রাসিক নির্বাচনে নারী কাউন্সিলর পদে লড়বেন তৃতীয় লিঙ্গের ২ জন

নিউজ ডেস্ক:

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিল নির্বাচনে অংশ নেবেন হিজড়া জনগোষ্ঠীর দুজন। তারা আগামী রাসিক নির্বাচনে সংরক্ষিত তিনটি করে ছয়টি ওয়ার্ডের নির্বাচনে অংশ নেবেন। ইতোমধ্যে শুভেচ্ছা পোস্টার ছাপিয়ে নির্বাচনী ওয়ার্ডগুলোতে তাদের ছবি টাঙানো হয়েছে। রোববার (২৫ ডিসেম্বর) তৃতীয় লিঙ্গের সুলতানা আহমেদ সাগরিকা ও আবু হাসনা পলি ঢাকা পোস্টেকে নিজেদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সাগরিকা ও পলি বলেন, শুভেচ্ছা পোস্টারের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি জানান দিচ্ছি ওয়ার্ডবাসীদের। এই প্রথম হিজড়া জনগোষ্ঠীর কেউ রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে প্রচার চালাচ্ছে। যদিও নির্বাচনের এখনও অনেকদিন সময় আছে। তার আগেই আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে ওয়ার্ডবাসীদের স্বাগত জানাচ্ছি।

জানা গেছে, রাজশাহী সিটি করপোরেশের ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে নির্বাচনে অংশ নেবেন সুলতানা আহমেদ সাগরিকা। তিনি রাজশাহী দিনের আলো হিজড়া সংঘের সাধারণ সম্পাদক। সম্প্রতি ইংরেজি বছরের শুভেচ্ছা পোস্টার নির্বাচনী ওয়ার্ডে লাগিয়ে আলোচনায় এসেছেন তিনি। পোস্টারে তিনি লিখেছেন- ‘১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডবাসীকে জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হিসেবে আপনাদের দোয়া ও সর্মথন প্রত্যাশী।’ এছাড়া রাসিকের ১, ২ ও ৪ নম্বর সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচন করবেন আবু হাসনা পলি। তিনি একই হিজড়া সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনে অংশ নিতে তিনিও ওয়ার্ডগুলোতে প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। মঙ্গলবার থেকে তার পোস্টার টাঙানো হবে।

তারা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের কোনো পিছু টান নেই। না আছে সংসার, না আছে বিলাসিতা। আমরা সাধারণ জীবনযাপন করি। আমাদের টাকা-পয়সার লোভ নেই। আমাদের দিন-রাত সব সমান। মানুষ আমাদের যখন ডাকবে তখন পাবে। আমরা ওয়ার্ডবাসীদের জন্য জেগে থাকব নিবেদিত প্রাণ হয়ে।’

ঢাকা পোস্টকে সুলতানা আহমেদ সাগরিকা বলেন, ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন এনজিও ও সামাজিক উন্নয়ন কাজের সঙ্গে আছি। এ সময় নারী ও শিশুদের নিয়ে বেশি কাজ করেছি। দেশে আমাদের স্বীকৃতি আছে। আমাদের কেউ বলে হিজড়া, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, কেউ বা বলে ট্রান্সজেন্ডার নারী। আমাদের বিভিন্নভাবে মানুষ চেনে। সবাই বলে এক কাতারে এসে সমাজে উন্নয়নমূলক ও গঠনমূলক কাজ করতে হবে। এই জায়গাগুলো থেকে একটা সাহস তৈরি হয়েছে। আমি ট্রান্সজেন্ডার, তৃতীয় লিঙ্গ বা যেটাই হই না কেনো, আমি মানুষ। মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই, উন্নয়মূলক কাজ করতে চাই। আমাদের প্রতি মানুষের যে ভ্রান্ত ও ভুল ধারণা আছে সেগুলো কাজের মাধ্যমে দূর করতে চাই। এই জন্যই মূলত আমার নির্বাচনে আসা।

নির্বাচিত হলে কী কী কাজ করবেন এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী। যদি নির্বাচিত হতে পারি তাহলে নারী ও শিশুদের নিয়ে কাজ করব। ডিভোর্সী ও বিধবা নারীদের নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আছে। বিয়ের পরে একটা বা দুইটা সন্তানের পরে ডিভোর্সী হয় অনেকে। ওই সময় নারীরা খুব অসহায় ও একাকিত্ব অবস্থায় বাবা-মায়ের সংসারে থাকে। তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্যে কাজ করব। এছাড়া বেকার যুবকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিয়ে সর্বনিম্ন সুদে ঋণ পাইয়ে দিতে ব্যবস্থা করব। যেসব এলাকায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি। সেই সব এলাকায় স্কুল ও আরবি শিক্ষার ব্যবস্থা করব। এছাড়া যারা নাম স্বাক্ষর করতে পারেন না, তাদেরও শিক্ষা দেওয়া হবে। অনেক সময় বৃদ্ধ বাবা-মা বাড়িতে থাকে। তাদের দেখভালের কেউ থাকে না। তাদের জন্য আমি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করব।

হিজরা জনগোষ্ঠীর জন্য কী করবেন এ বিষয়ে সাগরিকা বলেন, সবাই জানে আমাদের হিজড়া গুরু আছে। রাজশাহীতে হিজড়া গুরু হিরা খান আছেন। তাকে আমি পাশে নিয়ে আমাদের কমিউনিটির মানুষের জন্য কাজ করব। কারণ তিনি ভালো জানেন এই জনগোষ্ঠীর জন্য কী কী করার প্রয়োজন। তাহলে আমার কাজ করা সহজ ও সফল হবে। এছাড়া আমাদের জনগষ্ঠীর কথাগুলো সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে তুলে ধরব, রাষ্ট্রের কাছে তুলে ধরব। এই জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। আমাদের প্রতি মানুষের একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে। সেটি দূর করার লক্ষ্যে কাজ করব।

এই কাউন্সিলর প্রার্থী আরও বলেন, যখন সিটি করপোরেশের বাজেট পেশ হবে, তখন আমাদের কমিউনিটির মানুষের জন্য কিছু বাজেট তৈরি করার বিষয়ে বলব। তাতে থাকবে শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, ঋণ বা এককালীন অনুদান। এই টাকা দিয়ে তাদের উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। এছাড়া কাজের জন্য তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তৈরি করে দেওয়া হবে এবং আমরা তাকে এক বছর কাজ শেখার ব্যবস্থা করে দেব। তিনি ঠিকমতো কাজ করছেন কিনা। এছাড়া আমি ভোটে জিতলে পাঁচ বছর তিন ওয়ার্ডের জনগণের পাশে থাকব। কে কোন ক্যাটাগরির মানুষ তা আমি বিবেচনায় আনব না। আমি নিজেকে মানুষ মনে করি। মানুষ হয়ে মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। অনেক সময় মানুষ বলে নারী কাউন্সিলদের দেখা যায় না। সেই ধারণা আমি দূর করতে চাই।

আবু হাসনা পলি ঢাকা পোস্টেকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে সমাজে বিভিন্ন উন্নয়মূলক কাজের সঙ্গে আছি। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বিভিন্ন পুরস্কার ও পদক পেয়েছি। সমাজের জন্য কাজ করতে ভালো লাগে। আমি জয়িতা, মানবিক যোদ্ধা, সফল নারী উদ্যাগক্তা, জয়ীতা পদক ছাড়াও আন্তর্জাতিক ওমেন্স অফ দ্যা অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছি। আমার নির্বাচন করার ইচ্ছে অনেক দিনের। নারীর ক্ষমতায়নের জন্য নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। পিছে পড়ে থাকলে কেউ তুলে নিতে আসবে না। নিজেকেই কাজ করতে হবে। নারীর ক্ষমতায়নে নারীদের এগিয়ে আসার বিকল্প নেই। আমাদের কমিউনিটিও পিছিয়ে আছে। আমি নির্বাচিত হলে এই কমিউনিটির জনগণনের উন্নয়নে কাজ করব। আমার নির্বাচনি ওয়ার্ডগুলোতে উন্নয়নমূলক কাজের জন্য জণগনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ থাকবে সব সময়ের জন্য।

আপনাকে কেনো ভোট দেবে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জনগোষ্ঠী নিয়ে মানুষের মধ্যে থাকা ভ্রান্ত ধারণা দূর করব। তাদের বোঝাব আমরা সবসময়ের জন্য আপনাদের পাশে আছি। কারণ আমাদের কোনো পিছু টান নেই। না আছে সংসার, না আছে বিলাসিতা। আমরা সাধারণ জীবনযাপন করি। আমাদের টাকা-পয়সার লোভ নেই। মানুষ আমাদের যখন ডাকবে তখন পাবে। আমরা ওয়ার্ডবাসীদের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতে চাই।

দিনের আলো হিজরা সংঘের সভাপতি মোহনা ঢাকা পোস্টকে জানান, আমরা শুনেছি। তারা দুইজন নির্বাচন করবে। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় পোস্টার টাঙিয়েছে। আমাদের জনগষ্ঠীর পক্ষ থেকে তাদের জন্য শুভকামনা রইলো।

Please follow and like us:
fb-share-icon
Tweet 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Social media & sharing icons powered by UltimatelySocial
error

Enjoy this blog? Please spread the word :)