দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ: সাতক্ষীরার আশাশুনিতে ইউপি নির্বাচন পরবর্তী নৌকা সমর্থকদের উপর হামলা, মামলা ও জমি দখলকারিরা বেপরোয়া
নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের কাঁকড়াবুনিয়া গ্রামের নব্য আওয়ামী লীগার মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে এতিমখানার টাকা আত্মসাৎ, অন্যের ঘের দখল, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে নিজেদের ঘেরের বাসায় আগুণ দিয়ে প্রতিবাদকারিদের নামে মিথ্যা মামলা ও হামলার ঘটনায় দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ ও মানববন্ধন করেও প্রতিকার মিলছে না। ফলে ওই এলাকায় যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে বলে মনে করছেন বিশিষ্ঠজনেরা।
কাঁকড়াবুনিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সাত্তার গাজীর ছেলে সাইফুল ইসলাম লিটু জানান, গাজীপুর কুড়িগ্রাম আজিজিয়া ছিদ্দিকিয়া আলীম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের বাবা সোহরাব সরদার আশাশুনির উপজেলার ১৫২ নং তালিকাভুক্ত রাজাকার। গত বছরের ৫ জানুয়ারি ইউপি নির্বাচনে আবু হেনা শাকিলের নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট করায় আনারস প্রতীক নিয়ে জয়ী প্রার্থী দীপঙ্কর বাছাড় দীপুর লোকজন নিয়ে মিজানুর রহমান পরদিন তার বাড়িসহ ফারিকুল ইসলাম, আমিনুর রহমান বাবু, মোস্তাক আহম্মেদ ও রেজাউলের উপর হামলা করা হয়। তার উপর ও(লিটু) বাড়িতে একের পর এক হামলার ঘটনায় মিজানুর রহমান, তার ছেলে অহিদুজ্জামানসহ হামলাকারিদের বিরুদ্ধে তিনি বাদি হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করেন। উপর হামলার এ ছাড়া হামলার ভয়ে অনেকেই বাড়ি ছড়ে পালিয়ে যায়। দখল করা হয় আব্দুল আজিজ, খলিলুর রহমান ও আনিছুরের মাছের ঘের।
গাজীপুর কুড়িগ্রাম এতিমখানায় এতিম না থাকার পরও ভুয়া তালিকা তৈরি করে সরকারি টাকা উত্তোলন ও এতিমাখানার জমির বাবদ ১১ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৭ এপ্রিল দুর্ণীতি দমন কমিশনে অভিযোগ করেন খলিলুর রহমান গাজী। সাংবাদিকদের কাছে বক্তব্য দেওয়ায় তার ও সিরাজুল ইসলামের উপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় প্রভাবশালী আব্দুস সবুরের প্রভাবে থানা মামলা না নেওয়ায় আদালতে দায়েরকৃত মামলাদুটি সিআইডিতে তদন্তাধীন রয়েছে। ওই মামলার তদ্বিরে গত ৪ মে স্বশরীরে সিআইডি অফিসে আসেন প্রভাবশালী উপসচীব পরিচয়দানকারি একই গ্রামের আব্দুস সবুর।
গত ১১ এপ্রিল আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী শাহানারা বেগমের হাত পিটিয়ে ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় আদালতের নির্দেশে থানা গত ৩ মে মামলা(জিআর-১০৬/২৩) নেয়। মামলায় আব্দুস সবুরের ভাই নূর হোসেন ও তার ছেলে ইমনসহ কয়েকজনকে আসামী কর হয়। মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে তদন্তকারি কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক নবাব আলীর কাছে যান আব্দুস সবুর । একপর্যায়ে প্রতিবাদকারি ২৩ জনের নামে ২৩জনের নামে ১০৭ ধারায় মামলা করা হয়। গ্রাম্য শালিসে আব্দুল আজিজের ১৪৬ শতক জমি পাওনা হলেও জোরপূর্বক ১৮৪ শতক জমি দখল করে রেখেছেন মিজানুর রহমান।
কাঁকড়াবুনিয়া গ্রামের নির্যাতিত খলিলুর রহমান, শাহানারা বেগম, বাবুল আক্তার, মোস্তাক আহম্মেদ,হাসানুর রহমান, রমজান হোসেন, মাসুম বিল্লাহ, সাইফুল ইসলাম, রাজ্জাক তরফদার, গোলাম বারী সরদার ও বাবর আলী সরদার জানান, মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একের পর এক হামলা করা হলেও তিনি প্রতিপক্ষকে জব্দ করতে গত বছরের ১৮ জুন নিজের ঘেরের বাসায় নিজেরাই আগুন লাগিয়ে মাসুম বিল্লাহসহ ৫জনের নামে মামলা দায়ের করেন।
এ ছাড়া তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে সাধারণ ডায়েরী থেকে কমপক্ষে ৭টি নন জিআর মামলা করা হয়েছে। এ সবের প্রতিকার পেতে তারা গত বুধবার সাতক্ষীরা শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কের সামনে গ্রামবাসি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। জেলা প্রশাসকের কাছে করেছেন অভিযোগও। এতে প্রতিকার না পেলে তারা আরো বড় কর্মসুচি দেবেন।
এ ব্যাপারে আব্দুস সবুর নিজেকে একজন উচ্চ পদস্ত সরকারি কর্মকর্তা দাবি করে বলেন, একই গ্রামের মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার কারণে এলাকার একটি মহল তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অধিকাংশ অভিযোগ সত্য নয় বলে তিনি দাবি করেন।
তবে মিজানুর রহমানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।