নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনী: কালিগঞ্জের সাংবাদিক হাফিজকে হোটেলে ডেকে এনে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও চিত্র ধারণ

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপাজেলার বাজারগ্রাম রহিমপুরের সাংবাদিক অবঃ সেনা সদস্য হাফিজুর রহমানকে নিউজের ভিডিও চিত্র দেওয়ার কথা বলে ২৬ এপ্রিল রাতে শহরের বৈশাখী হোটেলে ডেকে এনে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও চিত্র ধারণের নেপথে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর কাহিনী।

সরেজমিনে সোমবার দুপুরে কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মুকুন্দমধুসুধনপুর গ্রামে গেলে আজিবর রহমান, সামছুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, ১৯৮৯ সালের শেষের দিকে তাদের গ্রামের আছের আলী খাঁ’র মেয়ে জাহানারা খাতুনের সঙ্গে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের খলিশাবুনিয়া গ্রামের মিজানুর রহমানের বিয়ে হয়। ১৯৯১ সালের ১১ মার্চ তাদের সন্তান শারমিন আক্তার রিমার জন্ম হয়। এর দুই বছর না যেতেই জাহানারা খাতনি তার ভাসুরের ছেলে গোলাম মোস্তফার হাত ধরে পালিয়ে বাপেরা বাড়ি[তে এসে স্বামী মিজানুরকে তালাক দেন। গোলাম মোস্তফা আছের আলী খাঁ’র বাড়িতে ৫ বছর থাকার পর জাহানারাকে না বলে চলে যান। তিনি পরে আর ফিরে আসেননি।

তারা আরো জানান, শারমিন আক্তার রিমার সঙ্গে কালিগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের মৃত মনো মোড়লের ছেলে এসার আলী মোড়লের বিয়ে হয়ে। বিয়ের বছর না ঘুরতেই শারমিন নানার বাড়িতে ফিরে এসে এসারকে তালাক দেন। পরে মুকুন্দমধুসুধনপুর গ্রামের মোহর আলীর ছেলে নাজিমউদ্দিনের সঙ্গে শারমিন বিয়ে করে। সেখানে তার সৌরভ হোসেন নামে এক সন্তান হয়। বর্তমানে সে চৌমুহুনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে পড়ে। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি নাজিমউদ্দিনকে তালাক দেওয়ার কয়েক মাস পর একই গ্রামের রাজ্জাক মোড়লের ছেলে মোমতাজুলের সঙ্গে শারমিনের বিয়ে হয়। বিয়ের বছর না ঘুরতেই মমতাজুলকে তালাক দেয় শারমিন। এরপর একই গ্রামের এলাহী বক্স গাজীর ছেলে আব্দুল কাদেরের সঙ্গে অনৈতিকভাবে ঘোরাফেরার ঘটনায় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে স্থানীয়রা অবহিত করেন। তিনি প্রমাণ ছাড়া কিছু করা যাবে না বলায় গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে রামনগর মোড়ে মোটর সাইকেলে থাকা অবস্থায় কাদের ও শারমিনকে ধরে গণধোলাই দেয় স্থানীয় জনগন। পরদিন শারমিন ওইসব ছেলেদের নামে থানায় অভিযোগ করলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশে উপপরিদর্শক নকীব পান্নু ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের চৌমুহুনী মোটর সাইকেলের শোরুমে বসাবসি করেন। সেখানে কাদের আর কখনো শারমিনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবেন না বলায় বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়। এরপর ও কাদেরে সঙ্গে শারমিনের সম্পর্ক রাখার একপর্যায়ে গত বছরের আগষ্ট মাসে আব্দুল কাদেরকে বিয়ে করে ওই বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের বিবাহ রেজিষ্টারের মাধ্যমে কাদেরকে তালাক দেয় শারমিন। এর আগে একে অপরের আপত্তিকর ছবি সংগ্রহ করে তারা। এ ছাড়া ওয়ান টাচ ওয়ান থ্রি-পিচ এর অনেক খবরই এলাকাবাসীর মুখে মুখে। আয়ের উৎস্য হিসেবে বিয়ের নামে বøাকমেইলিং করাটা শারমিনের পেশা হয়ে দাঁড়ায়।

অপরদিকে আব্দুল কাদের প্রথম জীবনে তারালী ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া গ্রামের সুশীলনের এক নারী কর্মীর সাথে বিয়ের প্রলোভান দেখিয়ে সখ্যতা গড়ে তোলে। তাকে এড়িয়ে আশাশুনির সোদকোনা গ্রামে বিয়ে করতে গেছে খবর পেয়ে ওই সুশীলন কর্মী সেখানে হাজিহর হলে বিয়ে বন্ধ হয়। তাকে আটক রাখা হলে বিষ্ণুপুরের আওয়ামী লীগ নেতা শেখ রিয়াজউদ্দিন তার দুলাভাই আশাশুনি সদরের ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম হোসেনকে দিয়ে কিছু টাকা দিয়ে কাদেরকে ছাড়িয়ে আনেন। যদিও সুশীলনের ওই নারী কর্মী তাকে আর বিয়ে করতে না চাওয়ায় পরে ওই সোদকোনার ওই মেয়ের সাথে কাদেরের বিয়ে হয়। আব্দুল কাদের কখনো জামায়তের রাজনীতি আবার কখনো জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানান তারা। তবে তার বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা নেই দাবি করে তারা বলেন, সম্প্রতি ঋণ খেলাপীর দায়ে দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ডিফলটার হওয়ায় পাল্টা একটি ঋণদান সংস্থার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছে আব্দুল কাদের। বর্তমানে মামলাটি সাতক্ষীরা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মহসিন আলীর কাছে তদন্তাধীন রয়েছে।

স্থানীয়রা আরো জানান, শারমিন ও কাদেরের পৃথক আপত্তিকর ভিডিও সাংবাদিক হাফিজুর রহমানের আয়ত্তে আসার বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এক আলোচিত জাপা মনোনীত মহিলা ইউপি চেয়ারম্যানের পরামর্শে কাদের তালাক দেওয়া শারমিনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে। এ কাজে তাদেরকে সহযোগিতা করে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাংগঠণিক সম্পাদক মানবাধিকার কর্মী ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম আলী হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামী হাফিজুর রহমান শিমুল। ২০১৩ সালে কালিগঞ্জের সামাদ স্মৃতি সংঘের মাঠে বিএনপি জামায়াতের সরকার বিরোধী আন্দোলনে অনুষ্ঠান পরিচালনায় অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতা আবু তালেব সরদার, যুবলীগ নেতা ছিদ্দিক শেখ এর বাড়িতে হামলা লুটপাট ও ভাঙচুরের মামলার আসামী হাফিজুর রহমান শিমুল তার প্রতিপক্ষ সাংবাদিক হাফিজুর রহমানকে কৌশলে ফাঁদে ফেলতে কাদের ও শারমিনকে নানাভাবে পরামর্শ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে শারমিন তার কাছে থাকা কাদেরের ভিডিও সাংবাদিক হাফিজকে দেওয়ার নাম করে হোটেল বৈশাখীতে ডেকে আনে। সেখানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা কাদের ও তারসহযোগিরা হোটেলে ঢোকা মাত্র হাফিজকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিবস্ত্র করে ফেলে। তারপর কাদের ও শারমিন হাফিজের উপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এ সময় তারা নির্যাতন ও বিবস্ত্র করার ৪১ মিনিটের ভিডিও চিত্র ধারণ করে। পরে পরিকল্পিতভাবে তালাক দেওয়া স্ত্রীকে নিজের স্ত্রী পরিচয়ে তাকেও ব্লাকমেইল করে অনৈতিক সম্পর্কে বিষয়টি এড়িয়ে যেয়ে ২৯০ ধারার মামলা না দিয়ে হাফিজ ও শারমিনের বিরুদ্ধে পর্ণগ্রাফি আইনে মামলা দেয় কাদের। মামলার আগেই হাফিজকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও চিত্র হাফিজুর রহমান শিমুল, ইয়ারব হোসেন, আব্দুল সালাম, আরিফ হোসেনসহ কয়েকজনের মাধ্যমে সোসাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয়।

হাফিজকে পরিকল্পিত নির্যাতনের বিষয়টি সাংবাদিক ও সুশীল সমাজেরজ নেতৃবৃন্দ জানতে পেরে রবিবার প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেন।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)