তালায় সুপেয় পানির সঙ্কট: ভুগছে জনসাধারণ
তালা প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জনসাধারণ তীব্র সুপেয় পানি সঙ্কটে পড়েছে। প্রায় চার লাখ জনবসতির এই উপজেলায় দিন দিন এই সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপজেলার প্রায় অধিকাংশ ইউনিয়নের মানুষ দূর দূরান্ত থেকে সুপেয় পানি সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। অনতিবিলম্বে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হলে এই সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়,প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারের হয় পানি কিনতে হচ্ছে না হলে এর পিছনে অতিরিক্ত সময় অতিবাহিত করতে হয়। গভীর নলকূপের পানি (বিশ লিটারের একটি জার)বহন খরচ বাবদ দশ থেকে পনেরো টাকা ব্যয় করতে হয়। এছাড়া পরিশোধন করা পানি প্রতি লিটার এক টাকা দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
সেই সাথে পরিবহন খরচ যোগ করলে লিটার প্রতি পানি প্রায় দুই টাকার মত খরচ পড়ে। উপজেলার বেশিভাগ বাজারে পরিশোধন করা পানি বিক্রি হচ্ছে। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে জীবনযাপন যেমন ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে অন্যদিকে সুপেয় পানি সঙ্কট মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।
ওয়াশ এবং পুকুর ফিল্টারের অবস্থা সচনীয়। এলাকার বেশির ভাগ জলাশয়ের পানি নেই। মৌসুমী বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে সুপেয় পানি একমাত্র উৎস গভীর নলকূপ। এছাড়া সঠিক রক্ষণাবক্ষেণ অভাবে অনেক ওয়াস এবং পুকুর ফিল্টার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে কথাগুলো বলছিলেন সরকারি প্রকল্পে কর্মরত নারায়ণ হোঁড়।
অন্যদিকে তালা,খলিলনগর,খলিশখালী,চাটকাটী সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারে এ সকল ছোট ছোট অসংখ্য পানির ফিল্টার স্থাপন করে জমজমাট সুপেয় পানির ব্যবসা করছে এমনটি বলছিলেন চা বিক্রেতা আমিন গাজী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষিকা আক্ষেপ করে বলেন, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দাম বৃদ্ধির কারণে আমাদের মত মধ্য আয়ের মানুষের জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়ে। চালের দাম যখন ৪০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে ছিল তখন যে বেতন ছিল আমাদের এখনও সেই বেতনে চলতে হয়। শিক্ষকতার পাশাপাশি আমি একজন গৃহিণী। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে পানি জন্য আগে থেকে বলে রাখতে হয়। তারপরও আমরা সুপেয় পানি সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে দিন যাপন করছি। আগত রমজানে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে সেটাই ভাবনার বিষয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: রাজিব সরদার জানান,সুপেয় পানি সঙ্কট এ অঞ্চলের একটি অনেক বড় সমস্যা। জলাশয়ে পানি না থাকায় চলতি মৌসুমে সুপেয় পানি সঙ্কটের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। জনসাধারণের ভরসা এখন গভীর নলকূপে। তিনি আরও বলেন, গভীর নলকূপের পানিতে অনেক সময় আর্সেনিক থাকে। জালালপুর ইউনিয়নের প্রায় দুই থেকে তিন বছর আগে আর্সেনিকের কারণে একই পরিবারের তিন জনের মৃত্যু হয়।
এছাড়া এ অঞ্চলের পানিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন বিদ্যমান। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন গভীর নলকূপ নেই। প্রতি বছর আমরা এমপি মহোদয় কাছে চাহিদাপত্র পাঠিয়ে থাকি। এবারও পাঠানো হয়েছে। সুপেয় পানি সঙ্কটের কারণে চিকিংসা নিতে আসা রোগীরা বিকল্প উপায়ে পানি সংগ্রহ করে থাকে। বিষয়টি নিয়ে আমাদেরও বিড়ম্বনায় পড়তে হয় বলেন তিনি।