জালিয়াতি মামলায় দেবহাটার প্রতারক আবুল বাশার ফের পুলিশের খাঁচায় বন্দি
দেবহাটা প্রতিনিধিঃ
বিশ লাখ টাকার চেক জালিয়াতি মামলায় দেবহাটার চিহ্নিত প্রতারক ও জালিয়াত চক্রের অন্যতম হোতা আবুল বাশার (৪০) কে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার ভোররাতে দেবহাটা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করেন। প্রতারক আবুল বাশার উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের জিয়াদ আলীর ছেলে। ঘোনাপাড়া রহমানিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার সুপার আব্দুস সাত্তারকে কৌশলে পদ থেকে হটিয়ে নিজেই সুপারের চেয়ারে আসীন হয়ে নিয়োগের নামে ডজন খানেক চাকুরি প্রার্থীর কাছ থেকে অন্তত অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে প্রতারণা, জেডিসি ও দাখিল পরীক্ষায় ভুয়া পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসানো, শিক্ষক নিবন্ধনের জাল সনদ বিক্রিসহ অসংখ্য জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে আবুল বাশারের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ম্যারেজ রেজিষ্ট্রারের দায়িত্বে থাকাবস্থায় অবৈধ অর্থের বিনিময়ে হরহামেশা বাল্যবিবাহ সম্পাদন, পাত্র-পাত্রী বা স্বাক্ষিদের স্বাক্ষর জাল করে নকল কাবিননামা সৃষ্টি ও সরবরাহ করে পাত্রপক্ষ বা পাত্রীপক্ষকে মামলায় ফাঁসানো প্রতারক আবুল বাশারের নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপারে পরিনত হয়েছিল। গেল বছর আবুল বাশারের ম্যারেজ রেজিষ্ট্রি অফিসে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে জাল কাগজপত্র, একাধিক ভুয়া রেজিষ্ট্রি বই ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন দপ্তরের সীলমোহরসহ তাকে আটক করে দ্বন্ড দেন তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী।
আবুল বাশারের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রে চাকুরি হারিয়ে সর্বশান্ত ঘোনাপাড়া রহমানিয়া মহিলা দাখিল মাদরাসার সাবেক সুপার ও জগন্নাথপুর গ্রামের গোলাম মোস্তফার ছেলে মাওলানা মো. আব্দুস সাত্তার জানান, ২০০৩ সালের ২২ অক্টোবর মাদরাসাটিতে সুপার পদে যোগদান করেছিলেন তিনি। যোগদানের একমাস পর আবুল বাশারকে ওই মাদরাসার সহ সুপার পদে তিনি নিয়োগ দেন। কিন্তু নিয়োগের কয়েক বছর যেতে না যেতেই সম্পূর্ন বিধি বর্হিভূতভাবে তাকে মাদরাসা থেকে তাড়িয়ে দিয়ে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে এবং রেজুলেশন জালিয়াতির মাধ্যমে আবুল বাশার নিজেই মাদরাসার সুপার বনে যান। গেল বছর মাদরাসাটি এমপিও ভুক্ত হওয়ার সময় তাকে স্বপদে বহাল করার কথা থাকলেও তা না করে সুপার পদে আবুল বাশার নিজেই এমপিওভুক্ত হন। দীর্ঘদিন যাবৎ বিনা বেতনে মাদরাসায় শিক্ষকতা করা ব্যাক্তিদেরকে গেল বছর মাদরাসাটি এমপিওভুক্ত হওয়ার সময় কৌশলে চাকুরিচ্যুত করে প্রতি পদে ৮/১০ লাখ টাকা হারে ঘুষ গ্রহণ, শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ জালিয়াতি করে নিজের আত্মীয় স্বজন ও অযোগ্য ব্যাক্তিদের নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। তাছাড়া চাকুরি দেয়ার আশ্বাসে বহু ব্যাক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণাও করেছেন আবুল বাশার। এনিয়ে ভুক্তভোগীরা উচ্চ আদালতে রীট পিটিশন দায়ের করেছেন বলেও জানান সাবেক সুপার আব্দুস সাত্তার।
আবুল বাশারের প্রতারণার শিকার ঢেপুখালী গ্রামের মোসলেম গাজীর ছেলে মোকছেদুল আলম বলেন, ২০২২ সালের এপ্রিলে মাদরাসার গ্রন্থাগারিক কাম ক্যাটালগার পদে এবং তার এক আত্মীয়কে অপর আরেকটি পদে নিয়োগ দেয়ার আশ্বাসে ২০ লাখ টাকা ধার নেন সুপার আবুল বাশার। কিন্তু মাদরাসা এমপিওভুক্তির সময় তাদেরকে নিয়োগ না দিয়ে অপর দুজনকে নিয়োগ দেন আবুল বাশার। নির্ধারিত ছয়মাসের সময় শেষে টাকা ফেরত চাইলে মোকছেদুল আলমের সাথে একের পর এক তালবাহানা করতে থাকে ওই প্রতারক। শেষমেষ মোকছেদুল আলমকে ২০ লাখ টাকার একটি চেক দিয়েছিলেন আবুল বাশার। কিন্তু অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় আবুল বাশারের দেয়া সেই চেকও ডিজঅনার করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। এনিয়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়ে বিষয়টি সুরাহা না হওয়ায় বাধ্য হয়ে সাতক্ষীরার আদালতে প্রতারক আবুল বাশারের বিরুদ্ধে একটি জালিয়াতি মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী মোকছেদুল আলম। সর্বশেষ ওই মামলার বিচারার্থে আবুল বাশারের বিরুদ্ধে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে দেবহাটা থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে বলে জানিয়েছেন দেবহাটা থানার ওসি মো. বাবুল আক্তার।