পর দাবি ও আপত্তি নিষ্পত্তি করার সময়ও নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। আশা করি কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ভোটের নির্ধারিত সময়ের আগে গেজেট চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে। এছাড়া, এবার ভোটকেন্দ্র যাচাই-বাছাইয়ে নির্বাচন কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
তিনি জানান, আগের নির্বাচনে ব্যবহার করা অবকাঠামোগুলো এবারও বাছাই করা হবে। সেক্ষেত্রে ভোটারদের অসুবিধা না হলে একই স্থাপনায় ভোটকক্ষের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া হবে। তাহলে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা সবকিছুতেই ভোটারদের সুবিধা হবে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রের সংখ্যা বেশি হবে না বরং একই জায়গায় থাকবে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, মহানগর ও জেলা পর্যায়ে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি থাকবে। উপজেলা পর্যায়ের ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ কমিটির প্রধান হবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, শিক্ষা অফিসাররা তার আওতাধীন এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত অবস্থান ও যাতায়াত সম্পর্কে বিশেষভাবে অবগত থাকেন। আর পুলিশ সুপার, ওসি যাতায়াত ব্যবস্থা ও সার্বিক নিরাপত্তা সম্পর্কে অবগত থাকেন। আর জেলা প্রশাসক ও ইউএনও সংশ্লিষ্ট এলাকার সরকারি ও নির্বাচন কমিশনের নানাবিধ কার্যক্রমের মুখ্য সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। তাই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের অফিসারদের সমন্বয়ে কমিটির মাধ্যমে ভোটকেন্দ্র স্থাপন কার্যক্রম অধিকতর সহজ ও সুষ্ঠু হবে।
নীতিমালায় যা বলা হয়েছে:
১. গড়ে তিন হাজার ভোটারের জন্য একটি ভোটকেন্দ্র, গড়ে ৫০০ জন পুরুষ ও ৪০০ জন নারী ভোটারের জন্য একটি ভোটকক্ষ নির্ধারণ করতে হবে।
২. অবশ্য ইভিএমে পুরুষ ভোটারের জন্য ৪০০ ও নারীর জন্য ৩৫০ জনে একটি করে ভোটকক্ষ স্থাপনের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এবার ইভিএমে ভোট হচ্ছে না।
৩. যাতায়াতের সুবিধা ও ভৌগলিক অবস্থান বিবেচনা করতে হবে; দুটি কেন্দ্রের মধ্যে তিন কিলোমিটারের বেশি দূরত্ব না হয়; কোনো ভোটারকে যেন কাছের ভোটকেন্দ্র অতিক্রম করে দূরের কোনো কেন্দ্রে যেতে না হয়। একটি কেন্দ্রের খুব কাছেই যেন অন্য কেন্দ্র স্থাপন করা না হয়।
৪. একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ইতোমধ্যে অনেক নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এছাড়া পুরোনো অনেক স্থাপনা সংস্কার করে কিংবা নিকটবর্তী নতুন স্থানে নতুন স্থাপনা নির্মিত হয়েছে।
৫. ভোটকেন্দ্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ভোট দেওয়ার সুবিধা বিবেচনা করে এসব নতুন স্থাপনায় কেন্দ্র নির্ধারণ করা যাবে।
৬. ভোটার সংখ্যা, ভোটকক্ষ, যাতায়াত সুবিধা, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও কেন্দ্রের অবকাঠামো বিবেচনা করে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব করতে হবে।
৭. তবে বিগত নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে গোলযোগ হয়েছে বা বর্তমানে কোনও সম্ভাব্য প্রার্থীর প্রভাবাধীন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানে কেন্দ্র নির্ধারণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।
৮. প্রয়োজনে তাদের নামে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানগুলোয় যতদূর সম্ভব কেন্দ্র স্থাপনে বিরত থাকবে হবে। বিকল্প প্রতিষ্ঠান না থাকলে নিবিড় তদারকি ও আইন শৃঙ্খলাকারী বাহিনীর নিয়োগ পর্যাপ্ত হতে হবে।
৯. বিগত সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করা হয়েছে এমন কেন্দ্রগুলোয় সু-ব্যবস্থা বহাল থাকলে আগে ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠানগুলোই ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা উত্তম হবে।
১০. ভোটকেন্দ্র স্থাপনে প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, অসুস্থ, গর্ভবর্তী, তৃতীয় লিঙ্গ ও নারী ভোটারদের ভোটদানে অগ্রাধিকার বিবেচনায় রাখতে হবে।