সাতক্ষীরায় শেখ হাসিনার গাড়ির বহরে হামলার অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের দুইটি মামলায় সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজের যাবজ্জীবন ও ৪৪ জনের সাত বছর করে কারাদন্ড
নিজস্ব প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের পৃথক দুটি মামলায় জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ চারজনের যাবজ্জীবন সশ্রমকারাদণ্ড ও বাকী ৪৪ জনের সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুটি মামলার একই রায় পৃথক পৃথকভাবে চলবে। সাতক্ষীরার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডল মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টায় এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।
মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৪৮ জনের মধ্যে ১৩ জন পলাতক রয়েছেন।
এদিকে মামলার রায় উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা কারাগার থেকে ৩৪জন আসামীকে স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল -৩ এর কাঠগোড়ায় হাজির করানো হয়। এ ছাড়া জামিনে থাকা অ্যাড. আব্দুস সাত্তার ব্যতীত অ্যাড. আব্দুস সামাদ, ইয়াছিন, কামরুল ও শেলী আদালতে হাজিরা দেননি। সব মিলিয়ে এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ১৩ জন পলাতক রয়েছে।
সকাল সোয়া ১০টায় বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডল রায় পড়ে শোনান। রায়ে বলা হয় অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের এফ ধারায় বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, রঞ্জু ও পলাতক আসামী আব্দুল কাদের বাচ্চু, রিপন প্রত্যেককে জ্বজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। অপর ৪৪জন আসামীর প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হলো। এ ছাড়া বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের তিন ধারায় বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, রঞ্জু ও পলাতক আসামী আব্দুল কাদের বাচ্চু, রিপন প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। অপর ৪৪জন আসামীর প্রত্যেককে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হলো।
রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড, মোহাম্মদ হোসেন, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. সৈয়দ জিয়াউর রহমান প্রমুখ।
আসামীপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২), অ্যাড. মিজানুর রহমান পিন্টু, অ্যাড. শাহানারা বকুল প্রমুখ।
এ রায়ে খুশী বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ।
তবে আসামীপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. শাহানার বকুল বলেন, এ রায়ে তারা খুশী নন। পূর্ণাঙ্গ রায়ের কাগজ হাতে পেলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে রায় শোনার পর আসামীপক্ষের স্বজনরা আদালত চত্বরে বিক্ষোভ দেখানোর সময় পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে বিএনপি নেতা মমতাজুল ইসলাম চন্দন, মন্টুসহ চারজনকে আটক করে। তবে পুলিশ এ বিষয়ে কোন কথা বলতে চায়নি।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগষ্ট সকাল ১০টার দিকে তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদী গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার উপর
জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও তৎকালিন সাংসদ হাবিবুল ইসলামের হাবিব ও বিএনপি নেতা রঞ্জুর নির্দেশে বিএনপি ও যুবদলের নেতা কর্মীরা দলীয় অফিসের সামনে একটি যাত্রীবাহি বাস(সাতক্ষীরা-জ-০৪-০০২৯) রাস্তার উপর আড় করে দিয়ে তার গাড়ি বহরে হামলা চালান। এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, সাংবাদিকসহ ১০ জনকে মারপিট করা হয়।
এ ঘটনায় কলারোয়া থানা মামলা না নেওয়ায় ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমাণ্ডার মোসলেমউদ্দিন বাদি হয়ে ২৭ জনের নাম উলেখসহ অজ্ঞাতনামা ৭০/৭৫ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ঘটনা সঠিক নয় বলে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত মামলা খারিজ করে দিলে বাদি জজ কোর্টে রিভিশন করেন। সেখানেও খারিজ হয়ে যায়। হাইকোর্ট ২০১৩ সালে ওই মামলা আমলে নেওয়ার নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে এসে পৌঁছায়। ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর শুনানী শেষ অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ওই দিনই মামলাটি থানায় রেকর্ড হওয়ার পর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) শফিকুর রহমানকে তদন্তকারি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে সাড়ে ছয় মাস পর ২০১৬ সালের ৪ মে তিনি আদালতে ৫০ জনের নামে তিনটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এরমধ্যে সিআরপি ১৫১/১৫ নং মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্র“য়ারি চার্জশীটভুক্ত ৫০জনকে চার থেকে ১০ বছর মেয়াদে সাজা দেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ হুমায়ুন কবীর।
অপরদিকে সাতক্ষীরার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল -৩ এ মামলার অপর দুটি অংশে অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনের এসটিসি ২০৭/১৫, ২০৮/১৫ এর মামলায় ১৫ জন সাক্ষী দেন। স্বাক্ষী চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষে অবস্থানকারি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত এটর্ণি জেনারেল এসএম মুনিরকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফের সদর থ্নাার সাধারণ ডায়েরীর তদন্তে বিএনপি নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ১০জনের বিরুদ্ধে নন জিআর মামলা দায়ের করা হয়। যাহা আজো চলমান।
১২ এপ্রিল যুক্তিতর্ক শেষে আজ মঙ্গলবার সাতক্ষীরার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডল রায় এর জন্য দিন ধার্য করেন। এ দুটি মামলায় সম্প্রতি ইচ্চ আদালত থেকে অ্যাড. আব্দুস সাত্তার, অ্যাড. আব্দুস সামাদ, কামরুল ইসলাম ও শেলী জামিনে মুক্তি পান। আজ অ্যাড. আব্দুস সাত্তার ব্যতীত বাকী চারজন আদালতে হাজিরা দেননি। ফতে সাজাপ্রাপ্ত ৪৮ জনের মধ্যে ১৩ জন পলাতক রয়েছে।