মার্কিন কারাগারে নির্যাতনের শিকার, আজও বিচার পাননি ইরাকি সাংবাদিক

অনলাইন ডেস্ক:

‘আবু গারিব কারাগারে আমাকে চরম নির্যাতন ও নিপীড়ন করা হয়েছিল। এরপর ২০ বছর পেরিয়ে গেছে। আজও সেই নিপীড়নের বিচারের অপেক্ষায় আছি আমি।’ কথাগুলো বলেছেন ইরাকি সাংবাদিক সালাহ হাসান নুসাইফ আল-এযাইলি।

২০০৩ সালের ২০ মার্চ ইরাকে আগ্রাসন শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। আগ্রাসনের ভয়াবহতা তুলে ধরায় ওই বছরই মার্কিন বাহিনীর হাতে আটক হন সাংবাদিক সালাহ হাসান। তাকে বন্দি করা হয় রাজধানী বাগদাদের পশ্চিমে যুক্তরাষ্ট্রের কুখ্যাত আবু গারিব কারাগারে। চার মাস পর তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও আটককালে তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনা হয়নি।

কিন্তু ওই চার মাসে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্যদিয়ে যেতে হয় সালাহ হাসানকে। তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম নির্যাতন করা হয়। যে নির্যাতন ও নিপীড়নের কথা বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।

২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ইরাক যুদ্ধের প্রধান কুশীলব মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্বাচনি প্রচারণার সময় আবু গারিব কারাগারে নির্যাতনের বিষয়টি প্রথম আলোচনা ‍উঠে আসে। মার্কিন সেনাদেরই তোলা বন্দি নির্যাতনের কিছু ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে যায়। মূলত এরপরই বুশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনা শুরু হয়।

কারাগার কক্ষে বন্দিদের নগ্ন করে গাদাগাদি করে রাখা হত এবং হাতকড়া পড়ানো বন্দিদের বৈদ্যুতিক শক দেয়া হতো। তাদের মাথা বেঁধে পানিতে চোবানো হত বলেও অভিযোগ ওঠে।

বিষয়টি নিয়ে সে বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে আবু গারিবে বন্দীদের ওপর নির্যাতনের ৪৪টি ঘটনা বেরিয়ে আসে। কিন্তু সেই তদন্তে কাউকে অভিযুক্ত করা হয়নি।

একই সময় সিএসিআই নামে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভাড়া করা এক বেসরকারি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগের মামলা হয়। আল শিমারি বনাম সিএসিআই নামে ওই মামলাটির অন্যতম বাদী ছিলেন সাংবাদিক সালাহ হাসান। নির্যাতনের শিকার বন্দিদের পক্ষে মামলাটি করে সিসিআর নামে অধিকার গোষ্ঠী।

মামলা অভিযোগে বলা হয়, আবু গারিব কারাগারে বন্দিদের ভয়াবহ নিপীড়ন ব্যবস্থার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সিএসিআই ইনকর্পোরেশন। কারাগারে বন্দিদের জিজ্ঞাসাবাদ কাজের জন্য তাদেরকে ভাড়া করে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে স্ত্রী ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে সুইডেনের বাস করেন সালাহ হাসান। কাজ করছেন কাতারভিত্তিক বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার সাংবাদিক হিসেবে।

গত মাসেই ইরাক আগ্রাসনের ২০ বছর পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু আবু গারিব কারাগারে মার্কিন কারা কর্মকর্তাদের হাতে যে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, আজও তার বিচার পাননি সালাহ হাসান।

সম্প্রতি মিডল ইস্ট আই-এ লেখা এক প্রবন্ধে আবু গারিব কারাগারের সেই দিনগুলোর কথা আবারও স্মরণ করেছেন সালাহ হাসান। সেই সঙ্গে জানিয়েছেন, আজও সেই নির্যাতনের ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় তিনি।

প্রবন্ধে সালাহ হাসান আরও বলেছেন, আমি এখনও নিজেকে বারবার জিজ্ঞাসা করি, ইরাকে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছিল তার কারণ কী ছিল? যারা মানবাধিকার ও গণতন্ত্রকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়ার দাবি করে সেই যুক্তরাষ্ট্র কেন আমার দেশে আক্রমণ করেছিল? তাদের সেই আক্রমণে তৈরি হয় মৃত্যু, নির্যাতন, বাস্তুচ্যুতি, বিধ্বস্ত অবকাঠামো, পরিবেশগত অবক্ষয় আর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার এক কালো অধ্যায়।’

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)