অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রকে দূরে ঠেলছে সৌদি?

অনলাইন ডেস্ক:

হঠাৎ করেই সৌদি আরব ও ওপেকভুক্ত দেশগুলো বৃহৎ পরিসরে তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছে। সবমিলিয়ে প্রতিদিন ১৬ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা এসেছে।

আর এই ঘোষণায় অনিশ্চয়তায় থাকা বিশ্ব জ্বালানি বাজারে আরও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ওপেকের এই সিদ্ধান্ত বিপদ ডেকে আনবে যুক্তরাষ্ট্র সেই হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছে।

যদিও সৌদি ও এর সহযোগী দেশগুলোর দাবি, জ্বালানি বাজারে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতেই তারা এই উদ্যোগ নিয়েছে। বিশ্বের নানা গণমাধ্যমের খবর ও বিশ্লেষণ অবশ্য বলছে ভিন্ন কথা। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রকে পাশ কাটিয়ে অর্থনৈতিভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার পথে হাঁটছে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বাধীন সৌদি। রিয়াদ এবার যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য থেকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা চাইছে।

এ বিষয়ে ‌‘জাই হামিদ’ নামের এক বিশ্লেষক ক্রিপ্টোপলিটন ওয়েবসাইটে একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। যেখানে তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন কীভাবে মার্কিন প্রভাব বলয় থেকে স্বাধীন অর্থনীতি গড়ার পরিকল্পনা করছে মোহাম্মদ বিন সালমানের সৌদি।

তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা এসেছে বিস্ময়করভাবে। যদিও রাশিয়ার সাথে বৈঠকে সৌদি ২০ লাখ ব্যারেল তেল উৎপাদন কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল। তবে সেই হিসেবে এটা কিছুটা কম।

মে মাস থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা। গত অক্টোবরে হওয়া সিদ্ধান্তেই এই স্বেচ্ছা উৎপাদন কমানোর বিষয়টি ছিল। রিয়াদ আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, দিনে তারা ৫ লাখ ব্যারেল তেল কম উৎপাদন করবে। ইরাক তাদের উৎপাদন কমাবে দিনে ২ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল।

সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রতিদিন ১ লাখ ৪৪ হাজার ব্যারেল তেল কম উৎপাদন করবে। কুয়েত উৎপাদন কমাবে ১ লাখ ২৮ হাজার ব্যারেল। ওমানও দিনে ৪০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন কমাবে। আলজেরিয়াও ৪৮ হাজার ব্যারেল তেল কম উৎপাদন করবে। কাজাখস্তান ৭৮ হাজার ব্যারেল তেল কম উত্তোলন করবে প্রতিদিন।

ফিনান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে জো বাইডেনের প্রশাসন ও রিয়াদের সাথে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। সেখান থেকে স্বাধীন অর্থনীতির ভিত গড়ে তোলার কৌশল হাতে নিয়েছে সৌদি।

আরবিসি ক্যাপিটাল মার্কেটসের পণ্য কৌশল প্রধান হেলিমা ক্রফট বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরতা কমানো অর্থনৈতিক কৌশল অভিযোজন করতে চলেছে সৌদি।

অন্যদিকে সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সাথেও ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়েছে সৌদি। সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনে যুক্ত হতে চলেছে দেশটি। যেখানে আছে রাশিয়াও।

চীনের মধ্যস্থতায় চির বৈরি ইরানের সাথে আবারও সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পথে হেঁটেছে মোহাম্মদ বিন সালমানের দেশ। অন্যদিকে চীনা কোম্পানি রংশেং পেট্রোকেমিক্যালের ১০ শতাংশ শেয়ার কেনার জন্য ৩৬০ কোটি ডলারের একটি চুক্তিও করেছে রিয়াদ। এর আওতায় প্রতিদিন ৪ লাখ ৮০ হাজার ক্রুড তেল সরবরাহ করবে সৌদি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গিয়ে বিশ্ব অংশীদারিত্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা হিসেবে সৌদি এসব কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের সাথে তাৎপর্যপূর্ণভাবে মার্কিন সম্পর্কের পট বদল হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের চীন ও রাশিয়ার সাথে দ্বন্দ্বের মেরুকরণেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের বিশ্ব অংশীদারিত্বে এমন বৈচিত্র্য আনছে বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা।

সৌদি লেখক আলি শিহাবি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সাথে একমুখী সম্পর্কের দিন শেষ। এখন আমরা আরও উন্মুক্ত সম্পর্কের পথে হাঁটছি। যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীন, ভারত ও ফ্রান্সহ অন্যদের সাথে আমাদের সম্পর্ক শক্তিশালী।’

সূত্র: ক্রিপ্টোপলিটন, ব্লুমবার্গ, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)