ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে ব্লাক মেইলের মূলহোতা রাজীব জেলহাজতে

রঘুনাথ খাঁ,সাতক্ষীরা :

প্রেমের অভিনয় করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আত্মীয়াকে ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও চিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করে ব্লাক মেইল করার অভিযোগে দায়েরকৃত পর্ণগ্রাফি প্রতিরোধ আইনে গ্রেপ্তারকৃত রাজীব হোসেনকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। শনিবার সকালে তাকে সদর হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর আদালতে পাঠানো হয়।

গ্রেপ্তারকৃত রাজীব হোসেন (৩০) সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কাওনডাঙা গ্রামের সামছুর রহমানের ছেলে। এদিকে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণকারি রাজীব হোসেন ও বাঁশদাহ ইউপি’র সাােবক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ওই নির্যাতিতার আত্মীয় হওয়ায় তাকে, তার বাবা ও বড় মামাকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে ওই নির্যাতিতাকে আত্মগোপন করে থাকতে হচ্ছে। নির্যাতিতার বাবাকে এলাকা ছাড়া হতে হয়েছে। বড় মামা সাবেক ইউপি সদস্য ইচ্ছামত বাড়ির বাইরে যেতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদাহ ইউনিয়নের একটি গ্রামের ২২ বছরের এক নির্যাতিতা নারী জানান, তার বড় মামা সাবেক ইউপি সদেস্যর প্রথম স্ত্রীর আত্মীয় পার্শ্ববর্তী কাওনডাঙা গ্রামের সামছুর রহমানের ছেলে রাজীব হোসেন(৩০)। মামার ছোট স্ত্রীর আত্মীয় বাঁশদাহ ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন।

ওই নির্যাতিতা নারী আরো জানান, আত্মীয়তার সুবাদে রাজীব হোসেন তার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে বিয়ের কথা বলে আপত্তিকর সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাইতো। মা আট বছর আগে সৌদি আরবে চলে যাওয়ায় তার নিরাপত্তার কথা ভেবে নির্মাণ শ্রমিক বাবা তার নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রথমে মামার বাড়ির পাশে ও পরে শহরে ভাড়া বাসায় রাখতেন। একপর্যায়ে চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে রাজীব হোসেন তাদের মুন্সিপাড়ার বাসায় তাকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে। বাধ্য হয়ে বাবা তাকে নিয়ে মামার বাড়ির পাশে বাসা ভাড়া নেন।

গত ১৩ আগষ্ট রাত ১১ টার দিকে বাসার সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে মায়ের সঙ্গে কথা বলার সময় রাজীবসহ দুইজন তাকে জোরকরে ধরে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়। পরপর দুই দিন তাকে আটক রেখে ধর্ষণ করে রাজীব। জাকির হোসেন তার বন্ধু রাজীবের মোবাইল ফোন দিয়ে ধর্ষণের ভিডিও চিত্র ধারণ করে। বাবা ও মামারা তাকে খোঁজাখুজি শুরু করলে ১৫ আগষ্ট রাত ২টার দিকে তাকে খালার বাড়ির পাশে ফেলে রেখে চলে যায়। ধর্ষণের ছবি ইন্টারনেটে ও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে রাজীব তাাকে বিভিন্ন স্থানে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে।

বাধ্য হয়ে তিনি বাদি হয়ে ১৮ আগষ্ট রাজিবসহ দুইজনের নাম উলে­খ করে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(১),৭/৩০ ধারায় মামলা দায়ের করেন রাজীব জামিনে মুক্তি পেয়ে তার বন্ধু হাওয়ালখালি গ্রামের জাকিরকে নিয়ে তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া শুরু করে।

রেউই বাজারের নয়নের কম্পিউটার দোকান থেকে তার নগ্ন ভিডিও চিত্র ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কয়েক দফায় ৫০ হাজার টাকা আদায় করে রাজীব। তার ধর্ষণের ভিডিও চিত্র বিভিন্ন গণযোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার নাম করে বাঁশদাহ ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহি®কৃত সভাপতি মোশারফ হোসেন গত ১৫ সেপ্টেম্বর মোবাইল ফোনে তাকে কু’প্রস্তাব দেয়। তার ডাাকে সাড়া না দেওয়ায় মোশাররফ তার নিজ ফেইসবুক আাইডি থেকে অশ্লীল ভাষা লিখে তাকে ম্যাসেজ দিতো।

গত বুধবার রাত ৮টায় তিনি রাজীব, জাকির ও মোশাররফ হোসেনের নাম উলে­খ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ রাজীবকে আটকের পর নয়নের কম্পিউটার, রাজীবের মোবাইল ফোন জব্দ করে নগ্ন ভিডিও চিত্র পায়। বুধবার পুলিশ মোশাররফ ও রাজীবকে গ্রেপ্তার করে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে গ্রেপ্তারকৃত রাজীবকে পুলিশ প্রহরায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত মোশাররফ হোসেনকে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

শনিবার দুপুরে এ প্রতিবেদক ও মানবাধিকার কর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত সরেজমিনে নির্যাতিতা ওই নারীর আত্মীয়ের বাড়িতে গেলে ওই নারী ও তার স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, মোশাররফ হোসেন ও রাজীবকে গ্রেপ্তারের র্প তাদের স্বজনরা তাকে, বাবা ও মামাকে জামিন করিয়ে আনার জন্য হুমকি ধামকি অব্যহত রেখেছে। যে কারণে তাকেও আত্মগোপানে থাকতে হচ্ছে। বাবাও দূরবর্তী স্থানে যয়ে কাজ করছেন। বড় মামা ইচ্ছামত বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। মামাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু জিহাদ ফকরুল আলম খান বলেন, এপেন্ডিসাইটসের ব্যাথার কারণে গ্রেপ্তারকৃত রাজীবকে পুলিশ প্রহরায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। শনিবার হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ার পর রাজীব হোসেনকে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামী জাকিরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। হুমকির বিষয়ে তার কাছে লিখিত অভিযোগ জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)