পাঁচ কোটি টাকা নিয়ে উধাও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শান্ত

অনলাইন ডেস্ক :

এলাকার বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ৫ কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ-সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শান্ত কুমার রায়।

এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ৭ ব্যক্তি নির্মল রায় ও তার ছেলে শান্ত রায়কে অভিযুক্ত করে মঙ্গলবার রাতে নবীনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

জানা যায়, শান্ত ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি এলাকায় সিগারেটের এজেন্ট ও স্বর্ণের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। চট্টগ্রামে তার বাবার কয়েকটি স্বর্ণের দোকান রয়েছে এমন কথা এলাকায় চাউর ছিল।

সেই নামডাক ব্যবহার করে তার বাবার সহযোগিতায় এবং কিছু নেতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে শান্ত এলাকায় বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার ঘনিষ্ঠজনদের ব্যাংকের রেটের চেয়ে উচ্চ লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সিগারেট ব্যবসা ও স্বর্ণের ব্যবসায় ইনভেস্ট করতে বলেন। অনেকেই তার ফাঁদে পা দেন। এভাবে নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ বাজার থেকে অন্তত ৫ কোটি টাকা হাতিয়ে পালিয়ে যান তিনি।

ভুক্তভোগীরা জানান, বাজারের অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংকে জমা না রেখে শান্তর হাতে টাকা তুলে দেন। কয়েক বছর ধরে তার সঙ্গে লেনদেন ঠিকভাবেই চলছিল। শনি ও রোববার অনেকের টাকা ফেরত দেওয়ার তারিখ ছিল, ওই দিন থেকে শান্ত উধাও, তার মোবাইল ফোনও বন্ধ।

শুরু হয় কানাঘুষা, বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক টাকা নেওয়ার তথ্য। সোমবার তার মোবাইল ফোনের সর্বশেষ লোকেশন ছিল কুমিল্লার সীমান্ত এলাকায়। অনেকের ধারণা, শান্ত ভারতে পালিয়ে গেছেন।

অভিযোগকারীরা হলেন-নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামের হক সাব পাবেন ৪০ লাখ টাকা, মো. সুজন মিয়া (২০ লাখ টাকা), আব্বাস উদ্দিন (২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা), সগির মিয়া ১২ লাখ (টাকা), শ্যামল চন্দ্র দাস (৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা), অক্লান্ত চন্দ্র দেব নাথ (৩ লাখ টাকা) ও নিখলী গ্রামের খোরশেদ আলম (৫ লাখ টাকা)।

আরও কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত হলেন-থোল্লাকান্দি গ্রামের বিকাশ ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম (৩৯ লাখ টাকা), একই গ্রামের আতিকুর রহমান রনি (৩ লাখ টাকা), বড়িকান্দি ইউনিয়নের মুক্তারামপুর গ্রামের শাহ জালাল (৫৩ লাখ টাকা), ধরাভাঙা গ্রামের বাবলু মিয়া (১১ লাখ টাকা), বাড়াইল গ্রামের মাহফুজুর রহমান (৩ লাখ টাকা), নরসিংদীর মুরাদনগরের বাদল মিয়া (৫ লাখ টাকা)।

এছাড়া সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পদ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে রিফাত আহম্মেদ থেকে ৮ লাখ টাকা, বড়িকান্দি ইউনিয়নের ছাত্রলীগের সভাপতি পদ দেওয়ার কথা বলে জাহিদুল ইসলাম থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন শান্ত। ভুক্তভোগী সবাই শান্ত ও তারা বাবার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

অভিযোগকারী মো. হক সাহেব বলেন, শান্ত ও তার বাবা ব্যবসার কথা বলে আমার কাছ থেকে প্রায়ই টাকা নিতেন, আবার ফেরতও দিয়ে দিতেন, সর্বশেষ ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন, অন্য কারও কাছ থেকে টাকা নিতেন এটা আমার আগে জানা ছিল না, এখন শুনতে পাচ্ছি আমার মতো ৩০ থেকে ৪০ জনের কাছ থেকে অন্তত ৫ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন শান্ত।

মো. সুজন মিয়া বলেন, শান্ত আমার বন্ধু ছিল, তার বাবা চট্টগ্রামে স্বর্ণের ব্যবসা করে, স্বর্ণ ক্রয় করার কথা বলে কয়েক দিনের জন্য আমার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা নিয়েছে, টাকাগুলো আমি বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করে দিয়েছিলাম, শনিবার আমার টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু রাত থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। শ্যামল চন্দ্র দাস বলেন, শান্তকে অনেক বিশ্বাস করতাম বলেই তাকে আমি ৮ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। শাহ জালাল বলেন, আমি বিকাশের ব্যবসা করি, স্বর্ণের চালান এসেছে বলে আমার কাছ থেকে ৫৩ লাখ টাকা নিয়েছে চেক ও স্ট্যাম্পের মাধ্যমে।

অনেকের ধারণা, টাকাগুলো আত্মসাৎ করতে শান্ত চোরাই পথে ভারতে পালিয়ে গেছেন। শান্ত টাকা নেওয়ার সময় ব্যাংকের চেক ও স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন, আবার অনেকে কোনো ডকুমেন্ট ছাড়াই তাকে টাকা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুউদ্দিন আনোয়ার বলেন, মঙ্গলবার রাতে বড়িকান্দি ইউনিয়নের থোল্লাকান্দি গ্রামের নির্মল রায় ও তার ছেলে শান্ত কুমার রায়ের বিরুদ্ধে ৭টি অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)