বনকর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৪৫ হাজার টাকা ও ১২৭ কেজি মধু নেওয়ার অভিযোগ

সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মধু সংগ্রহের সময় চার মাঝি ও ২১ মৌয়াল আটক

নিজস্ব প্রতিনিধি:

সুন্দরবনের গাড়ল নদীর বাওন এলাকায় (অভয়ারণ্য) মধু সংগ্রহ করার সময় বৃহষ্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে বনবিভাগের কর্মকর্তারা চার মাঝি ও ২১ জন মৌয়ালকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে তিনটি ডিঙি নৌকা ও তিন কেজি মধু জব্দ করে হলদেবুনিয়া টহল ফাঁড়ির বনবিভাগের সদস্যরা।

আটককৃতরা হলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের সামছুদ্দিনের ছেলে মিঞারাজ হোসেন, একই গ্রামের আব্দুল হামিদের চেলে শাহ আলম, আনছার গাজীর ছেলে মনিরুল ইসলাম, সুরাত আলী গাজীর ছেলে সবেদ আলী গাজী, তমির গাজীর ছেলে সামাদ গাজী, কেরামত আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন, সবুরউদ্দিনের ছেলে জুব্বার আলী, তছির আলীর ছেলে আবু জিয়াদ আলী, আব্দুল হাকিমের ছেলে কামরুল ইসলাম, কোরবান আলীর ছেলে আলাউদ্দিন, আজিবর হোসেনের ছেলে হযরত আলী, জোহর আলীর ছেলে আবু হানিফ, মহব্বত শেখের চেলে হযরত আলী শেখ, নেছার আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক, আহম্মদ গাজীর ছেলে আফছার গাজী, জিয়াদ আলীর চেলে শাহাদাৎ হোসেন, ফলিরউদ্দিন গাজীর ছেলে হাকিম গাজী, আবু তালেবের ছেলে হাফিজুল ইসলাম, আতিয়ার গাজীর ছেলে শহীদুল গাজী, এজাহার মিস্ত্রীর ছেলে কেরামত মিস্ত্রী, আব্দুল হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, ডুমুরিয়া গ্রামের দাউদ আলমের ছেলে মাকসুদুল আলম, ৯নং সোরা গ্রামের দাউদ গাজীর ছেলে ইদ্রিস আলী, চাঁদনীমুখা গ্রামের নুরু সরদারের ছেলে কামরুল ইসলাম ও পারশেমারি গ্রামের মহিউদ্দিন সরদারের ছেলে ইউনুছ আলী।

সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের হলদেবুনিয়া অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুর রহমান জানান, কয়েকজন ব্যক্তি বৃহষ্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে অভয়ারণ্য হলদেবুনিয়া গাড়ল নদীর বাওন এলাকায় মধু আহরণের জন্য ঘোরাফেরা করছিল। এ সময় তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করার একপর্যায়ে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে তিনটি ডিঙি নৌকা ও তিন কেজি মধু জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় তিনি বাদি হয়ে আটককৃতদের বিরুদ্ধে ১৯২৭ সালের বনআইনের সংশোধিত ২০০০ সালের পি.ও.আর আইনের ২৬(১)(ডি) ও ২৬(১)(এ) এফ ধারায় মামলা দিয়ে শুক্রবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে মৌয়াল বা মাঝিদের আনীত ৪৫ হাজার টাকা ও ১২৭ কেজি মধু নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি।

এদিকে আটককৃত নৌকার মাঝি আব্দুর রাজ্জাক ও শহীদুল ইসলাম জানান, তারাসহ হযরত শেখ ও আব্দুস সামাদ তিনটি নৌকায় চারজন মাঝি পহেলা এপ্রিল বুড়িগোয়ালিনি ফরেস্ট অফিস থেকে ২১জন মৌয়াল অনুমতি (পাস) নিয়ে পরদিন সন্ধ্যায় গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা ও ডুমুরিয়া এলাকা থেকে বেরিয়ে রাত আনুমানিক ১২টার দিকে সুন্দরবনের কাছিকাটার ডান পাশে ছাড়ক নদী এলাকায় পৌঁছান। সেখানে তাদের নৌকা গ্রাফিন দিয়ে না আটকিয়ে বড় বাঁশ দিয়ে মাটিতে পুঁতে তিনটি নৌকা একসাথে বেঁধে রাখেন। পরে তারা নৌকায় ঘুমিয়ে পড়েন। পরপর দুই দিন তারা মধু সংগ্রহ করেন। ৫ এপ্রিল জোয়ারের টানে বাঁশের খুটি উঠে নৌকা তিনটি সুন্দরবনের ভারতের অংশে উত্তর চোরা ও দক্ষিণ চোরার চরে লেগে গেছে মর্মে পরদিন সকালে তারা জানতে পারেন। বেগতিক বুঝে ৬ এপ্রিল তারা কলা গাছের ভেলা সংগ্রহ করে ২৫জন কোন প্রকারে হলদেবুনিয়া অভয়ারণ্য কেন্দ্রে পৌঁছান। সেখানকার কর্মকর্তাকে বিস্তারিত জানানো হয়। একপর্যায়ে হলদেবুনিয়া কেন্দ্রের সেকেণ্ড অফিসার রবিউল ইসলাম তাদেরকে তিনটি নৌকাসহ গাবুরার দৃষ্টিনন্দন এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার শর্তে ৬০ হাজার টাকা চান। একপর্যায়ে তারা ৪৫ হাজার টাকা দেন। তিনটি নৌকা ও বনর্কীরা ফিরিয়ে আনেন। নৌকায় থাকা তিনটি ড্রামে ১৩০ কেজির ও বেশি মধু ছিল। এরপরও তাদের সংগৃহীত ১৩০ কেজি মধু তিন কেজি দেখিয়ে ও ৪৫ হাজার টাকা ফেরৎ না দিয়ে তাদেরকে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)