তালায় তালাকপ্রাপ্ত নারীর বিষপানে আত্মহত্যা
রঘুনাথ খাঁঃ
হালিমা খাতুন নামের এক তালাক প্রাপ্ত নারীর বিষপানে মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন দুধলী গ্রাম
থেকে পুলিশ মৃতের লাশ উদ্ধার করেছে।
মৃত হালিমা খাতুন (২৪) সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানাধীন খলিশখালি ইউনিয়নের দুধলী গ্রামের আব্দুল খালেকের মেয়ে।
পাটকেলঘাটা থানাধীন দুধলী গ্রামের আব্দুল খালেক জানান, সাড়ে তিন বছর আগে
তার মেয়ে হালিমার সঙ্গে খুলনার গিলেতলার মফিজুল ইসলামের বিয়ে হয়। এক বছর পর মেয়ে
সন্তান জন্মগ্রহণের পর হালিমাকে তালাক দেয় স্বামী। এরপর মেয়েকে নিয়ে সে বাপের বাড়িতে চলে আসে। এক বছর আগে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাছখোলা গ্রামের মহিদুলের সঙ্গে হালিমার বিয়ে হয়। বিয়ের এক মাস না যেতেই মহিদুল জানতে পারে তার স্ত্রী ছয় মাসের অন্তঃস্বত্বা। একারণে সে হালিমাকে তালাক দেয়। এরপর হালিমা বাপের বাড়িতে থাকতো।
আব্দুল খালেক আরো জানান, প্রথম তালাকের পর বাপের বাড়িতে থাকাকালিন হালিমার
সাথে প্রতিবেশি আবু বক্কর গাজীর ছেলে দুই সন্তানের জনক সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে
দেড় বছর আগে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে বলে জানতে পারেন তিনি। একপর্যায়ে বিয়ের
প্রতিশ্রতিতে এক বছর আগে থেকে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলায় হালিমা ছয় মাসের
অন্ত্বঃসত্বা হয়ে পড়ে। মহিদুলের সঙ্গে বিয়ের আগেই সাদ্দামের কারণে হালিমা
অন্ত্বঃস্বত্বা হয় মর্মে গত বছরের ১৫ জুন বিষয়টি তিনি জানতে পেরে সাদ্দাম ও তার
পরিবারের সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেন। সাদ্দাম তাকে বিয়ে করার নামে টালবাহানা
করতে থাকে। এ নিয়ে গ্রাম্য শালিসে হালিমাকে বিয়ে করার জন্য বলেন ইউপি সদস্য
আসাদুজ্জামান গাজী। একপর্যায়ে শালিস না মানায় তিনি(খালেক) বাদি হয়ে গত
বছরের ২০ জুন পাটকেলঘাটা থানায় সাদ্দামের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩
সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। এ
মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সাদ্দাম প্রায় চার মাস জেল হাজতে ছিল। জামিনে মুক্তি পেয়ে
সাদ্দাম তাকে ও তার মেয়ে হালিমাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি ধামকি দিয়ে
আসছিল। এ হুমকি ধামকি সহ্য করতে না পেরে হালিমা শনিবার ভোরে নিজের ধরের মধ্যে
বিষ পানে আত্মহত্যা করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। বর্তমানে হালিমার শেষ মেয়ে
সন্তানের বয়স আড়াই মাস।
এ ব্যাপারে সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন,
হালিমার কোন সামজিক সম্মান নেই। তাকে পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ মামলায় জেল খাটানো
হয়েছে। মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দেওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, এবারও
তাকে নতুন মামলা দিয়ে ফাঁসানো হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
পাটকেলঘাটা থানার উপপরিদর্শক জাহিদ হোসেন জানান, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে হালিমার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তার শরীরে কোন আঘাতের চিহ্ন নেই বলে তিনি জানান।পাটকেলঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাঞ্চন কুমার রায় জানান, এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। হালিমাকে ধর্ষণের অভিযোগে সাদ্দামের বিরুদ্ধে থানায় একটি
মামলা আছে বলে জানান তিনি।