দেবহাটায় ইছামতির বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন, আতঙ্কে এলাকাবাসি

মোমিনুর রহমান,দেবহাটা :

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)-১ এর পোল্ডার-৩ এর আওতাধীন দেবহাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভাতশালা এলাকায় বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারনী ইছামতি নদীর প্রবল জোয়ারের তোড়ে সেখানে প্রায় ১৫০ মিটার এলাকা জুড়ে বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যেই বেড়িবাাঁধের কিছু অংশ নদী গর্ভে ধসে পড়েছে। গত কয়েকদিন ধরে বেড়িবাঁধে ক্রমশ ফাঁটলের পরিমান বাড়ছিল।

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে ফাঁটল গুলো ভয়াবহ ভাঙনে রুপ নিতে দেখে এলাকাবাসি। ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধের পাশ^বর্তী বাড়িঘর জুড়ে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতেকরে যেকোন মুহুর্তে বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের এলাকা প্লাবিতের আশঙ্কায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন ভাঙন কবলিত এলাকায় বসবাসকারী মানুষেরা। এদিকে বেড়িবাঁধে ভাঙনের খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মুজিবর রহমান ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বকুল সকালেই ঝুকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

ইছামতি পাড়ের বাসিন্দা ফেরদৌসী বেগম বলেন, ইতোপূর্বে পাশ^বর্তী সুশীলগাতি, কোমরপুর ও নাংলা সীমান্তে ইছামতি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়। প্রতিবারই বেড়িবাঁধ ভাঙলে প্রায় মাসখানেক প্লাবিত এলাকা পানিতে নিমজ্জিত থাকে। এভাবে যদি বারবার বেড়িবাঁধ ভাঙতে থাকে তাহলে বসতবাড়ি হারিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে সীমান্তের বাসিন্দাদের।

তারা ভাতশালার ভাঙন কবলিত এলাকায় জরুরিভাবে কংক্রিটের ব্লক, বালুভর্তি বস্তা ডাম্পিংয়ের পাশাপাশি নদী ভাঙনরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, বাঁধ ভাঙার আগে কার্যকর পদক্ষেপ নিলে আর জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়না। কিন্তু পাউবো কর্তৃপক্ষ বাঁধ ভেঙে গেলেই ভাঙন কবলিত এলাকায় সেখানে কাজ শুরু করেন। আগে থেকে তারা কোন পদক্ষেপ নেন না। সাতক্ষীরা পাউবোর কিছু অসাধু কর্মকর্তার গাফিলাতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে উপকূলের অধিকাংশ এলাকার বেড়িবাঁধের বর্তমান অবস্থা খুবই নাজুক। ফলে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ হলেই সামান্য জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ ভেঙে জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়।

সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বকুল বলেন, ভাতশালা এলাকায় ইছামতির বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যেই বেড়িবাঁধের বেশিরভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাঁধ ভাঙনের ভয়ে আতঙ্কিত এলাকাবাসি অন্যত্র অবস্থানের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বেড়িবাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলাতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় পাউবো’র বেড়িবাঁধ সংষ্কারে কোন বরাদ্দ হলে সংশ্লিষ্ট সেকশান অফিসারদের (এসও) সাথে ঠিকাদাররা যোগসাজসে দায়সারা গোছের কাজ করে চলে যান। কোন কোন ক্ষেত্রে ঠিকাদারের কাছ থেকে সংষ্কার কাজ কিনে নিয়ে পাউবোর এসও’রা নিজে তা লেবার সর্দ্দারের কাছে ফের বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ পকেটস্থ করেন।

যে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ সংষ্কার কাজের সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন তদারকি থাকে না। ফলে বরাদ্দের অধিকাংশ টাকা লোপাট হয়ে যায়। কাজ হয় যৎসামান্য। উপকূলের মানুষের জানমাল রক্ষায় ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ সঠিক ভাবে করতে তিনি এসব দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহিৃত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

দেবহাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মুজিবর রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। জরুরি ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও  কংক্রিটের ব্লক ডাম্পিংয়ের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড’র সংশ্লিষ্ট সেকশন অফিসার (এসও) সাইদুর রহমান বলেন, ভাঙন কবলিত বেড়িবাঁধ পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের মাত্র তীব্র হওয়ায় কেবলমাত্র কংক্রিটের ব্লক এবং বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে তা রোধ করা কষ্টসাধ্য। মুলত ভাঙন কবলিত ওই এলাকাটিতে নতুন করে রিং বাঁধ দেয়া প্রয়োজন।

কিন্তু স্থানীয়রা রিং বাঁধ নির্মানের পক্ষে মতামত দিচ্ছেননা। তবুও শীঘ্রই বালুর ব্যাগ ও ব্লক ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)