প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ আত্মহনন আসামী ও বাদিপক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মসুচি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :

সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কৈখালি সামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদ আত্মহননের ঘটনায় মামলার আসামী পক্ষ ও বাদি পক্ষ পাল্টাপাল্টি কর্মসুচি পালন করেছে।

শ্যামনগর উপজেলার জয়াখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মোড়ে বুধবার সকাল ১১টায় আব্দুর রশিদ আত্মহনন মামলার আসামীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে কৈখালি ইউনিয়নবাসীর উদ্যোগে এক মানববন্ধন কর্মসুচি পালিত হয়। মানববন্ধন চলাকালে বক্তব্য দেন প্যানেল চেয়ারম্যান শাহীনুর আলম শাহীন, কেখালি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিমের স্ত্রী রোকসানা পারভিন, ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ, সমসের আলী রাশিদুল ইসলাম রাবেয়া কাদের, তসিম মনি, মাজিদা খাতুন ডলি, মাহাফুজুর রহমান ও হুমায়ুন কবীর প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ২০২২ সালের ১৮ ফেব্র“য়ারি পশ্চিম কৈখালি গ্রামের বিমল মিস্ত্রীর ছেলে দীলিপ কুমার মিস্ত্রীকে অফিস সহায়ক, তার বউদি মিনতি রানী মিস্ত্রীকে আয়া, একই গ্রামের নেপাল মণ্ডলের ছেলে নিমাই কুমার মণ্ডলকে নৈশ প্রহরী এবং যাদবপুর গ্রামের আব্দুল জলিলের ছেলে জাহিদ হাসানকে ল্যাব সহকারি হিসেবে কৈখালি সামছুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়।

ওই সময় বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ছিলেন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম। ওই সময় প্রধান শিক্ষক আব্দুর রশিদের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্যের নামে আদায় করা ৫২ থেকে ৫৪ লাখ টাকা সভঅপতি রেজাউল করিম পকেটস্ত করেছেন।

ঝামেলা এড়াতে রেজাউল করিম ওই টাকার একটি অংশ সাতক্ষীরার এক এমপিকে দিয়ে খুশী করেছেন। নিয়োগ বাণিজ্যে বঞ্চিত হওয়া প্রার্থীরা টাকা ফেরৎ চাইলে প্রধান শিক্ষক সভাপতি রেজাউল করিমকে অবহিত করলে তিনি তাকে হেঁকে বের করে দেন। এরপর থেকে প্রধান শিক্ষক মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। একইসাথে আয়াপদে ফাতেমার চাকুরি দেওয়ার নামে নেওয়া পাঁচ লাখ টাকা ফেরৎ না দেওয়া ও তাকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় হাইকোর্ট থেকে অন্তবর্তীকালিন জামিন নিয়ে ২৭ ফেব্র“য়ারি নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে স্থায়ী জামিন নিতে গেলে জেলে যেতে পারেন তা নিয়ে প্রধান শিক্ষক একেবারেই ভেঙে পড়েন। দুইবার তিনি আত্মহননের চেষ্টা করেন।

একপর্যায়ে তিনি বাড়ি চেলে শ্যানগরের গোপালপুরে শালিকার বাড়িতে স্বপরিবারে অবস্থান করছিলেন। এ সময় রেজাউল করিম কোর্টের মামলা ফতেমাকে দিয়ে মিটিয়ে দেওয়ার নাম করে ৫ লাখ ও সাতক্ষীরা কোর্ট থেকে মামলা তুলে দেওয়ার নাম করে রেজাউল করিমের জামাতা ৮০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরবর্তীতে আব্দুর রহিম সভাপতি হয়ে নিয়োগ বাণিজ্যের একটি অংশের টাকা বিদ্যালয়ের উন্নয়ন খরচের জন্য বরাদ্দ থাকলেও একটি কানাকড়ি খরচ না করায় বিদ্যালয়ের মাসিক মিটিংএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ি তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়।

একপর্যায়ে রেজাউল করিমের কাছ থেকে টাকা না নিতে পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হন আব্দুর রশিদ। এই সুযোগকে মওকা হিসেবে কাজে লাগিয়ে জামাতার মাধ্যমে আব্দুর রহিমসহ সাতজনের নামে এজাহার লিখিয়ে নিয়ে ৪ জানুয়ারি দুপুরে মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা কাটতে না কাটতে রাত ১০টায় শোকার্ত নুরুন্নাহার পারভিনের কাছ থেকে সাক্ষর করিয়ে নিয়ে নিয়োগ বানিজ্যে সুবিধাভোগী সাংসদকে ব্যবহার করেই মামলা রেকর্ড করান রেজাউল করিম। প্রধান শিক্ষক আত্মহননের ঘটনা যথাযথ তদন্ত হলে আসল সত্য বেরিয়ে পড়বে। তারা প্রধান শিক্ষকের আত্মহননের সঙ্গে জড়িত মূল হোতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে কারাগারে অবস্থানরত রহিম চেয়ারম্যানসহ ছয় জনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

এদিকে প্রধান শিক্ষককের আত্মহনেনর ঘটনায় কারাগারে থাকা ছয়জনসহ ফাতেমা খাতুনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বুধবার দুপুর ১২টায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সস্মেলন করেছেন মৃতের স্ত্রী নুরুন্নাহার পারভিন। এ সময় তার দ্ইু ছেলে মেহেদী হাসান ও স্বাধীন ছাড়াও তার শ্বশুর নুরুল উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সস্মেলনে আব্দুর রশিদ আত্মহত্যার জন্য কৈখালি ইউপি চেয়ারম্যানসহ মামলায় উলে­খিত সাতজনকে দায়ী করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। আসামীরা কারাগারে থাকায় তাদের আত্মীয়রা মৃতের পরিবারের সদস্যদের হুমকি ধামকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)