যশোরে স্বামীকে ফাঁসাতে গিয়ে কারাগারে ঠাঁই হলো স্ত্রীর
নিউজ ডেস্ক:
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলায় স্বামীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা করে ফেঁসে গেছেন স্ত্রী। সোমবার স্বামীকে খালাস দিয়ে বাদীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক নিলুফার শিরীন।
কারাদণ্ডপ্রাপ্ত স্ত্রী রাবেয়া আক্তার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর পালপাড়ার একরাম আলীর মেয়ে। স্বামী আজম মাহমুদ যশোরের মণিরামপুর উপজেলার কাশিমপুর গ্রামের বজলুর রশিদের ছেলে। তিনি তখন কুষ্টিয়ার খোকসা থানায় এসআই পদে কর্মরত ছিলেন।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ১১ জুলাই রাবেয়া তার পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর বিরুদ্ধে যশোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল-২ এ মামলা করেন। তার অভিযোগ ছিল, বিয়ের পর থেকে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে আসছিলেন আজম মাহমুদ। তিনি বিভিন্ন সময় ওই টাকার জন্য নির্যাতন করতেন বলে মামলায় উল্লেখ করেন স্ত্রী।
মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, ২০১৯ সালের ২৭ জুন আজম মাহমুদ স্ত্রী রাবেয়া আক্তারকে মারধর করে আহত করেন। এরপর শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টাও করেন তিনি। পরে রাবেয়াকে উদ্ধার করে স্বজনরা যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তিনি দুইদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর হাসপাতাল থেকে জখমি সনদ সংগ্রহ করে মামলা করেন স্ত্রী রাবেয়া আক্তার।
বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে ঝিকরগাছা উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আজম মাহমুদের বিরুদ্ধে স্ত্রীকে মারধরের বিষয়টি সত্য। এরপর ২০২১ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আজম মাহমুদকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক নিলুফার শিরীন।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন আজম। আপিলে জাল জখমি সনদ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়। ২০২২ সালের ১৪ জুন বিচারপতি এ এন এম বশির উল্লাহ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে নিম্ন আদালতকে বিষয়টি যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে জখমি সনদ যদি জাল হয় তাহলে আসামির সাজার আদেশ বাতিল করে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
২০২২ সালের ১৪ জুন বিচারপতি এএনএম বশির উল্লাহ উভয়পক্ষের শুনানি শেষে নি¤œ আদালতকে বিষয়টি যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। একই সাথে জখমি সনদ যদি জাল হয় তাহলে আসামির সাজার আদেশ বাতিল করে বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এটি করতে উচ্চ আদালত থেকে ছয়মাস সময় দেয়া হয়।
উচ্চ আদালত থেকে নির্দেশ পেয়ে যশোরের নারী শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক পিবিআইকে তদন্তের আদেশ দেন। জখমি সনদটি যে জাল ছিল সেটি পিবিআইয়ের তদন্তে প্রমাণিত হয়। ২০২২ সালের ১ ডিসেম্বর বিষয়টি আদালতকে অবহিত করে পিবিআই। এরপর চলতি বছরের গত ২৩ জানুয়ারি আদালত স্বামী আজম মাহমুদকে খালাস দিয়ে স্ত্রীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন। আদালত থেকে আদেশ পেয়ে ২৯ জানুয়ারি স্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন স্বামী। এরপর আদালত রাবেয়া আক্তারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। সোমবার রাবেয়া আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করলে বিচারক তা নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।
যশোরের কোর্ট ইন্সপেক্টর রোকসানা খাতুন বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর আদালতের আদেশে রাবেয়া আক্তারকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।