সংবাদ প্রকাশের জেরে বাবুর নির্দেশে নাদিমকে হত্যা: র্যাব
সংবাদ প্রকাশের জেরে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নির্দেশে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
র্যাব জানায়, সম্প্রতি বাবুর অপকর্ম নিয়ে বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রকাশ করেছিলেন সাংবাদিক নাদিম। এ নিয়ে বাবু তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। তাকে বিভিন্ন হুমকি দেওয়াসহ করেছিলেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও। কিন্তু সেসব কিছুই ধোপে টেকেনি। শেষমেষ ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার পরিকল্পনা করেন বাবু।
শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
মঈন জানান, ময়মনসিংহের সাইবার ট্রাইব্যুনাল বাবুর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলাটি খারিজ করে দেন। মামলা খারিজের বিষয়টি নিয়ে নাদিম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। এরপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন বাবু।
তিনি বলেন, পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জুন রাত আনুমানিক ১০টার দিকে ভুক্তভোগী সাংবাদিক নাদিম বাড়ি ফেরার পথে বকশীগঞ্জ বাজারের পাটহাটি এলাকায় বাবু তার সন্ত্রাসীদের নিয়ে নির্জন স্থানে ওৎ পেতে থাকেন। সাংবাদিক নাদিম তার সহকর্মীসহ মোটরসাইকেল যোগে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। পরে পেছন থেকে দৌড় দিয়ে বাবুর আরও কয়েকজন লোক এসে তাকে মারতে মারতে পাশের একটি অন্ধকার গলিতে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যান এবং এলোপাথাড়ি আঘাত করতে থাকেন।
তিনি জানান, ওই সময় প্রধান অভিযুক্ত চেয়ারম্যান বাবু ঘটনাস্থলের কাছে থেকে পুরো ঘটনার নেতৃত্ব দেন। সাংবাদিক নাদিমের সহকর্মী তাকে বাঁচাতে গেলে বাবুর সন্ত্রাসীরা তাকেও মারধর করে। এক পর্যায়ে ভিকটিম নাদিমের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে বাবু ও তার সন্ত্রাসী গ্রুপ দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পরের দিন ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক নাদিম মারা যান।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১৪ এর একটি আভিযানিক দল স্থানীয় র্যাবের সহযোগিতায় পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু, তার সহযোগী মনিরুজ্জামান মনির ওরফে মনিরুল, জাকিরুল ইসলাম ও রেজাউল করিম গ্রেপ্তার করে। তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে মঈন জানান, সাধুরপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর পরিকল্পনাতেই এ হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা ও নাদিমের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। ঘটনার পর থেকে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে গ্রেপ্তার এড়াতে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপনে চলে যান। সেখান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। বাবুর বিরুদ্ধে জামালপুরের বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
নাদিম হত্যায় ৪৭ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, বাকিরা অজ্ঞাত।
সবশেষ জানা গেছে, নাদিম হত্যা মামলার রেজাউল করিম নামে আরেক আসামিকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে নাদিম হত্যার মূল অভিযুক্ত বাবু চেয়ারম্যানসহ ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো।
নাদিম জামালপুরের বকশীগঞ্জে একাত্তর টেলিভিশনের সংবাদ সংগ্রাহক এবং নিউজ পোর্টাল বাংলা নিউজের প্রতিনিধি ছিলেন।