গ্রেফতার করতে ব্যর্থ হয়ে ইমরানকে সংলাপের প্রস্তাব শাহবাজের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বারবার পুলিশ পাঠিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) চেয়ারম্যান ইমরান খানকে গ্রেফতার করতে না পেরে এবার সংকট দূর করতে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট থেকে দেশকে মুক্ত করতে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তিকে সংলাপে বসতে হবে বলে জোর দিয়ে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এছাড়া পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনের (ইসিপি) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত সময়েই সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার ইসলামাবাদের প্রধানমন্ত্রী হাউসে কাউন্সিল অব পাকিস্তান নিউজপেপার এডিটরস (সিপিএনই)-এর একটি প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক করেন শাহবাজ শরিফ। সেখানে তিনি বলেন, ‘দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সকল রাজনৈতিক শক্তিকে একসাথে বসতে হবে।’
পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী এদিন দাবি করেন, পাকিস্তানের ঋণ খেলাপি হওয়ার হুমকি এখন শেষ হয়ে গেছে কারণ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাথে (পাকিস্তানের) স্টাফ-লেভেল চুক্তি শিগগিরই চূড়ান্ত হবে।
শাহবাজ বলেন, সাম্প্রতিক অতীতে তিনি দুই দফায় পিটিআই’কে আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, কিন্তু দলটি সাড়া দেয়নি।
তার ভাষায়, ‘(সংকট কাটাতে) যদিও রাজনীতিবিদরা সবসময় সংলাপের আশ্রয় নেন, কিন্তু পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের এই বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া না দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে।’
শাহবাজ বলেন, পাকিস্তান গুরুতর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, তবে ক্ষমতাসীন জোট সরকার পরিস্থিতির উন্নতিতে ইতিবাচকভাবে অবদান রেখেছে।
তিনি অভিযোগ করেন, মসজিদের ভেতরে আত্মঘাতী হামলার পরিপ্রেক্ষিতে পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত শীর্ষ কমিটির বৈঠকেও যোগ দেয়নি পিটিআই।
দ্য ডন বলছে, বুধবারের বৈঠকে পাকিস্তানের রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর আলোচনা হয়। দেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে শেহবাজ বলেন, ‘এ বিষয়ে কারও কোনও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। আমরা আন্তরিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেব এবং ইসিপি যা সিদ্ধান্ত নেবে তা অনুসরণ করব।’
এসময় শাহবাজ আদালতের আদেশ ‘নগ্নভাবে অমান্য’ করায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নিন্দা করেন। তার দাবি, ‘পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো একজন তথাকথিত রাজনৈতিক ব্যক্তি নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে ভাবছেন… আদালতে উপস্থিত না হওয়া আইন লঙ্ঘনের সমতুল্য।’
ইমরান খানের গ্রেফতারি পরোয়ানা সংক্রান্ত পুলিশি পদক্ষেপের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরকার নিজে থেকে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না, আদালতের নির্দেশে কাজ করছে।’
উল্লেখ্য, টানা দু’দিন চেষ্টা করেও ইমরান খানকে গ্রেফতার করতে পারেনি পাকিস্তানি পুলিশ ও রেঞ্জার্সের যৌথ দল। সমর্থকদের বাধার দেওয়াল ভাঙতে ব্যর্থ হয়ে শেষপর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয় নিরাপত্তা বাহিনী।
বুধবার দুপুরে পিটিআইয়ের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে ইমরান খানের জামান পার্কের বাড়ির সামনে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সরে যেতে দেখা যায়। এর পরপরই উল্লাসে মেতে ওঠেন পিটিআই নেতা-কর্মীরা।
ওইদিন সকালে পুলিশ ও রেঞ্জার্সদের যৌথ দল সাঁজোয়া যান নিয়ে আরো আক্রমণাত্মকভাবে ইমরান খানের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা চালায়। কিন্তু পিটিআই কর্মীদের প্রবল বাধার মুখে ব্যর্থ হয় তারা। বাঁধে তুমুল সংঘর্ষ।
এসময় পিটিআই কর্মীরা নিরাপত্তা বাহিনীর দিকে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান-টিয়ারগ্যাসের পাশাপাশি পুলিশ গুলিও চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পিটিআই।