শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজা প্রাপ্ত আরো এক আসামির চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুত্যু
রঘুনাথ খাঁ,সাতক্ষীরাঃ
শেখ হাসিনার গাড়ির বহরে হামলা ঘটনায় তিনটি মামলার ১৮ বছর তিন মাসের সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিদার মোড়ল ( ৫৭) মারা গেছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত্যুর বিষয়টি মৃতের ভাই আব্দুল হান্নান,স্থানীয় জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান বিশাখা সাহা ও সাতক্ষীরা জেলার কারাগারের জেলর মো: মামুনুর রশিদ নিশ্চিত করেছেন।
মৃত বিদার মোড়ল সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের সরসকাটি ক্ষেত্রেপাড়া গ্রামের তমেজউদ্দিন মোড়লের ছেলে ও কলারোয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য ।
কলারোয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত ) আবুল কালাম আজাদ জানান, সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনার বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র আইনের দুইটি পৃথক মামলায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনের যাবজ্জীবন কারাদÐ দেন আদালত। মামলার আরও ৪৪ জন আসামিকে সাত বছর করে কারাদন্ড দেওয়া হয়। সাতক্ষীরার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক বিশ^নাথ মন্ডল ১৮ এপ্রিল সোয়া দশটায় এ রায় প্রদান করেন। এ দুইটি মামলায় প্রত্যেকটিতে বিদার মোড়লের সাত বছর করে সাজা হয়।
তিনি আরও বলেন, কলারোয়ায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলার একটি অংশে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রæয়ারি সকাল সাড়ে দশটার দিকে রায় দেন মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুমায়ুন কবীর। ওই মামলায় হাবিবুল ইসলামসহ ৫০ নেতা-কর্মীকে ৪ থেকে ১০ বছর কারাদÐাদেশ দেওয়া হয়। এ মামলায় বিদার মোড়লের চার বছর তিন মাসের সাজা হয়।
সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে জেলর মো: মামুনুর রশিদ জানান, ২০১৬ সাল থেকে শেখ হাসিনার গাড়িবহর হামলা মামলার আসামি হিসেবে সাতক্ষীরা কারাগারে আটক ছিলেন। পরবর্তীতে তার তিনটি পৃথক মামলা ১৮ বছর তিন মাসের কারাদন্ড হয়। গত এপ্রিল মাসে তার ডান পায়ের পায়ের আঙুলে ঘা দেখা দেয়। পরবর্তীতে ওই ঘা প্রবল আকার ধারণ করে গ্যাংগ্রিন হলে তাকে ২৭ এপ্রিল সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়ে। উন্নতি না হলে তাকে ৩০ এপ্রিল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পরে ১৬ মে সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে মারা যান তিনি।
মৃত বিদার মোড়লের ভাই সরসকাটি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আব্দুল হান্না জানান, ময়না তদন্ত শেষে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে বিদারের লাশ বুঝে নেন তারা। রাত ১২ টার দিকে সরকারি এম্বুলেন্সে করে বিদারের লাশ বাড়িতে আনা হয়। বৃহষ্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টায় সরসকাটি প্রাথমিক বির্দ্যালয়ের মাঠে নামাজে জানাজা শেষে সকাল ১০টায় বিদারের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
সাতক্ষীরা আদালতের সরকারি অতিরিক্ত কৌশুলী ফাইমুল হক কিসলু বলেন, তিনটি মামলায় ৫০ জন আসামির মধ্যে বিদার মোড়লের আগে আরও দুইজন কারাগারে মারা গেছেন। বর্তমানে ৪৭ জন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মধ্যে ৩৯ জন কারাগারে রয়েছেন। আট জন পলাতক রয়েছেন।
পুলিশ ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার এক নারীকে দেখতে ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে যান। সেখান থেকে যশোরে যাওয়ার পথে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গাড়িবহরে হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারী ব্যক্তিরা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গুলি করেন এবং বোমা বিস্ফোরণ ঘটান। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান শেখ হাসিনা। এ সময় বহরে থাকা ১৫ থেকে ২০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
হামলায় শেখ হাসিনার গাড়িবহরে থাকা ১২ নেতা-কর্মী আহত হন। সাতক্ষীরা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম ও তাঁর নেতা-কর্মীরা এ হামলার পেছনে ছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোসলেম উদ্দীন বাদী হয়ে যুবদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ৭০ থেকে ৭৫ জনকে আসামি করে কলারোয়া থানায় মামলা করতে গেলে মামলাটি রেকর্ড করেনি পুলিশ।
এ ঘটনার ১২ বছর পর ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিমের নির্দেশে কলারোয়া থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়। পরবর্তীতে কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে পৃথক তিনটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন।