ঝিকরগাছায় ইভটিজিংয়ের আত্মহত্যার প্রতিবাদে লাশ নিয়ে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ
আঃজলিল:
যশোরের ঝিকরগাছা বি এম হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের ইভটিজিংয়ের শিকার একই স্কুলের সপ্তম শ্রেনির শিক্ষার্থী অনি রায় (১৩) বাড়ি ফিরেই স্কুলড্রেস পরিহিত অবস্থায় নিজ ঘরে সিলিং ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। সে ঝিকরগাছা পৌরসদরের ৪নং ওয়ার্ড হাসপাতাল রোডের মিস্ত্রীপাড়ার বাসিন্দা কুয়েত প্রবাসি গৌতম রায় এর মেয়ে।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) দুপুর ৩টায় ঝিকরগাছা উপজেলা মোড়ে অনির লাশ নিয়ে এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সেখান থেকে অনিকে উত্যক্তকারী, আত্মহত্যায় প্ররোচনা দান কারীদের ফাঁসির দাবী জানানো হয়েছে। স্কুল কতৃপক্ষের নীরব ভুমিকারও তীব্র নিন্দা জানান বিক্ষোভে অংশগ্রহণ কারীরা।
অনির ভাই অর্ঘ রায় বলেন, প্রতিদিনের ন্যায় এদিন(২৭ মার্চ) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঝিকরগাছা বিএম হাইস্কুলে কোচিং ক্লাস করতে যায় তার বোন অনি রায়। ছুটি শেষে সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ওই বিদ্যালয়েরই ৩জন শিক্ষার্থী দ্বারা তার বোন ইভটিজিংয়ের শিকার হয়। অনি রায় দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়িতে আসে। ওই ৩ শিক্ষার্থী তার পিছন পিছন এসে বাড়ির নিকট থেকে ফিরে যায়। অনি রায় বাড়িতে এসেই মায়ের কাছ থেকে মোবাইল ফোনটা নিয়ে ঘরে দরজা দেয়। তার এক বান্ধবীর সাথে অল্প কিছুসময় কথা বলে জানালা দিয়ে মা কনিকা রায় এর হাতে মোবাইল ফোনটি ফেরত দেয়। এরপর মায়ের একটি শাড়ি দিয়ে নিজ ঘরে ফ্যানের সাথে পেচিয়ে আত্মহত্যা করে। এসময় অর্ঘ রায় ও তার মা কনিকা রায় বাড়িতে ছিল। বেশ কিছুসময় তার কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে অর্ঘ ঘরের ভেন্টিলেটর দিয়ে তাকিয়ে বোনকে ঝুলতে দেখে চিৎকার করে। পরে প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় ঘরের দরজা ভেঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা অনি রায়কে উদ্ধার করে ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী উর্মি নামের এক মেয়ে জানান, নিহত অনি অনেক জোরে জোরে দৌড়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলো আর তিনটা ছেলে তার পিছু নিয়েছিল। এদিকে হাসপাতালে নেয়ার পরে নিহতের ভাই অর্ঘ্যের সাথে তিন যুবকের ঝগড়া বাঁধে। তার দাবি ওই তিন যুবকই অনিকে উত্ত্যক্ত করতো। তাদের মধ্যে একজন হাসপাতালের সামনে জামাল ফার্মেসীর মালিক জামালের ছেলে সাকিব। সেও বি.এম হাইস্কুলের এস এস সি পরিক্ষার্থী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিকরগাছা বিএম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুস সামাদ বলেন, তিনি শুনেছেন অন্য একটি ছেলের সাথে টিকটক করাকে কেন্দ্র করে রাস্তায় ছেলেদের সাথে মেয়েটির তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। এটা বাইরের বিষয়, স্কুল ক্যাম্পাসের ভিতরের কোন ঘটনা না বলেও তিনি দাবি করেন। তিনি আরও বলেন, তাকে কেও উত্যক্ত করতো কিনা জানা নেই। আগামীকাল (আজ) ওর সহপাঠীদের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জানা যাবে।
জানা গেছে, পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সারাদেশে সরকারি ভাবে মাধ্যমিক বিদ্যালয় গুলো ২৩ মার্চ থেকে ২৭ এপ্রিল ২০২৩ পর্যন্ত শিক্ষা মন্ত্রনালয় ছুটি ঘোষনা করলেও ঝিকরগাছার অনেক স্কুলে চলছে কোচিৎ বানিজ্য। বাচ্চাদের স্কুলে আসতে বাধ্য করতে অনেক স্কুল বন্ধের মধ্যে পরীক্ষা নিচ্ছে। এই ঘটনার সাথে জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তিসহ ঝিকরগাছার বিদ্যালয় গুলোর কোচিং বানিজ্য বন্ধের জোর দাবি করেছেন অভিভাবকরা।
ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কে এম কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর বলেন, মন্ত্রনালয়ের সিদ্ধান্তনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ।
ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন ভক্ত বলেন, এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা। হয়েছে। পরিবারের লোক অভিযোগ করলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্হা নেওয়া হবে।
Please follow and like us: