বৈধতা স্বত্বেও মালয়েশিয়ায় বেওয়ারিশ হিসেবে জাসাস নেতার লাশ দাফন, দাফনের জন্য টাকা তুলে লুটপাটের অভিযোগ
অনলাইন ডেস্ক:
মালয়েশিয়ায় বৈধ কাগজ-পত্র থাকা স্বত্বেও বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে এক রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে। নিহত মোহাম্মদ শাওন কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দির গৌরীপুরের হাটচান্দিনা গ্রামের বাসিন্দা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ২৭ আগস্ট নিজ কর্মস্থল রেখে স্থানীয় চাইনিজ নাগরিকের ডাকে ছুটে কাজ করতে গিয়ে ৫ তলা ভবন থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন শাওন। ওই সময় দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাকে উদ্ধার করে কুয়ালালামপুর হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিসাধীন অবস্থায় এ বছরের ২রা মার্চ আইসিউতে মৃত্যু হয় তার। কিন্তু চলতি মাসের ১৫ তারিখ (১৫ এপ্রিল) বেওয়ারিশ লাশ হিসেবে দাফন করা হয় শাওনকে।
এর মধ্যে সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান সেই চাইনিজ নাগরিক। অন্যদিকে ব্যক্তিগত কাজে গিয়ে আহত হওয়ায় এর দায় নেয়নি শাওনের কোম্পানি। সাধারণত মালয়েশিয়ার হাসপাতালে কোনো বিদেশি নাগরিকের মৃত্যু হলে হাসপাতালের বকেয়া বিল পরিশোধ না হলে মৃতদেহ হস্তান্তর করা হয় না। তাহলে কিসের ভিত্তিতে হাসপাতালের বিল বকেয়া থাকার পরও এবং বৈধ কাগজ-পত্র থাকা স্বত্বেও শাওনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয় এমন প্রশ্ন তুলছেন প্রবাসীরা।
মোহাম্মদ শাওন মালয়েশিয়া বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। মালয়েশিয়া জাসাসের যুগ্ম আহ্বায়ক ও মালয়েশিয়া নবীন দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক বলে জানা যায়। শাওনের ফেসবুক আইডিতে ঘুরে দেখলেই বোঝা যায় দল ও রাজনীতির বিষয়ে কতটুকু সক্রিয় ছিলেন তিনি।
দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর থেকে মালয়েশিয়া বিএনপির সব নেতারা জানলেও মৃত্যুর পরেও নিজ দলের নেতাদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ অনেকেরই। মৃত্যুর পর লাশ দেশে পাঠানোর জন্য বেশকিছু টাকা কালেকশন করা হয়। মুখে মুখে খরচের হিসাব থাকলেও খাতা-কলমে তার কোনো হিসাব আছে কিনা তা নিয়ে আছে নানা সন্দেহ। মালয়েশিয়া বিএনপির শীর্ষ নেতারা এ নিয়ে একে অপরকে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ করছেন। এতে মালয়েশিয়া বিএনপি নেতা- কর্মীদের মাঝে চলছে ক্ষোভ। বিএনপির কর্মীরা বলেন, এমন দল করে লাভ কী? যখন মৃত্যুর পরে ওইসব নেতারা সামান্য কিছু টাকার জন্য একজন প্রবাসী কর্মীর লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে।
এ বিষয়ে মালয়েশিয়া জাসাস আহ্বায়ক শেখ আসাদুজ্জামান মাসুম বলেন, আমি হাসপাতাল সূত্রে জানতে পারি হাসপাতালের মোট বিল হয়েছিলো ৮১ হাজার ৭৪৩ রিঙ্গিত। এর মধ্যে ২২ হাজার তার ইন্স্যুরেন্স থেকে এবং ৯ হাজার রিঙ্গিত ক্যাশসহ (সম্ভবত প্রবাসীদের সহযোগিতায় উঠানো) মোট ৩১ হাজার রিঙ্গিত পরিশোধ করা হয়েছিলো। এ বিষয়ে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করলে এক কর্মকর্তা জানান, গতকাল দূতাবাস এ বিষয়ে জানতে পেরেছে। এ ছাড়া বৈধ ভিসাসহ মূল পাসপোর্ট দেখিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েও কীভাবে বেওয়ারিশ লাশ দাফন হলো সেই প্রশ্নও খোদ হাইকমিশনের এ কর্মকর্তার।
শেখ আসাদুজ্জামান মাসুম আরও জানান, দূতাবাস কিছুই জানে না বলে দাবি করলেও, শাওনের লাশ দাফনের আগেই দূতাবাসের কল্যাণ সহকারী মকসেদ আলীর হোয়াটসঅ্যাপে সকল কাগজ-পত্র পাঠানো হয়েছে।
শাওনের মা শিরিন বেগম বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস জানার পরও কোনো ধরনের সহায়তা করেনি। আমার ছেলের পাসপোর্ট ভিসা থাকার পরও বেওয়ারিশ হিসেবে মালয়েশিয়ায় দাফন হলো। মা হয়ে ছেলের মৃত মুখটাও শেষ দেখা দেখতে পেলাম না।