মুক্তিযোদ্ধা পিতার কবর গুড়িয়ে দেয়া দেখে অঝোরে কাদলেন ছেলে
নড়াইল প্রতিনিধিঃ
নড়াইল পৌরকবরস্থান। জেলার বিশিষ্ট সব মানুষের শেষ ঠিকানা। বুধবার(২৪মে) সকালে কবরস্থানে এসে বাবার কবরটি খুজছিলেন এড.আব্দুল মুকিত লাভলু। ৬৭ বছরের ভদ্রলোক তার বাবার কবরের ধংসাবশেষ দেখে হাউমাউ করে কাদলেন। বাবা সর্দার আ.সাত্তার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা।
এড.আব্দুল মুকিত লাভলু কাঁদতে কাঁদতে বলেন,এই ঘটনা বলার কোন ভাষা নেই আমার।কিভাবে একজন মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল এমনভাবে গুড়িয়ে দেয় মানুষ,এটা আমি কল্পনাও করতে পারি না।
তার মতো অনেকেই বাবা-মায়ের কবরের ধ্বংস দেখে কেদেছেন। নিজের কলেজপড়–য়া মেয়ের কবরটি না পেয়েও কেদেছেন বাবা দলিলউদ্দিন।
এইভাবে একই রকমভাবে একুশে পদকপ্রাপ্ত আফসার উদিন, যশোর ডিস্ট্রিক বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান মুন্সি ওয়ালিউর রহমান,শত মুক্তিযোদ্ধা ও বীরদের কবর। এদের ছেলে-মেয়েরা কবরস্থানে এসে দেখেন তাদের বাবা-মায়ের কবর ভেঙ্গে চূর্ন-বিচূর্ন করে দিয়েছে পৌরসভা।কেবল মাত্র এমপি মাশরাফির নানা-নানী এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আাসামী বঙ্গবন্ধুর সহচরর খন্দকার আ.হাফিজের কবরটি অক্ষত আছে। তাও কয়েকদিনের মধ্যে সরিয়ে সংস্কার কাজ করবে পৌর কর্তৃপক্ষ।
পুরো কবরস্থান পরিনত হয়েছে ধ্বংসস্তুপে। ২২ মে রাতে বুলডোজার দিয়ে পৌরমেয়রের উপস্থিতিতে কবরস্থান থেকে বরেন্য ব্যক্তি,মুকিযুদ্ধের সংগঠক,বীর মুক্তিযোদ্ধা,বিশিষ্ট সমাজসেবক ও রাজনীতিবীদ সহ সকলের কবরই এখন ধ্বংসস্তুপ। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ সহ নানা মহলে চলছে তোলপাড়। ২৩ মে সংস্দ সদস্য মাশরাফিও এ ব্যাপারে তারর পেজে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
মুক্তিযোদ্ধা বি এম রছিকুল ইসলাম ক্ষোভের সাথে বলেন,আমরা দেশ স্বাধীন করেছি,আমার বাবা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। স্বাধীন দেশে তাদের কবর ভাংগার সাহস কোথায় পান মেয়র এটা আমরা দেখে নেব।
ব্যবসায়ী রেজাউল আলম হুমকি দিয়ে বলেন,স্থানীয় সুধীজনের মতামত না নিয়ে এতবড় একটি কাজ করেছে পৌরমেয়র,এরপর আর কোন কাজ করতে আসুক পৌর মেয়র আমরা প্রস্তুত আছি।
সাবেক কাউন্সিলর মঞ্জুরুল কবীর নান্নু,তারেক হাসান,হুমায়ুন কবীর সহ বিশিষ্ট জনেরা বলেন,রাতের অন্ধকারে পৌর মেয়র চোরের মতো বলডোজার চালিয়ে আমাদের অনুভুতির উপর আঘাত করেছেন,এতবড় সাহস তিনি কোথায় পান? আন্দোলনের ঘোষনাও দেন প্রত্যেকে।
নড়াইল পৌরসভা সংস্কার কাজ হাতে নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ,বাধানো কবরসহ স্থাপনা সরিয়ে নতুন মাটি দিয়ে আর ড্রেন তৈরী করা হবে। নতুনভাবে স্থাপনা সহ সৌন্দবর্ধনের কাজ শুরু করা হবে। কয়েকমাস আগে থেকেই সেই প্রস্তুতি চলছে।
২২ মে রাতভর কবরস্থান ভাঙ্গার কাজ শেষ করেই পৌর মেয়র পৌরমেয়র ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার দাবী কবরস্থান সংস্কার জরুরী হয়ে পড়েছিলো। তাই নতুন কবর দেবার জায়গা তৈরী করতেই এটা করা হয়েছে।
নড়াইলের পৌরমেয়র আঞ্জুমান আরা বলেন,দিনে শুরু করে রাতপর্যন্ত লেগেছে এখানে কোন লুকোচুরি হয়নি। কয়েকদফা মাইকিং করেছি,ইমাম সহ মুসলিমদের মতামত নেয়া হয়েছে। এখানে আমার স্বামীর কবর আছে,আমাকেও এখানে আসতে হবে একদিন,আমি এমন কোন কাজ করবো না যেন আল্লার কাছে দায়ী থাকতে হয়।