খুলনায় পানির লেয়ার নেমে যাচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক :

খুলনা নগরীর ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার নেমে যাচ্ছে। সাত বছরে প্রায় ৩ মিটার (৯.৮৪ ফুট) নেমে গেছে। তিনটি কারণে লেয়ার নেমে যাচ্ছে বলে খুলনা ওয়াসাসহ কয়েকটি সংস্থার দাবি। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- খুলনাঞ্চলে বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়া, নিয়মনীতি না মেনে গভীর নলকূপ স্থাপন এবং সাবমারসিবলের ব্যবহার বৃদ্ধি।

এ ছাড়া ভূগর্ভস্থ থেকে অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনও লেয়ারের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। নগরীতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা পানির কারখানাগুলো (গভীর নলকূপের পানি বোতলজাতকরণ) নিয়ন্ত্রণহীন। ভূগর্ভস্থ থেকে কারখানাগুলো প্রতিদিন লাখ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করছে। প্রশাসন অভিযান চালালেও সেগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না।

পানি নিয়ে গবেষণাকারী সংস্থা অ্যাওসেডের দাবি-২০২১ সালে খুলনায় ১৬ হাজার ৫০০টি সাবমারসেবল মেশিন বিক্রি হয়েছে। ওয়াসার তালিকা অনুযায়ী নগরীতে নলকূপ রয়েছে ১০ হাজার ৭০০টি। কিন্তু বাস্তবে নলকূপের পরিমাণ ২০-৩০ হাজার। নগরীতে প্রতিদিন খাবার পানির চাহিদা ৪০ লাখ গ্যালন, পয়ঃনিষ্কাশনের পানির চাহিদা প্রতিদিন ১৫০ লাখ গ্যালন এবং ঘর-গৃহস্থালির কাজের জন্য পানির চাহিদা ১০০ লাখ গ্যালন।

এ পরিমাণ পানি ওয়াসা দিতে পারছে না। এর ফলে সাধারণ মানুষ পুকুরের পানি, গভীর নলকূপ এবং সাবমারসিবলের ব্যবহার বাড়িয়েছে। অ্যাওসেডের নির্বাহী পরিচালক শামীম আরফীন যুগান্তরকে বলেন, নগরীতে পানির লেয়ার নেমে যাওয়ার প্রধান কারণ গভীর নলকূপ এবং সাবমারসিবলের ব্যবহার করা। এ বিষয়ে বিএসটিআই এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের আরও সচেতন হওয়া দরকার।

পাশাপাশি সাধারণ নাগরিকরা সচেতন না হলে কোনোভাবেই পানির লেয়ার স্থিতিশীল করা সম্ভব নয়। তিনি আরও বলেন, অবৈধ পানির কারখানা থেকে যে পানি তৈরি করা হয় সেটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

ওয়াসা সূত্র জানায়, নগরীতে ৪০ হাজার হোল্ডিং বর্তমানে তাদের পানি নিচ্ছে। অথচ হোল্ডিং রয়েছে ৭৫ হাজার। ওয়াসার নির্ধারিত গভীর নলকূপ ও সাবমারসিবল থেকে পানি সংগ্রহ ৭০ ভাগ কমেছে। তারা গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী আন্ডার রিভার ওয়াটারের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করছে।

খুলনা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুল্লাহ যুগান্তরকে জানান, নগরীর ১৪নং ওয়ার্ডে ২০১৫ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পরীক্ষা করে দেখা গেছে পানির লেয়ার ৩ মিটার নেমে গেছে। এর প্রধান কারণ এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়া, গভীর নলকূপ এবং সাবমারসিবলের ব্যবহার।

তিনি দাবি করেন, ওয়াসার পক্ষ থেকে আন্ডার রিভার ওয়াটার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন ৭ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা আছে আমাদের। আগের তুলনায় গভীর নলকূপ এবং সাবমারসিবলের ব্যবহার অনেক কমে গেছে।

এটার আরও নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। বিএসটিআইয়ের সূত্র জানায়, নগরীতে আটটি বৈধ পানির কারখানা রয়েছে। তবে এর বাইরে যারা ভূগর্ভস্থ থেকে পানি উত্তোলন করে ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হয়েছে। অবৈধ প্রতিষ্ঠানগুলোকে জরিমানা করা হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)