ভোট শুরুর আগে ইভিএম পরীক্ষা করে নেওয়ার আহ্বান সিইসির, পেশি শক্তির ব্যবহার হলে কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি
অনলাইন ডেস্ক:
নির্বাচনের দিন ভোট শুরুর আগে ইভিএম মেশিনগুলো ব্ল্যাঙ্ক কি না, সেটা পরীক্ষা করে নিতে প্রার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ভোট শুরুর আগে ইভিএমগুলো দেখানো হবে। আপনারা চেক করবেন ইভিএমগুলো ব্ল্যাঙ্ক কি না।
শনিবার রাতে বরিশাল নগরীর শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান তিনি।
বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন-উল আহসানের সভাপতিত্বে মতবিনিময়ের শুরুতে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগ-মতামত শুনতে চান। কয়েকজন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে ভোটারদের অর্থের প্রলোভন, মারধর ও হুমকির অভিযোগ করেন। তারা বহিরাগত রোধ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা, পেশি শক্তির ব্যবহার এবং কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান।
সাজতন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে ছয়জন সভায় উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে পাঁচজন বক্তব্য রাখেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ইভিএম নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে ব্যালটে ভোট দাবি করেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা চান। ইভিএমের সত্যতা তুলে ধরাসহ প্রতিটি কক্ষে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের দাবি জানান।
তবে ইভিএমে ভরসা-বিশ্বাস আছে এবং মানুষ ইভিএমে ভোট চায় বলে সভায় বক্তব্যে বলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের খোকন সেরনিয়াবাত। তিনি নির্বাচনের সার্বিক পরিবেশে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের বিভিন্ন অভাব-অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইভিএমে ওই ধরনের কোনো কারচুপি নাই। একটা কারচুপির সম্ভাবনা ছিল। সেটা হচ্ছে-ওইখানে গিয়ে জোর করে টিপ দিয়ে দেওয়া। আপনারা বলেছেন-সিসিটিভি। আমরা এই নির্বাচনে সিসি টিভির ব্যবহার করছি। সিসি টিভি দিয়ে আমরা গাজীপুর মনিটর করেছি। আপনারা ওয়ান থার্ড অব দ্যাট (বরিশাল আয়তনে তার তিন ভাগের একভাগ)। গাজীপুরের নির্বাচনে যিনি হেরেছেন, তিনিও আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেন নাই। যিনি জিতেছেন তিনিও কোনো অভিযোগ আগেও করেননি, পরেও করেননি। আমরা বারবার শোনার চেষ্টা করছিলাম, নির্বাচন কেমন হয়েছে। মিডিয়াকর্মী, যারা আছে তাদের বক্তব্যও আমরা বিভিন্ন মিডিয়ায় শুনছিলাম। তারা উল্লেখযোগ্য কোনো সহিংসতা, উল্লেখযোগ্য কোনো কারচুপি, উল্লেখযোগ্য কোনো অনিয়মের রিপোর্ট দিতে পারেননি।
তিনি আরও বলেন, আমরা কিন্তু দৃশ্যমান আচরণবিধি ভঙ্গগুলো দেখবো। রাত দুইটা-তিনটার সময় যদি টাকা বিতরণ হয়, আমার কাছে যদি কোনো ছবি না থাকে বা আপনারা যদি কোনো ছবি তুলে আনতে না পারেন, তাহলে আমাদের পক্ষে বিষয়গুলো আমলে নেওয়ার ইচ্ছে থাকলেও সেটা সম্ভব হচ্ছে না। এটা আপনাদের উপলব্ধি করতে হবে। আপনাদের আস্থা অর্জনের জন্য অবিশ্বাস, অনাস্থা এটা দূর করবেন। সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে-আমাদের সামর্থ্য কতটুকু? কিন্তু আন্তরিকতা নিয়ে, আমাদের সদিচ্ছা নিয়ে আপনাদের কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা উচিত নয়।
কাজী হাবিবুল আউয়াল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমরা অনিয়ম, মাস্তানি, পেশি শক্তির ব্যবহার কঠোরভাবে দমন করবো। অত্যন্ত কঠোরভাবে দমন করবো। কোনো প্রার্থীর কর্মী যদি অসদাচরণ করেন, সেই প্রার্থী কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবেন। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যদি কেউ বাধার সৃষ্টি করে, নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে যদি অপকর্ম করণে কেউ লিপ্ত হন, কেউ যদি চিহ্নিত হন, তাহলে কিন্তু তার বিরুদ্ধে এবং যার পক্ষে এটা করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে আইনত বাধ্য।
সিইসি বলেন, আমার সাবজেক্ট ম্যাটার হচ্ছে ভোটার। ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাবে, ভোট দেবে। কাকে ভোট দিলো, কে জিতলো, কে হারলো-এগুলো নিয়ে নির্বাচন কমিশন মাথা ঘামায় না। ঘামাবে না। কিন্তু যদি আমাদের কাছে অভিযোগ আসে-ভোটার সাধারণকে ভোট কেন্দ্রে যেতে দেওয়া হয়নি, ভোটার কেন্দ্রে যেতে পারেননি, তাদের ভোটাধিকার স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে দেওয়া হয়নি, ভোট কেন্দ্রের ভেতর মাস্তানরা ছিল-তাহলে কিন্তু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। সেটা প্রতিহত করার দায়িত্ব আপনারা যারা ভেতরে থাকবেন পোলিং এজেন্ট।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান। এছাড়া রেঞ্জ ডিআইজি মো. আক্তারুজ্জামান, মেট্রো পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম, পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির বক্তব্য রাখেন।