শ্যামনগর শিক্ষক বাশারের আত্মহত্যা মামলার আসামী কর্তৃক বাদীকে মামলা তুলে নিতে হত্যার হুমকি
নিজস্ব প্রতিনিধি :
সাতক্ষীরা শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী এসআর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাসারের আত্মহত্যার ঘটনায় গত বুধবার (৪ জানুয়ারি) রাতে মৃতের স্ত্রী নুরুন্নাহার পারভীন বাদী হয়ে শ্যামনগর থানায় সাতজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৪)। উক্ত মামলায় ৬ জন আটক হয়ে কারাগারে জান এবং জামিনে মুক্তি পেয়ে আসামি এবং আসামীদের স্বজনদের প্রকাশ্যে ও বিভিন্ন মাধ্যমে মামলা তুলে নিতে খুন জখমসহ বাদির পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
মানসিক ও শারিরীকভাবে চাপ প্রয়োগ করে আত্মহননের প্ররোচনায় জড়িত একাধিক মামলার আসামী কৈখালী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমসহ অন্যান্য আসামীদের হুমকির মুখে কৈখালী গ্রামের নুরুল ইসলাম সরদারের কন্যা নুরুন্নাহার পারভীনের ।
সম্প্রতি কৈখালী এস আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ধর্ষণ, মানব পাচার ও পুলিশের উপর হামলাকারীসহ একাধিক মামলার আসামী আব্দুর রহিম। অযোগ্য ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রহিমসহ তার অপকর্মের সহযোগীরা দীর্ঘ ১০ মাস ধরে মানসিক ও শারিরীকভাবে স্কুলে ও স্কুলের বাইরে নির্যাতন চালিয়ে আসছিল।
এছাড়া মারুফা নামে এক মহিলাকে দিয়ে ষড়যন্ত্র মূলক মিথ্যা বানোয়াট মামলা সৃষ্টি করে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে। এমনকি ওই মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতির কথা বলে আব্দুর রহিম, আলী মোতুর্জা, আব্দুল মজিদ, সালাউদ্দীন, আব্দুল মান্নান, মোছা: মারুফা এবং জাকির গাজী প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে এবং মোবাইলের মাধ্যমে ৫০ লক্ষ টাকা দাবী করে আসছিলেন । নিরুপায় হয়ে আব্দুর রহিমের হাতে ৫ লক্ষ টাকা নগদ প্রদান করে কৈখালী এসআর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাসারে ।
টাকা পেয়ে আরো ৪৫ লক্ষ টাকা দাবি করে। ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে স্কুলের অফিস রূমের মধ্যে উল্লোখিত ব্যক্তিরা মারপিট করতে উদ্যাত হয় এবং খুন জখমসহ বিভিন্ন হুমকি প্রদর্শণ করে। তাদের কারনে মানসিকভাবে ভীতুসন্ত্রস্থ হয়ে পড়ে তিনি অসুস্থ হওয়ার পর সভাপতি আব্দুর রহিম এর বরাবর ছুটির দরখাস্ত করলে পাষান্ড আব্দুর রহিম তা মঞ্জুর না করে ২ জানুয়ারি‘২৩ তারিখে বিধি বর্হিভূতভাবে কেন চাকরীচ্যুত করা হবে না মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) প্রদান করেন।
শোকজ নোটিশ প্রাপ্তির পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে হয়ে পড়ে একপর্যায়ে উপায়ন্তর হয়ে গত ৪ জানুয়ারি‘২৩ তারিখে নিজ বাড়ীতে কেউ না থাকার সুযোগে গোপনে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। একজন প্রধান শিক্ষককে পরিকল্পিতভাবে মান হানি করে আত্মহত্যায় বাধ্য করেছে উল্লেখিত ব্যক্তিরা বলে দাবি করছেন তার পরিবার ও এলাকাবাসী।
উল্লেখিত ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তির নিশ্চিতকরাসহ তার পরিবারের নিরাপত্তার দাবিতে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তার পরিবারের স্বজনরা।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে পরিচালনা পর্ষদের অর্থ আত্মসাতের পর প্রধান শিক্ষককে বলির পাঠা বানানোর ঘটনার বিশদ তদন্ত দাবি করেছে উপজেলায় কর্মরত শিক্ষকরা।
শ্যামনগর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রধান শিক্ষক কৃষ্ণেন্দু মুখার্জী জানান, পরিচালনা পর্ষদের চাপের কারণে আবুল বাসার আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। সদ্য গঠিত কমিটি তার উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করায় তিনি কয়েকদিন আগে থেকে সহকর্মীদের কাছে নিজের অসহায়ত্বের বিষয়টি জানিয়ে আসছিলেন। আবুল বাসারের আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনার সঙ্গে জড়িতদের পাশাপাশি ঐ বিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়ে তদন্তের দাবি জানান তিনি।