শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু নাসিম ময়নাকে স্মরণ
প্রেসবিজ্ঞপ্তি:
শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু নাসিম ময়নাকে স্মরণ বিনম্র শ্রদ্ধা এবং হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে বরেণ্য রাজনীতিক, সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সাবেক আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু নাসিম ময়নাকে।
স্মরণ সভায় বক্তারা বলেন, আজকের এই দিনে প্রয়াত আবু নাসিম ময়নাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তার শেখানো ও দেখানো পথে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। আবু নাসিম ময়না দেশপ্রেমী ও মানবিক গুণাবলসীম্পন্ন একজন মানুষ। তিনি দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবেসেছেন। তিনি ছিলেন একজন সাহসী বীর। কখনো কোনো অন্যায়ের সাথে আপস করেননি, সমঝোতা করেননি। ন্যায়ভিত্তিক আন্দোলন সংগ্রামে অনুপ্রেরণা দিতেন আবু নাসিম ময়না। সেই অনুপ্রেরণাই আজও পথ চলার পাথেয়।
বক্তারা বলেন, আবু নাসিম ময়না ছিলেন সংগ্রামী চেতনার একজন মুক্ত চিন্তাশীল ব্যক্তি। সাতক্ষীরা শহরের শহিদ আবদুর রাজ্জাক পার্কে পুরাতন
শহিদ মিনারের পরিবর্তে নতুন শহিদ মিনার প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অপরিসীম। ২০১৩-১৪ সালে জামাত-শিবিরের নৈরাজ্য নাশকতা বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জামাতের সাবেক আমির স্বাধীনতা বিরোধী গোলাম আযমকে সাতক্ষীরায় প্রতিহত করার আন্দোলনে আবু নাসিম ময়না সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সাতক্ষীরায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬দফা আন্দোলন, ১৯৬৮ সালের গণআন্দোলন, ’৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণসহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সম্মুখ যোদ্ধা হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবু নাছিম ময়না।
১৯৬৬ সালের ঐতিহাসিক ৬ দফা আন্দোলনে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ ও ছাত্র সমাজের ১১ দফা আন্দোলনে তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন ও ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে সাতক্ষীরা মহকুমা স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম সদস্য হিসেবে তাঁর বলিষ্ঠ ও সাহসী ভূমিকা ছিল। শেখ আবু নাসিম ময়না মাতৃভূমির স্বাধীনতার লক্ষে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ৭
ডিসেম্বর সাতক্ষীরা হানাদার মুক্ত হলে সাতক্ষীরা আদালত প্রাঙ্গনে স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলনেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক শেখ আবু নাসিম বিভিন্ন সময়ে সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত থেকে গুরুত্বপূর্ণ
দায়িত্ব পালন করেন। সাতক্ষীরা জেলার নাগরিক কমিটির আহবায়ক এড. আব্দুর,রহিমের মৃত্যুর পর তিনি জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি সাতক্ষীরার জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সমাজ উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের সাথে জড়িত ছিলেন। ২০১৬ সালের ৯ মার্চ তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে
চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যু চিরন্তন সত্য। কিন্তু যখন একজন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হন, তখন তাকে হারালে অপূরণীয় ক্ষতি হয়। ু আবু নাসিম ময়নার মৃত্যুতে সাতক্ষীরার রাজনৈতিক অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। সংকটে, সংগ্রামে, দুর্যোগে-দুর্দিনে আজ তাঁর মতো সাহসী নেতার বড় অভাব। তিনি শুধু বীরমুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, দেশ গড়ার কাজে তার অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর তিনি আবার নতুন করে যুদ্ধ শুরু করেন অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য। কোনো চাপের কাছেই তিনি মাথা নত করেননি। তার দেখানো সেই পথ ও আদর্শে আমাদের চলতে হবে।তাঁর মেধা, সাহস ও দূরদর্শিতা অতুলনীয় ছিল। তিনি যে শিক্ষা, সাহস ও নির্দেশনা দিয়ে গেছেন, তা আমাদের বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলে আমরাও সফল হব।
আবু নাসিম ময়না শুধু একজন ব্যক্তি নয়, তিনি একটি বিপ্লবের নাম। জীবনের
প্রতিটি ক্ষেত্রে রেখেছেন সফলতার স্বাক্ষর। যৌবনে অস্ত্র হাতে ’৭১ সালে
দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন রণাঙ্গনের প্রথম সারির এই
যোদ্ধা। মেধা, সততা, পরিশ্রম ও সাহসিকতার সঙ্গে সাতক্ষীরার উন্নয়নে কাজ
করেছেন তিনি। দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রামী ছিলেন তিনি।
সাতক্ষীরায় রেল লাইন, বাইপাস সড়ক, মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন,
ভোমরায় পূর্ণাঙ্গ স্থল বন্দরসহ বিভিন্ন স্বপ্ন ছিল তার।
বক্তরা বলেন, আবু নাসিম ময়না গণমানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। গরীব অসহায় ও
সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। সচেতন মানুষদের উদ্বুদ্ধ করে বিভিন্ন
আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছেন। আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। কিন্তু
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। বীরমুক্তিযোদ্ধা আবু নাসিম ময়না
আজ আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তাঁর কর্মময় জীবন, সংগ্রামী চেতনা ও দরদি
মানসিকতা আমাদের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। তাঁর প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা।
শনিবার (১১ মার্চ) সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে বিশিষ্ঠ
রাজনীতিবীদ, জেলা নাগরিক কমিটির সাবেক আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু
নাসিম ময়নার সপ্তম মত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সাতক্ষীরা নাগরিক আন্দোলন ও শেখ
আবু নাসিম ময়না শীর্ষক ওই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা নাগরিক কমিটির
যুগ্ম-আহবায়ক শেখ আজাদ হোসেন বেলাল। আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য
রাখেন জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শেখ আজহার হোসেন। বরেণ্য অতিথি হিসেবে
বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের
সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, প্রফেসর আব্দুল হামিদ, জেলা নাগরিক
কমিটির সদস্য সচিব ও সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম
আজাদ, উন্নয়ন সংস্থা স্বদেশের পরিচালক ও মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র
দত্ত, জেলা বাসদের সমন্বয়ক নিত্যানন্দ সরকার, জেলা সিপিপির সভাপতি আবুল
হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক শেখ হারুন উর রশিদ, জেলা আওয়ামী
লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী আক্তার হোসেন, উদীচীর সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর
রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষক সম্পাদক এড: ওসমান গনি, বাংলাদেশ
মহিলা পরিষদ সাতক্ষীরা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জ্যোৎস্না দত্ত, জেলা
কৃষক লীগের সভাপতি মাহফুজা সুলতানা রুবি, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নাজমুন
নাহার মুন্নি, জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক অনিত কুমার মুখার্জী,
জেলা আওয়ামী লীগের জনসংখ্যা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: সুব্রত ঘোষ,
আওয়ামী লীগের সদস্য সৈয়দ জিয়াউর রহমান বাচ্চু, জেলা জাসদের সভাপতি ও
ওবায়দুস সুলতান বাবলু, জেলা শ্রমিক লীগের আহবায়ক আব্দুল্লাহ সরদার,
শ্রমিক নেতা রবিউল ইসলাম রবি, ভূমিহীন আন্দোলনের নেতা কাউছার আলী,
সুশীলনের সহকারী পরিচালক জিএম মনিরুজ্জামান, নদী বন ও পরিবেশ বাঁচাও
আন্দোলনের নেতা আদিত্য মল্লিক, ভূমিহীন নেতা আব্দুস সাত্তার, আওয়ামী লীগ
নেতা এড: আজহারুল ইসলাম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক
মুনসুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম
সদস্য সচিব আলিনুর খান বাবুল।