ঘূর্ণিঝড় মোখায় বেশি ক্ষয়ক্ষতি টেকনাফ-কক্সবাজারে

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে চলে গেছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। গতকাল রোববার (১৪ মে) বিকেল ৩টার দিকে আঘাত করে সন্ধ্যায় উপকূল অতিক্রম সম্পন্ন করে ঘূর্ণিঝড়টি।

ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘যত তীব্রতায় আঘাত হানার কথা ছিল, আঘাতের তীব্রতা তত নয়। আঘাতের সময় সেন্ট মার্টিনে বাতাসের গতিবেগ ১৪৭ কিলোমিটার ছিল বলে জানিয়েছে আবহওয়া অধিদপ্তর।’

ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানে ভাটার সময়। দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুটের বেশি উচ্চতায় প্লাবিত হয়েছে। সারা দেশে হতাহতের বড় কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি, ফসল ও গবাদি পশুর ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার মোখায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সর্বাধিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেন্ট মার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান রোববার বিকেল ৫টার দিকে বলেন, “বাতাসের গতিবেগের তীব্রতায় স্থাপনাগুলো যেন কেঁপে কেঁপে উঠছিল। সাগরে তীব্র ঢেউ ও পানির উচ্চতা বেড়েছে। সেখান থেকে মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া তিন হাজার বাসিন্দা টেকনাফে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।’

এদিকে টেকনাফের বাসিন্দা রাসেল আহমেদ বলেন, ‘আমার কাছে যে খবর আছে, তাতে কিছু মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যাননি। তারা তাদের বাড়িঘর, গবাদি পশু ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চান না। প্রচুর বাড়িঘর উড়ে গেছে। গবাদি পশু ভেসে গেছে।’

সেন্ট মার্টিনের পর টেকনাফের মোখার আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি ছিল। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘৩০ হাজার মানুষকে তারা আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়েছেন। মোট আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১০৬টি। তবে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিছু বাড়ি-ঘর ও গাছপালা উড়ে গেছে। জনপদে জলোচ্ছ্বাস হয়নি।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান সন্ধ্যা ৬টার দিকে বলেন, “কোনো হতাহতের খবর আমরা পাইনি। প্রাথমিক তথ্য যা পেয়েছি, তাতে এ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার টেকনাফসহ ভিন্ন এলাকায় কাঁচা ও আধাপাকা দুই হাজারের মতো ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হজারের মতো ঘরবাড়ি। তবে গবাদি পশুর হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি।”

সন্ধ্যায় মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি যাওয়া শুরু করেছেন জানিয়ে আবু সুফিয়ান বলেন, ‘দুই লাখ ৪০ হাজার লোককে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে পেরেছি। পুরো জেলায় আমরা সব মিলিয়ে ৬০০ আশ্রয়কেন্দ্র খুলি। এর ধারণ ক্ষমতা ছয় লাখ মানুষ।’

কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন। তারাও আতঙ্কে ছিলেন। শরাণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন বলেন, “রোহিঙ্গাদের কিছু ঘর উড়ে গেছে। তাদের ক্যাম্পের খোলা জায়গায় যেসব স্থাপনা আছে, সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। অধিকাংশই ক্যাম্পে যার যার ঘরে আছেন। এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা আহত-নিহতের খবর পাওয়া যায়নি।’

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, “জেলার বাঁশখালী উপজেলায় ১১০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৫ হাজার ১৪৩ জন, সন্দ্বীপ উপজেলায় ১৬২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৮৮৫ জন, আনোয়ারা উপজেলায় ৩৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে পাঁচ হাজার ২৮০ জন, সীতাকুণ্ড উপজেলায় ৬২টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক হাজার ২৮৯ জন, কর্ণফুলী উপজেলায় ১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২০০ জন এবং মিরসরাইয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০ জন আশ্রয় নিয়েছেন। এসব উপজেলায় কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আহত বা নিহতের কেনো খবর পাওয়া যায়নি।”

এদিকে ঝড়ে চট্টগ্রামের গভীর সমুদ্রে একটি এলএনজি স্টেশন ভেসে গেছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ সংকট। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দুই-তিন দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

দেশের উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনায় মোখার প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি হলেও তা খুব বেশি নয় বলে জানা গেছে। এসব এলাকায় কাঁচা বাড়ি-ঘর, গবাদি পশু ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, “ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র টেকনাফ থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিক দিয়ে গেছে সেজন্য তীব্রতা কম এবং বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। আমরা মিয়ানমারের সিটুয়ে শহরের ছবি দেখেছি। সেখানে ইলেট্রিক পোল ও বাড়িঘর উড়ে গেছে। সেন্ট মার্টিন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে সাত লাখ ৫০ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় তো চলে গেছে। এখন মানুষ বাড়ি ঘরে যাবে। তারপর ক্ষয়ক্ষতি দেখে পরবর্তী পুনর্বাসন কাজ শুরু হবে।’

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)