সাতক্ষীরার কলারোয়ায় পুলিশ-ডাকাত গোলাগুলি, তিন ডাকাত সদস্যের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :
গত ৫ মার্চ দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার কোটার মোড়ে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের সাথে ডাকাত সদস্যদের গোলাগুলিতে চার পুলিশ সদস্য ও এক ডাকাত সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় রিমাÐ শেষে পাঁচজন ডাকাত সদস্যের মধ্যে তিন জন ডাকাত সদস্য আদালতে এক ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে বিচারিক হাকিম মহিদুল ইসলামের কাছে হুমায়ুন কবীর, বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের কাছে শেখ শহীদুজ্জামান প্রিন্স ও বিচারিক হাকিম সালাউদ্দিনের কাছে শহীদুল ইসলাম এ জবানবন্দি দেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ৫ মার্চ রবিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে সাতক্ষীরা যশোর সড়কের কলারোয়ার কোটার মোড়ে পরিবহনে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে পুলিশের সঙ্গে ডাকাত দলের বন্দুকযুদ্ধে চার পুলিশ সদস্য আহত হন। গুলিবিদ্ধ হয়ে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পুলিশ প্রহরায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন ডাকাত সদস্য মিজানুর রহমান। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ দুটি প্রাইভেটকার, একটি নতুন বিদেশী পিস্তল , দুই রাউÐ গুলি, দুটি চাপাতি ও তিনটি মোবাইল ফোন জব্দ করে।
এ ঘটনায় ৬ মার্চ কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক অনিল মুখার্জী বাদি হয়ে গ্রেপ্তারকৃত সাতক্ষীরা শহরের মধ্যকাটিয়া এলাকার শেখ আব্দুল হামিদের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শেখ শাহীদুজ্জামান প্রিন্স (২৮), যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার হাজির আলী গ্রামের বশির আহম্মেদ এর ছেলে হুমায়ুন কবির(৩৭), যশোর জেলা সদরের মোল্ল্যাপাড়া গ্রামের ফজর আলী উকিলের ছেলে শহীদুল ইসলাম(৬০), একই গ্রামের ধলা ম্য়িার ছেলে মিজানুর রহমান(৫০), যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বসতপুর গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে আবুল কালাম (৫৫), একই গ্রামের নূর মোহাম্মদের ছেলে আব্দুল্লাহ আল মামুনের (৩০) নামসহ যশোরের শার্শা উপজেলার সেতাই গ্রামের আব্দুল গণি বিশ্বাসের ছেলে কবীর বিশ্বাস (৪৬) ও সাতক্ষীরা শহরের দক্ষিণ কাটিয়ার শেখ মোশারফ হোসেনের ছেলে শেখ শফিউল্লাহ ওরফে মনিরুল ওরফে গোল্ড মনিকে (৪৭) পলাতক দেখিয়ে অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে ডাকাতির চেষ্টা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক বাবুল আক্তার ৭ মার্চ গ্রেপ্তারকৃত শেখ শাহীদুজ্জামান প্রিন্স, হুমায়ুন কবীর, শহীদুল ইসলাম, আবুল কালাম ও আব্দুল্লাহ আল মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাত দিন করে রিমাÐ আবেদন করেন। ১২ মার্চ বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলাম শুনানী শেষে পাঁচ আসামীর প্রত্যেককে তিন দিন করে রিমাÐ মঞ্জুর করেন। এক দিন আগেই মঙ্গলবার পাঁচ আসামীকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় বিচারিক হাকিম মহিদুল ইসলামের কাছে হুমায়ুন কবীর, বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলামের কাছে শেখ শহীদুজ্জামান প্রিন্স ও বিচারিক হাকিম সালাউদ্দিনের কাছে শহীদুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এদিকে ৬ মার্চ ঘটনার তথ্য অনুসন্ধানে যেয়ে জানা যায়, কোটার মোড়ে আহত চার পুলিশ সদস্যকে ৫ মার্চ দিবাগত রাত তিনটায় ও গুলিবিদ্ধ ডাকাত সদস্য মিজানুরকে ৬ মার্চ ভোর পৌনে ৬টায় কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে দমদমা বাজারের ছাগলের মোড় থেকে ৬ মার্চ ভোর পৌনে চারটার দিকে একটি প্রাইভেটকার আটক করে পুলিশ।
এ সময় সোনাবাড়িয়া ঝাঁপাঘাট এলাকার ছাগলের মোড়ের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান, আবুল কালাম ও মনিরা খাতুনের বাড়িতে পুলিশ এক সন্ধিগ্ধ ব্যক্তিকে খুঁজতে থাকে। কয়েক মিনিট পর তারা একটি গুলির শব্দ শুনতে পান। শার্শা উপজেলার বসতপুরের শ্রমিক নেতা আবুল কালাম ৬ মার্চ প্রাইভেট কার নিয়ে একই গ্রামের আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছাড়াতে গেলে প্রাইভেটকারসহ তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।
এ ঘটনার সঙ্গে সোনা পাচারের বিষয়টি উঠে আসে। এর কয়েকদিন আগে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় আসার সময় দক্ষিন কাটিয়ার গোল্ড মনির গাড়ির চালককে এক জায়গায় ও গাড়িটি অন্য জায়গায় পাওয়া যায়। খোয়া যায় ওই গাড়িতে থাকা বিপুল পরিমান সোনা। সেই গোল্ড মনিকে ৬ মার্চ অস্ত্র ও ডাকাতির চেষ্টার দুটি মামলার পলাতক আসামী দেখানো হয়েছে। এর আরো সপ্তাহ দুয়েক আগে কলারোয়া এলাকা থেকে আরো একটি সোনার চালান খোয়া যায়। তবে তিন দফায় সোনা খোয়া যাওয়ার রহস্য উদঘাটনে বিশেষ তদন্ত চলছে। তাতে বেরিয়ে আসতে পারে সোনা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত রাঘব বোয়ালদের নাম।
সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ হাসান কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক অনিল মুখার্জীর দায়েরকৃত ৬ মার্চ এর অস্ত্র আইনের মামলার রিমাÐ ফেরৎ তিন আসামী মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।#