কালীগঞ্জের মোজাহার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের  নিয়োগ পরীক্ষায় অনিময় ও দুর্নীতির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সাতক্ষীরা কালীগঞ্জের মোজাহার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসহ তিনটি পদে নিয়োগে অনিময় ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর্থিক সুবিধা নিয়ে এ নিয়োগ বোর্ড পরিচালনা করা হয়েরছ।

শুক্রবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষে এ নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ বোর্ডের পাঁচ সদস্যের মধ্যে দুইজন রেজাল্টশিলে দুই সাক্ষর না করার নিয়োগ প্রক্রিয়া বৈধ হবে না বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অজিত কুমার সরকার।

প্রধান শিক্ষক পদের একজন পরীক্ষার্থী সফিকুর রহমান জানান, কালীগঞ্জের মোজাহার মেমোরিয়াল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ কয়েকটি পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। সেই অনুযায়ী তিনি আবেদন করেন। কিন্তু প্রথম থেকেই পরীক্ষা নিয়ে থেকে লুকোচুরি শুরু করা হয়। একর পর এক তিনবার পরীক্ষার দিন পিছানো হয়।

একপর্যায়ে পরীক্ষার পিছিয়ে তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২০২২ সালের ৮ আগস্ট। ওইদিন পরীক্ষা হলেও প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক ও নৈশ প্রহরী পদে কেউই উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ফলে আবারও ৯ আগস্ট একটি ঢাকার একটি দৈনিকে ও একটি স্থানীয় সাতক্ষীরার দৈনিকে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপনের পর চলতি বছর ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি পরীক্ষার দিন নিধারণ করা হয়। সফিকুর রহমান অভিযোগ করেন, তাকে ১৫ জানুয়ারি চিঠি দিয়ে জানানো হয় তার আবেদনপত্র বাতিল করা হয়েছে। কেন বাতিল করা হয়েছে জানতে চেয়ে তিনি সাতক্ষীরা জজ আদালতের আইনজীবী আব্দুস সোহবানকে দিয়ে নোটিশ পাঠায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পরীক্ষার মাত্র ৪৮ ঘন্টা আগে ১৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় চিঠি দিয়ে বলা হয় তিনি পরীক্ষা অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু ২১ জানুয়ারি ওই বিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য হাজির হলে অনিবার্য কারণ দেখিয়ে পরীক্ষা আবার পিছিয়ে ২৫ জানুয়ারি নির্ধারণ করা হয়।

এই পরিপ্রেক্ষিতে তিনিসহ আটজন পরীক্ষার্থী সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন বার বার পরীক্ষার তারিখ পিছানোর কারণ তদন্ত ও ২৬ জানুয়ারি সরস্বতী পূজা হওয়ায় ২৫ জানুয়ারি পরীক্ষা না নিয়ে কার্যদিবসে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২৪ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের পক্ষে সহকারী কমিশনার মো: আল আমিন সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অজিত কুমার সরকারকে চিঠি দেন। কিন্তু তিনি তদন্ত না করেই শুক্রবার ছুটিরদিন পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেন।

শুক্রবার ডিজি প্রতিনিধি হিসেবে পরীক্ষা নিতে যান তালা সরকারি শহীদ আহম্মদ আলী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অলোক তরফদার। আগে থেকে অভিযোগে উঠে মোজাহার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক পদে আব্দুস সেলিম,সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে সাইফুল ইসলাম ও নৈশ প্রহরী পদে মনিরুল ইসলাম।

স্থানীয় কয়েকটি অন লাইনে ও পত্রিকায় এ সম্পর্কিত প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়। সেইসব প্রার্থীদের কাছ থেকে ডিজি প্রতিনিধি আর্থিক সুবিধা নিয়ে নিজের ইচ্ছামতো পরীক্ষা নেন। প্রধান শিক্ষক পদের প্রার্থী পার্থ সারথি সেন জানান, পরীক্ষায় অনিময় ও দুর্নীতি হবে প্রকাশ হয়ে পড়ায় তিনিসহ ১১জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছয়জন অংশ নেয়নি। একই অবস্থা সহকারী প্রধান শিক্ষক পদেও।

সহকারী শিক্ষক পদের প্রার্থী হয়েও পরীক্ষায় অংশ না নেওয়া শিশির দত্ত জানান, আগে থেকেই তারা জানতে পেরেছিলেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নেবেন। এ জন্য ওই পদের ১৩জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে আটজন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়নি। পাঁচ সদস্য নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শম্পা গোস্বামী জানান, নিয়ম হচ্ছে বোর্ডের সকল সদস্যের কাছ থেকে আলাদা আলাদা করে প্রশ্ন নিয়ে পরীক্ষার জন্য সম্বলিতভাবে একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করা।

কাজটি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব হিসেবে তারই করার কথা। কিন্তু ডিজি প্রতিনিধি অলোক তদফদার তাদের কাছ থেকে প্রশ্ন নিলেও তিনি আগে থেকে পকেট কর নিয়ে আসা প্রশ্নে পরীক্ষা নেন। একই কথা বলেন বোর্ডে অপর সদস্য ওই বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোসলেম আলী। তিনি অভিযোগ করেন পরীক্ষায় আর্থিক লেনদেন হয়েছে। এমনকি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব ও তার মুঠোফোন কৌশলে ডিজি প্রতিনিধি অলোক তরফদার নিয়ে নেয়।

পরীক্ষা যথাযথ না হওয়ায় তিনি ও শম্পা গোস্বামী রেজাল্টশিটে সাক্ষর করেননি। নিয়োগ বোর্ডের সদস্য কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, প্রশ্ন করার সময় নিয়োগ বোর্ডের সদস্য সচিব শম্পা গোস্বামী প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু অনিময় ও দুর্নীতি সম্পর্কে তার কাছে কেউ অভিযোগ করেননি।

পরে শুনেছেন নানা অভিযোগে শম্পা গোস্বামী ও মোসলেম আলী পরীক্ষার রেজাল্টশিটে সাক্ষকর করেননি। ডিজি প্রতিনিধি অলোক কুমার তরফদারের সঙ্গে যোগাযোগ কারার চেষ্টা করলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অজিত কুমার সরকার জানান, রেজাল্টশিটে দুইজন নয়, আইন অনুযায়ী একজন স্বাক্ষর না করলে ফলাফলের বৈধতা হয় না।

অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন। এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, পরীক্ষার্থীদের মূল আবেদন ছিল সরস্বতী পূজার জন্য পরীক্ষার দিন পুন:নিধারণ করা, তাই করা হয়েছে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)