বছরে সোয়া ৫ কোটি টাকার গম খাচ্ছে ইঁদুর!
নিউজ ডেস্ক:
বগুড়ায় গমের ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন কৃষকেরা। নানা পদ্ধতি প্রয়োগ করেও ইঁদুর দমন করা যাচ্ছে না। ফলে ইঁদুরের কাছে আত্মসমর্পণ করেই গমের চাষ করছেন তারা। আর বছরে সোয়া পাঁচ কোটি টাকার গম খেয়ে যাচ্ছে ইঁদুর।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, বগুড়ায় এবার ২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে। যেখানে গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৬৩২ মেট্রিক টন।
গম ব্যবসায়ীদের হিসাব অনুযায়ী, এক মেট্রিকটন গমের দাম বর্তমানে ৫০ হাজার টাকা। এই হিসাবে বগুড়ায় এবার ৪৩ কোটি ১৬ লাখ টাকার গম উৎপাদন হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বগুড়া কার্যালয়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বলেন, বছরের মোট উৎপাদনের প্রায় ১২ শতাংশ গম নষ্ট করে ইঁদুর। জমিতে ও গুদামে ইঁদুরের আক্রমণে এই ক্ষতির শিকার হন কৃষকেরা।
গম ব্যবসায়ী ও কৃষি কর্মকর্তাদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছর ৫ কোটি ১৭ লাখ ৯২ হাজার টাকার গম নষ্ট করছে ইঁদুর।
তবে, বগুড়া সদরের গম ব্যবসায়ী পরিমল কুমার সিং বলেন, গমের বাজার সবসময় একরকম থাকে না। দাম উঠানামা করে।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সাজাপুরের বাসিন্দা কামরুজ্জামান। তিনি এবার তিন বিঘা জমিতে গম চাষ করেছেন।
কামরুজ্জামান জানান, গম ক্ষেতে ইঁদুর আক্রমণ ঠেকাতে তারা নানা পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এরপরেও ইঁদুর কমে না। এছাড়াও ইঁদুর গমের ক্ষতি করবেই, এটা মেনে নিয়েই তারা চাষ করেন।
বগুড়ার কাহালু উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএম আল-আমিন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, নানা কৌশলে ইঁদুর নিধন করা যায়। ফাঁদ পেতে বা গর্ত খুড়ে ইঁদুর ধরে পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে। গুদামে বা ঘরে এক প্রকার আঠা কাঠেরবোর্ড, টিন ও মোটা শক্ত কাগজে লাগিয়ে ইঁদুর চলাচলের রাস্তায় ব্যবহার করলেও ইঁদুর নিধনে ভালো ফল পাওয়া যায়। তবে লোভনীয় খাবারের প্রলোভন দিতে হবে। বিষটোপের মাধ্যমে ইঁদুর নিধন করাও সহজ। এছাড়াও বিভিন্ন ইঁদুর ভোজী প্রাণীর (সাপ, শিয়াল, বিড়াল, পেঁচা) ইঁদুর নিধন করে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. এনামুল হক ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, বছরের জুলাই মাসে ইঁদুর নিধন অভিযান শুরু করা হয়। এ কার্যক্রম মাসব্যাপী চলে। এতে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকরাও অংশ নেন। অভিযান শেষে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। সর্বোচ্চ ইঁদুর নিধনকারীকে পুরস্কৃত করা হয়। এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের ইঁদুর মেরে লেজ সংগ্রহ করে জমা দেন।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, ইঁদুর সবচাইতে বেশি গমের ক্ষতি করে। কারণ সেখানে সহজে আলো-বাতাস যেতে পারে না। আলো চলাচল করে এমন স্থানে ইঁদুর থাকতে পারে না। ইঁদুর দমনে সবসময়ই কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় ইঁদুর নিধন সম্ভব হবে।