যুগ্ম জেলা জজ মোঃ সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বডি ওয়ারেন্ট জারির নির্দেশ
রঘুনাথ খাঁঃ
আদালতের নির্দেশে নির্ধারিত সময়ে
দেনমোহর ও খোরপোষের চার লাখ ১৫ হাজার টাকা বাদিনীকে না
দেওয়ায় চুয়াডাঙা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের যুগ্ম জেলা জজ
মোঃ সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বডি ওয়ারেন্ট জারির নির্দেশ
দেওয়া হয়েছে। সাতক্ষীরার দেবহাটা সহকারি জজ আদালতের বিচারক
এলিয়াম হোসেন মঙ্গলবার উভয়পক্ষের শুনানী শেষে এ আদেশ দেন।
বিবাদী মোঃ সিরাজুল ইসলাম সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার
চণ্ডিপুর গ্রামের আমিন গাজীর ছেলে।
মামলার বিবরনে জানা যায়, দেবহাটা উপজেলার চণ্ডিপুর গ্রামের
আমিন গাজীর ছেলে মোঃ সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে একই
উপজেলার নাংলা গ্রামের আদম আলী মেঠুয়ার মেয়ে মারুফা
খাতুনের ২০১১ সালে ৩ ডিসেম্বর ৫ লাখ টাকা কাবিনে ভালবেসে
বিয়ে হয়। জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে যোগদানের
পরবর্তী সময়ে মোঃ সিরাজুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে তার স্ত্রীর
ব্যাংক হিসাব নম্বরে মোটা অংকের টাকা জমা রাখতেন ও স্ত্রীর
কাছ থেকে ব-াঙ্ক চেকে সই করে নিয়ে টাকা তুলে নিতেন।
পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় মারুফা
খাতুন তার স্বামীর বিরুদ্ধে ১৫ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে
নির্যাতনের অভিযোগে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম প্রথম
আদালতে ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ১১৯/১২ নং মামলা করেন। যাহা
পরবর্তীতে খারিজ হয়ে যায়।
মামলার বিবরণে আরো জানা যায়, স্ত্রী মারুফা খাতুনের কাছ
থেকে নেওয়া ব-াঙ্ক চেক এ দেড় লাখ টাকা বসিয়ে মোঃ সিরাজুল
ইসলাম তার খালাত ভাই আব্দুল মালেককে দিয়ে সাতক্ষীরার বিচারিক
হাকিম ২য় আদালতে মারুফার নামে দেড় লাখ টাকা চেক
ডিসঅনারের ০২/১৩ নং মামলা করান। যাহা পরবর্তীতে খারিজ হয়ে
যায়। একইভাবে পাবনা জেলা শহরের বাসা থেকে ২৬ হাজার টাকা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চুরি করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে মোঃ
সিরাজুল ইসলাম ২০১৩ সালের ২৯ জুলাই পাবনা সদর থানায় ৪৬ নং
মামলা করান। যাগা পরবর্তীতে খারিজ হয়ে যায়। সৌদি আরবে
পাঠানোর নাম করে দুই লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগে পিরোজপুর
জেলার মঠবাড়িয়া থানাধীন নলী কান্দিরহাট গ্রামের গোলাম
মাওলার ছেলে এমদাদুল হককে দিয়ে ২০১২ সালের ১০ অক্টোবর মারুফার
বিরুদ্ধে সিআর-৭৪৮/১২ নং মামলা করা হয়। যাহা পরবর্তীতে খারিজ
হয়ে যায়।
সূত্রটি আরো জানায়, ২০১৫ সালের ১২ আগষ্টের পর থেকে ২০১৩
সালের ৮ জুলাই মারুফাকে খোরপোষের ও দেনমোহরের টাকা না
দেওয়ায় পরদিন মারুফা বাদি হয়ে মোঃ সিরাজুল ইসলামের নাম
উলে-খ করে দেবহাটা পারিবারিক জজ আদালতে ১১/২০১৩ নং মামলা
করেন। মারুফার পক্ষে ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর রায় ওই বছরের ৩ নভেম্বর
ডিক্রী দেওয়া হয়। আদেশ পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে মারুফাকে চার লাখ
৬ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়। পরবর্তীতে পারিবারিক
জারি মোকদ্দমা (৪/২২)চলাকালে মোঃ সিরাজুল ইসলাম জজ
আদালতে পারিবারিক জজ আদালতের রায় ও ডিক্রীর বিরুদ্ধে
পারিবারিক আপিল ৩১/২০ দাখিল করেন। ২০২২ সালের ২৪ ফেব্র“য়ারি
যুগ্ম জেলা জজ দ্বিতীয় আলাদতের বিচারক মোঃ ফারুক ইকবাল
পারিবারিক আপিল মামলা দোতরফা সূত্রে খারিজ করে দেন।
পরবর্তীতে চার লাখ ১৫ হাজার টাকা দাবি করে গত মঙ্গলবার
দেবহাটা সহকারি জজ আদালতে সিরাজুল ইসলামের বডি ওয়ারেন্ট
চাওয়া হয়। বিচারক মোঃ এলিয়াম হোসেন উভয়পক্ষের শুনানী শেষে
মোঃ সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বডি ওয়ারেন্ট জারির নির্দেশ
দেন।
বাদি পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. সোমনাথ
ব্যাণার্জী। বিবাদীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. পরিতোষ
কুমার ঘোষ।
অ্যাড. সোমনাথ ব্যাণার্জী বিচারক মোঃ সিরাজুল ইসলামের
বিরুদ্ধে বডি ওয়ারেন্ট জারির আদেশ সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন।